ঢাকা: শীতকাল শেষের দিকে, তবুও মৌসুমের সবজির বাজারে নেই স্বস্তি। কয়েকটি সবজির দাম কমলেও, বেশিরভাগের দাম চড়া। বাজারে ঊর্ধ্বমুখী মুরগি ও গরুর মাংসের দাম। সপ্তাহ ব্যবধানে আবারও দাম বেড়েছে পেঁয়াজের।
শুক্রবার ঢাকার বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, সপ্তাহ ব্যবধানে হাতেগোনা কয়েকটি সবজির দাম কমলেও, বেশিরভাগ পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি মুলা ২৫-৩০ টাকা, শালগম ৩০-৪০ টাকা, করলা ৬০-৮০ টাকা, শসা ৬০ টাকা, লতি ৮০ টাকা, শিম ৪০-৫০ টাকা, আলু ৩০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, পেঁপে ৩৫-৪০ টাকা ও গাজর বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন জাতভেদে ৬০-৯০ টাকা, ক্ষীরাই ৫০-৬০ টাকা, টমেটো ৬০-৭০ টাকা, কহি ৮০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৩০-৪০ টাকা ও পেঁয়াজের কলি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়। আর প্রতি পিস লাউ ৮০-১০০ টাকা, আকারভেদে প্রতিপিস ফুলকপি ৩৫-৪০ টাকা, বাঁধাকপি ৩০-৪০ টাকা ও ব্রকলি ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, উভয় পর্যায়ে দাম কমে পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায় ও খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০-৭০ টাকায়। এছাড়া বাজারে লালশাকের আঁটি ১৫ টাকা, পুঁইশাক ২৫ টাকা, পালংশাক ১০ টাকা ও লাউ শাক ৩০-৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহ ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম আবারও বেড়েছে। প্রতি মুড়িকাটা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১১৫-১২০ টাকায়। তবে বাজারে দেখা নেই পুরাতন দেশি ও ভারতীয় পেঁয়াজের। দু-একটি দোকানে পাওয়া গেলেও সেটি বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে।
প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২১০-২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৮০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৫০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৩২০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৭০০ টাকায়।
গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। তবে বাড়েনি খাসির মাংসের দাম। বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়।
এছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১৪০ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম ২৪৫-২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে, রমজান মাস শুরুর আগেই অস্থির রোজার পণ্যের বাজার। দেখা যায়, বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে প্রায় সব পণ্য। বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ১০০-১০৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি ছোলার ডাল ১০০-১১০ টাকা, অ্যাংকর ডাল ৭৫-৮০ টাকা, ডাবলির ডাল ৭৫ টাকা, মোটা দানার মসুর ডাল ১০৫-১১০ টাকা, চিকন মসুর ডাল ১৩৫-১৪০ টাকা, মোটা দানার মুগ ডাল ১৪৫-১৫০ টাকা, চিকন মুগ ডাল ১৭০-১৮০ টাকা ও খেসারি ডাল ১০৫-১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
অন্যান্য পণ্যের মধ্যে খোলা আটা ৫০-৫৫ টাকা, প্যাকেট আটা ৬৫-৬৮ টাকা, খোলা ময়দা ৬৫-৭০ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৭৫-৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৭০ টাকা ও প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকায়। আর প্রতি কেজি খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪৫-১৫০ টাকায়।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি কেজি তেলাপিয়া ২০০-২২০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০-২০০ টাকা, চাষের শিং ৬০০ টাকা, চাষের মাগুর ৫৫০ টাকা ও চাষের কৈ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ টাকায়।
তবে চড়া দেশি মাছের দাম। আকারভেদে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতলা ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বোয়াল ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, বাইম ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি দেশি কৈ ১ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকা, শিং ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে।
মোট কথা, নিত্যপণ্যের বাজারে অস্থিরতা থামছেই না। তবে বিক্রেতারা বলছেন, সরবরাহ বাড়ায় বেশকিছু পণ্যের দাম কমেছে। সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক থাকলে, আর অসাধুরা সিন্ডিকেট ভাঙতে পারলে দাম কমবে সব পণ্যেরই।
এক সপ্তাহ আগে চার ধরনের পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক কমানো হলেও তার প্রভাব নেই বাজারে। আর সহসা প্রভাব পড়বে বলেও মনে হয় না। রোজার মাসকে সামনে রেখে শুল্ক কমানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে অবশ্য ভোজ্য তেল ও চিনির দাম কিছুটা কমবে বলে জানিয়েছেন ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। আর বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ১ মার্চ থেকে ওই চারটি পণ্য কম দামে বিক্রি না করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আমদানিকারকেরা বলেন, ডলার সংকট এবং এলসি খোলা থেকে আমাদানি পর্যন্ত সময় বিবেচনায় নিতে হবে। তারা যা আগেই আমদানি করেছেন, তার শুল্ক তো দিয়ে দিয়েছেন। ওই চার ধরনের পণ্য আমদানিতে ১৫ দিন থেকে দেড় মাস সময় লাগে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
বাজারে প্রতি কেজি মিনিকেট চাল ৭০ থেকে ৭৫, মাঝারি চাল ৫৫ থেকে ৬৫ ও মোটা চালের কেজি ৫০ থেকে ৫৪ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। শুল্ক কমানোর পর চালের দাম কমেনি। তবে চলতি অর্থবছরে কোনো ধরনের চাল আমদানি হয়নি। গত বছর ১৭ থেকে ১৮ লাখ টন চাল আমদানির অনুমতি দিলেও আমদানি হয়েছে চার লাখ ২১ হাজার টন।
এমএস