• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১

পুঁজিবাজারে সংকট কাটাতে সক্রিয় সব পক্ষ


আবদুল হাকিম  জানুয়ারি ২২, ২০২৪, ১১:৩৩ এএম
পুঁজিবাজারে সংকট কাটাতে সক্রিয় সব পক্ষ

ফাইল ছবি

ঢাকা: পুঁজিবাজারের সব শঙ্কার সুন্দর সমাধানে সক্রিয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা, ব্রোকাররা ও বিনিয়োগকারিরা। ৩৫টি কোম্পানি ছাড়া অন্য সব কোম্পানির ফ্লোর প্রাইস বা সর্বনিম্ন মূল্যসীমা তুলে নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। 

দেড় বছর পর গত বৃহস্পতিবার লেনদেন শেষে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার এই আদেশ জারির পর রোববার শেয়ারবাজারে সূচকের পতন হবে- তা আগেই অনুমেয় ছিলো। হয়েছেও তাই। লেনদেন শুরুর ১০ মিনিট পর প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান মূল্যসূচক কমে ২১৪ পয়েন্ট। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বড় ধসের আতঙ্ক পেয়ে বসে।

তবে প্রথম ঘণ্টার লেনদেন শেষ হওয়ার পর বিক্রির চাপ কিছুটা কমে আসে। এতে দাম কমার তালিকা থেকে বেরিয়ে বেশকিছু প্রতিষ্ঠান দাম বাড়ার তালিকায় চলে আসে। সেই সঙ্গে বেশকিছু প্রতিষ্ঠানের দাম কমার মাত্রা কমে আসে। শেষে ৯৬ পয়েন্ট পতন নিয়ে লেনদেন শেষ হয়।

সংকট কাটাতে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট প্রায় সবপক্ষই সক্রিয় অবস্থান নিয়েছে। তার অংশ হিসেবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বড় বিনিয়োগে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীরা যাতে আতঙ্কিত হয়ে শেয়ার বিক্রি না করে, সে বিষয়ে আহ্বান জানিয়েছে শীর্ষ ব্রোকার হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন সিইও ফোরাম।

রোববার (২১ জানুয়ারি) সকাল ৯টায় শেয়ারবাজারে বর্তমান অবস্থায় করণীয় নির্ধারণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত সিইও ফোরামের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন সিইও ফোরামের প্রেসিডেন্ট ও ইবিএল সিকিউরিটিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ছায়েদুর রহমান। দেশের ৩০টি শীর্ষ প্রতিষ্ঠানের সিইও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে ডিলার অ্যাকাউন্টে ১ থেকে ৫ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফোরামের সদস্যরা। একইসঙ্গে ডিলার অ্যাকাউন্ট থেকে কোনো শেয়ার বিক্রি না করার সিদ্ধান্তও নিয়েছে তারা।

ছায়েদুর রহমান বলেন, বিনিয়োগকারীদেরকে আমরা ইতিবাচকভাবে বোঝানোর চেষ্টা করবো। যে সকল শেয়ারের ক্রেতা থাকবে না সেখানে বিক্রির আদেশ বসানো হবে না। ট্রেডারদের এ বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হবে। বৈঠকে উপস্থিত সবাই এক মত হয়েছেন যে, এই অবস্থায় শেয়ারবাজারকে গতিশীল করার জন্য সবার জায়গা থেকে সহযোগিতা করবেন।

তিনি বলেন, শেয়ারবাজারের এ প্রেক্ষাপটে প্রতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা নতুন করে বিনিয়োগে যাচ্ছে। ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে চাই, যাতে বাজার এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি পায়। তাই বাজার নিয়ে উদ্বেগের তেমন কিছু নেই। শুধু ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহারের কারণে যাতে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত না হন, বাজারে বিক্রির চাপ তৈরি না হয় সে দিকে সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে।

এদিকে শেয়ারবাজার উন্নয়নে পাঁচ দফা দাবি জানিয়েছে পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী জাতীয় ঐক্য ফাউন্ডেশন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান বরাবর ৫ দফা দাবি জানিয়ে চিঠি দিয়েছে সংগঠনটি।

রোববার কমিশনে দেওয়া সংগঠনটির সভাপতি মো. রুহুল আমিন আকন্দ স্বাক্ষরিত চিঠি এ দাবি জানানো হয়।

দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- পুঁজিবাজারের স্থায়ী স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের লক্ষ্যে বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকে উত্তোরণে তারল্য প্রবাহ দ্রুত বাড়াতে হবে। এজন্য বিএসইসিকে কমপক্ষে ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) কোটি টাকার বিশেষ বরাদ্দের ব্যবস্থা করতে হবে।

পুঁজিবাজারের বর্তমান নাজুক অবস্থা থেকে দ্রুত উন্নয়নে বা স্বাভাবিকীকরণের জন্য এনআরবি ব্যাংক ও এশিয়াটিক ল্যাবরেটরিজ লিমিটেডের আইপিও আগামী ৬ (ছয়) মাসের জন্য স্থগিত করতে হবে। কেননা, চলতি এক মাসের মধ্যেই তিনটি আইপিও‘র মাধ্যমে বিশাল অংকের টাকা বাজার থেকে বের করে নিলে বাজারে বড় ধরণের তারল্য সঙ্কট সৃষ্টি হবে। এর দায় বিএসইসিকেই নিতে হবে।

পুঁজিবাজারের ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের আরো ক্ষতিগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিএসইসি একটি বিশেষ মহলের চাপে ফ্লোর প্রাইস উঠানোর এই নীল নকশার (ষড়যন্ত্র) বাস্তবায়ন দ্রুত তরান্বিত করেছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগকারীরা বড় অংকের আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত ও আত্মাহুতি করলে এটার সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব বিএসইসির উপরই বর্তাবে।

বিনিয়োগকারীদের স্থায়ীভাবে সুরক্ষার জন্য ফোর্স সেল দ্রুত বন্ধ করণের ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত বিনিয়োগকারীদের বিও অ্যাকাউন্ট ওপেনিং থেকে অদ্যাবধি পর্যন্ত মার্জিন ঋণের বিপরীতে আরোপিত ও অনারোপিত ১০০ শতাংশ সূদ সম্পূর্ণ নি:শর্তভাবে মওকুফ করতে হবে।

বিএসইসি সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছিলেন যে, “এমন এক সময়ে ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেয়া হবে- যখন কোন বিনিয়োগকারী ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।” কিন্তু অচিরেই দেখা গেল যে, বিএসইসি একটি বিশেষ স্বার্থান্বেশী মহলের প্ররোচনায় তার প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে এক ধরণের অপরিপক্ক (হটকারিতা) সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

অথচ বিনিয়োগকারীদের পুঁজির নিরাপত্তার জন্যই বিএসইসি কর্তৃক ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয়েছিল। কাজেই, বাজারের বর্তমান নাজুক পরিস্থিতি থেকে দ্রুত উত্তোরণে লেনদেন কমপক্ষে ২ হাজার কোটি থেকে ৩ হাজার কোটিতে উন্নীত করতে হবে।

ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) একজন কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন পর ফ্লোর প্রাইস প্রত্যাহার করার পর বাজারে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। তবে এ সময় সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আতঙ্কে শেয়ার বিক্রি না করার পরামর্শও দেন তিনি।

বাজার পরিস্থিতি নিয়ে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট ও ব্র্যাক ইপিএল স্টক ব্রোকারেজ লিমিটেডের পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, মার্কেটের এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীরা যেন হঠাৎ ডিসিশন না নেন সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। সূচক বাড়তে বা কমতেই পারে। সেদিকে নজর না দিয়ে হাতে থাকা শেয়ারটার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। তাহলে বাজার পরিস্থিতি নিশ্চয় ভালো হবে।

বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, বাজারে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করা হবে। স্বাভাবিক তদারকির পাশাপাশি নিয়ন্ত্রক সংস্থার সংশ্লিষ্ট প্রতিটি বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর লেনদেন কার্যক্রম পর্যালোচনা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই তদারকি কার্যক্রমে যদি অনিয়মের ঘটনা পাওয়া যায়, তাহলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়ার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে বাজারে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব পড়লেও সার্বিকভাবে বাজার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে।

দেশের শেয়ারবাজারে প্রথম ফ্লোর প্রাইস আরোপ করা হয় ২০২০ সালের ১৯ মার্চ। তখন ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৩ হাজার ৬০৪ পয়েন্টে নামলে পতন ঠেকাতে শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের দামের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেওয়া হয়। এরপর ২০২১ সালের এপ্রিল থেকে জুনের মধ্যে ধাপে ধাপে ফ্লোর প্রাইস তুলে নেওয়া হয়। এরপর সূচকটি বেড়ে ওই বছরের ১০ অক্টোবর ৭ হাজার ৩৬৮ পয়েন্টে উঠেছিল। কিন্তু ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরু হলে শেয়ারবাজারে আবারও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। পতনের এক পর্যায়ে সূচক নামে ৬ হাজার পয়েন্টের নিচে। তখন ফ্লোর প্রাইস আরোপ করে বিএসইসি।

সোনালীনিউজ/এসআই

Wordbridge School
Link copied!