ঢাকা : শেয়ারবাজারে পুঁজি নিয়ে আসতে হবে। ধার করা টাকা দিয়ে বাজার চলতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম টিটু।
মঙ্গলবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) ডিএসইতে আয়োজিত ‘ডিবিএ স্টক ব্রোকার্স পারফর্মেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কমিশনার মিজানুর রহমান, ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ এবং আব্দুল হালিম। আরও উপস্থিত ছিলেন ডিএসইর চেয়ারম্যান হাফিজ মোহাম্মদ হাসান বাবু এবং ডিএসইর এমডি ড.তারিকুজ্জামান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে ডিএসই ব্রোকার্স এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) প্রেসিডেন্ট সাইফুল ইসলাম বলেন, সেরা ২০টি ব্রোকারেজ হাউজকে পুরস্কৃত করা হয়েছে। এই ২০ প্রতিষ্ঠান লেনদেনের ৫০ শতাংশ সম্পন্ন করছে। এছাড়া আমরা এশিয়া সিকিউরিটিজ ফোরামে যুক্ত হয়েছি। এই ফোরামে বিভিন্ন দেশের ৩০টি সংগঠন তালিকাভুক্ত আছে।
তিনি বলেন, আমরা সুশাসন চাই। তবে যদি আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে রেগুলেশন করা হয়, তাহলে ব্রোকারেজ হাউজ উপকৃত হবে।
বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের সবকিছুই নিজেদের আছে। তবে আমরা এখনো ডিমিউচুয়ালাইজড হতে পারি নি। আমাদের ক্যাপিটাল ফর্মেশন গত ৫২ বছরে হয়নি। এখনো ব্যাংক খাতের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, আমি ডিএসইতে অথরাইজড হিসেবে কাজ করেছি। প্রথম দিকের তালিকাভুক্ত কোম্পানির মধ্যে ছিলো আমার বাবার কোম্পানি মোনা ফাইন্যান্স। আজকে এই যায়গায় আসার পেছনে ডিএসইর অবদান অনেক।
আহসানুল ইসলাম টিটু বলেন, ব্রোকারেরা ডিএসইকে বাঁচিয়ে রাখবে। আর যদি ব্রোকারদের বাঁচিয়ে রাখার কথা শুনতে হয় সেটা অনেক কষ্ট লাগে। নতুন নির্বাচন হয়েছে, নতুন সরকার এসেছে। এখন সময় সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার।
বিএসইসি কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, আজকে এটা আনন্দের সময়। কারণ ডিবিএ এশিয়া সিকিউরিটিজ ফোরামে যুক্ত হতে পেরেছে। বাজারের একটি স্তম্ভ ব্রোকারগুলো। বিএসিইসি ডিএসই ও এসোসিয়েশনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার বিষয়টি ব্রোকারকেন্দ্রীক বেশি। এজন্য রিয়েলটাইম সেবা দিতে ব্রোকারদের সঙ্গে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বড় ব্রোকারগুলো তাদের এ্যাপস আপডেট করছে। এতে ব্যয় অনেক কমে আসবে। আগামী এক দুই বছরের মধ্যে ব্রোকার সেবা আন্তর্জাতিক মানে চলে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।
কমিশনার আব্দুল হালিম বলেন, আমরা অনেক আনন্দিত, কারণ ডিবিএ আন্তর্জাতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি সদস্যদের পুরস্কৃত করছে ডিবিএ। এসব কারণে কমপ্লায়েন্সের বিষয়টি উন্নতি লাভ করবে। এখন ২০ প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হচ্ছে,। অন্যরা সামনে আরও ভালো করবেন এবং বাজারের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখবেন। সাংসদের বেশ কিছু প্রতিনিধি পুঁজিবাজারে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট রয়েছেন। বড় বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে দীর্ঘমেয়াদে থাকতে চায়। পুঁজিবাজার যাতে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারে সবাই মিলে সেই চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে কমশনের যা যা করতে হবে তা করবে, কমিশন পিছপা হবে না।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে রিসার্চ উইং থাকলে ভালো হবে। বিএসইসি থেকে চিঠি পেলে যেন সঠিকটা বুঝে উত্তর দিতে পারে। কারণ গেজেট হয়ে গেলে আর কিছু করার থাকে না।
শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের এই ২০টি ব্রোকারেজ ডিএসইর ৫০ শতাংশ লেনদেন করে। ভারতে মাত্র ৫টি ব্রোকারেজ হাউজ ৬০ শতাংশ লেনদেন সম্পন্ন করে। এর কারণ হচ্ছে তারা প্রযুক্তি খাতের উন্নয়ন ঘটিয়েছে। আমাদের এখানেও টেকনোলজিতে বেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। ব্রোকারেজ হাউজগুলোর উন্নয়ন ঘটাতে পারলে সময় ও ব্যয় উভয়ই বাঁচবে।
তিনি আরও বলেন, ব্রোকারেজ হাউজগুলো বিনিয়োগকারীদের প্রচুর সেবা দিয়ে যাচ্ছে। হাউজগুলো টেকনোলজিতে আরও উন্নয়ন ঘটাবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।
ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, ডিএসইকে শক্তিশালী করতে হবে। যতদিন দেশের অর্থনীতিতে পুঁজিবাজার দিয়ে অবদান রাখতে পারবো না, ততদিন কোনো সুফল পাওয়া যাবে না। লোন বলতে ব্যাংকিং খাত বুঝি। ব্যাংক খাত অর্থনীতিকে নিস্ব করেছে। তাই আমাদেরকে পুঁজিবাজারের দিকে ধাবিত হতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে স্মার্ট পুঁজিবাজার ও স্মার্ট মানি মার্কেট গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, বাজারের উন্নয়ন করতে হলে ব্রোকারদের বাঁচিয়ে রাখতে হবে। দেশের উন্নয়ন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পুঁজিবাজারের উন্নয়নে ডিএসইর অনেক বড় অবদান রয়েছে।
ডিএসই এমডি ড. তারিকুজ্জামান বলেন, ডিবিএ শীর্ষ বোকারদের প্রথমবারের মতো পুরস্কৃত করছে। যারা বাজারের মূল মেরুদণ্ড তাদের যদি উৎসাহ দিতে পারি, সেটা অনেক ভালো কিছু বয়ে আনবে। ডিবিএ খুবই শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক মানে চলে গেছে।
এমটিআই