ঢাকা : বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) ২০২৪-২০২৬ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন শুরু হয়েছে।
শনিবার (৯ মার্চ) সকাল ১০টায় রাজধানীর উত্তরায় সংগঠনটির নিজস্ব ভবনে এই ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। যা চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।
একইসময়ে চট্টগ্রাম অঞ্চলের ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে খুলশীর স্থানীয় অফিসে। বিকেলে ভোট শেষে গণনা করে প্রাথমিক ফলাফল প্রকাশ করা হবে।
নির্বাচন ঘিরে বিজিএমইএ ভবনে তৈরি হয়েছে উৎসবমুখর পরিবেশ। ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন বিভিন্ন প্রার্থীদের এজেন্টরা। ভোটাররা আসা মাত্রই তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন হ্যান্ডবিল। তবে ভবনের ভেতরে প্রবেশের ক্ষেত্রে আরোপ করা হয়েছে ব্যাপক কড়াকড়ি। ভোটার ছাড়া বহিরাগত কেউ প্রবেশ করতে পারছেন না।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যে কোন ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়াতে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ সদস্য। কিছু সময় পরপর মাইকে ঘোষণা করা হচ্ছে নির্বাচনী আচরণবিধি।
জানা গেছে, নির্বাচনে ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলে ৩৫টি পরিচালক পদে দুই প্যানেলের ৭০ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এবারের নির্বাচনে ভোটার ২ হাজার ৪৯৮। এর মধ্যে ঢাকা অঞ্চলের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৩২। চট্টগ্রামে ৪৬৪ জন। নির্বাচিত পরিচালকরা ১৯ মার্চ সংগঠনের সভাপতি এবং প্রথম সহ-সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি এবং দুজন সহ-সভাপতি নির্বাচন করবেন।
বিজিএমইএর বিগত নির্বাচনগুলোতে সাধারণত ওই দিনই নেতা নির্বাচন চূড়ান্ত হয়ে থাকে। অবশ্য, নেতা নির্বাচন নিয়ে আপত্তি থাকলে আপিলের সুযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রেও আপিল নিষ্পত্তির পর ২৮ মার্চ চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। পরে নির্বাচিত নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করবে।
এবারের নির্বাচনে বড় সংখ্যক তরুণ উদ্যোক্তা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যাদের বেশিরভাগই পারিবারিক ব্যবসার উত্তরাধিকারী হিসেবে আসা নবীন শিল্পোদ্যোক্তা। সম্মিলিত পরিষদ ও ফোরাম মিলিয়ে মোট ২১জন দ্বিতীয় প্রজন্মের ব্যবসায়ী রয়েছেন নির্বাচনে।
সম্মিলিত পরিষদের প্রতিশ্রুতি: স্মার্ট এবং টেকসই পোশাক খাত নির্মাণসহ এ খাতের উন্নয়নে ১৫ দফা প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সম্মিলিত পরিষদ। পরিষদের অন্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে– পোশাক খাতের ব্যবসা পরিচালনা কার্যক্রম আরো সহজ করা, রাজস্ব-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন, শুল্ক, আয়কর, ভ্যাট, নগদ সহায়তা-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন এবং ব্যাংক ও আর্থিক সেবা-সংক্রান্ত উদ্যোগ গ্রহণ।
এ ছাড়া পণ্য ও বাজার বহুমুখীকরণ, পোশাক শিল্পের ভাবমূর্তি উন্নয়ন, মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপকদের কর্মদক্ষতা উন্নয়ন, ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্পের জন্য প্রণোদনা ও নীতি সহায়তা ও আরএসসি-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাদের।
ফোরামের প্রতিশ্রুতি: স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন সংগঠন হিসেবে বিজিএমইএকে গড়ে তোলাসহ ২৫ দফার ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে ফোরামের পক্ষ থেকে। তারা বলছেন, বিজিএমইএকে কারখানা মালিকদের একটি সমন্বিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হবে, যাতে সব কারখানার মালিকদের ন্যায্য দাবি ক্রেতা, সরকার ও অন্য অংশীজনের কাছে পৌঁছানো যায়।
ফোরামের অন্য প্রতিশ্রুতির মধ্যে রয়েছে– স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে উত্তরণ ও জিএসপি প্লাসের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা এবং সরকারের সঙ্গে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি ও সহনশীল সমঝোতার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হবে। পোশাকশিল্পের জন্য স্বতন্ত্র মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠার জন্য জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবেন তারা, যাতে করে সরকার জাতীয় নীতিমালা প্রণয়নে সমন্বিত সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
এ ছাড়া পণ্যে বৈচিত্র্যকরণ ও নতুন বাজার সম্প্রসারণের জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ এবং বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের সব দূতাবাসকে কাজে লাগানো হবে বলেও জানানো হয়। পাশাপাশি উৎসে কর শূন্য দশমিক ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা ও চলমান প্রণোদনাগুলো ২০২৬ পর্যন্ত বলবৎ রাখার ব্যবস্থা করা হবে।
সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২০২১ সালে। যেখানে সম্মিলিত পরিষদ ঢাকা ও চট্টগ্রামের ৩৫ পরিচালকের ২৪টিতে জয়ী হয়। সভাপতি নির্বাচিত হন ফারুক হাসান। ২০২৩ সালের এপ্রিলে এ পরিচালনা পর্ষদের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও দুইদফায় তারা এক বছর সময় বাড়িয়ে নেয়। ২০২৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪-২৬ মেয়াদে বিজিএমইএ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়।
এমটিআই