ঢাকা : রমজান শুরু হওয়ার দুই সপ্তাহের বেশি সময় বাকি থাকলেও রাজধানীতে ব্রয়লার মুরগি, চিনি, পেঁয়াজ খেজুর ও চিনির মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ইতিমধ্যে বেড়ে গেছে। এর ফলে নিম্ন-আয়ের মানুষের ওপর চাপ আরো বাড়ছে। বাজার জরিপে এমন চিত্রই উঠে এসেছে।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার, মহাখালী, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মালিবাগ, রামপুরা, বনশ্রীর মতো কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশি হলুদ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকা কেজি, যা দুই মাস আগে ছিল ২৪০ টাকা। আমদানি করা হলুদ বিক্রি হচ্ছে ২৯০ টাকা কেজি, যা গত বছরের চেয়ে ৮০ টাকা বেশি। দেশি আদা পাওয়া যাচ্ছে ২৮০ টাকায়, যা গত বছর ছিল ২০০ টাকা।
খুচরা বাজারে দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, নভেম্বর মাসে প্রতি কেজি চিনি ১৩৫ টাকায় পাওয়া গেলেও চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তা বিক্রি হচ্ছে ১৪০-১৫০ টাকায়। ভালো মানের মসুর ডাল নভেম্বরে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। নভেম্বরে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হয়েছে ৮৫ টাকা এবং ফেব্রুয়ারিতে এসে সেটি বিক্রি হচ্ছে ১১০ টাকায়।
ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে নভেম্বর মাসে খোলা (লুজ) সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৫০ টাকায় পাওয়া গেছে। ফেব্রুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৬০ টাকায়। নভেম্বরে বোতলজাত সয়াবিন তেল প্রতি লিটার ১৬৮ টাকা, ফেব্রুয়ারিতে ১৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। নভেম্বর মাসে তিউনিসিয়ার খেজুর ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হলেও এখন ফেব্রুয়ারিতে তা বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে। নভেম্বরে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১৩০ টাকায়। ফেব্রুয়ারির শুরুতে ৯০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা সর্বোচ্চ ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া নভেম্বর মাসে ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকায়, যা ছিল ১৮৫ টাকা। তবে নভেম্বর থেকে গরুর মাংসের দাম কমছে। সে সময় প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে ৭০০ টাকায়।
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান জানান, বাংলাদেশে পণ্যের দাম একবার বাড়লে তা আর কমে না। ২০১৩ সালে ৩৬ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রি হতো। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৭০ টাকায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা কেজিতে লাফিয়ে ওঠে ৮০-৮৫ টাকায়। একইভাবে বেড়েছে মাংস, মুরগির মাংস, সয়াবিন তেল, ডিমসহ প্রায় সব নিত্যপণ্যের দাম।
তিনি আরো বলেন, সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মূল্যস্ফীতির হার। ২০১২ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত গড় মূল্যস্ফীতির হার ছিল বছরে ৬ দশমিক ০৫ শতাংশ। ২০২৩ সালে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ, যা গত অক্টোবরে এই দশকের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ হার ছিল ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এক্ষেত্রে খাদ্য মূল্যস্ফীতির হার বেশি।
অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বাজার মনিটরিং, ওএমএস, টিসিবি কার্ড ইস্যু এবং মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মতো পণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ সত্ত্বেও বাজার নিয়ন্ত্রণহীন রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণ তখনই ফলপ্রসূ হবে যখন আমদানিকারকরা ব্যাংক থেকে নির্ধারিত হারে মার্কিন ডলার পাবেন এবং মুদ্রা ছাপানোর পরিমাণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকবে।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেরিতে উদ্যোগ নিচ্ছে এবং সেসব পদক্ষেপ বাস্তবায়নেও বিলম্ব হচ্ছে। ফলে অর্থনীতি সংক্রান্ত নীতি কাজ করছে না।
কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। বেড়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দামও। আয় না বাড়লেও সব শ্রেণির মানুষের ব্যয় বাড়ছে।
এমটিআই