ঢাকা: রমজানের শুরু থেকেই রাজধানীর বাজারে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস। ক্রেতারা যেমন দামের সঙ্গে তাল করতে পারছেন না, মাংস বিক্রেতারাও তেমনই বলছেন যে তারা এমন পরিস্থিতি আগে দেখেননি। তবে অবাক করা বিষয় হল এই পরিস্থিতিতেও কোথাও কোথাও আবার ৬০০ টাকা ধরেও বিক্রি হচ্ছে গরুর মাংস।
বিক্রেতাদের কেউ কেউ প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬০০ টাকায় বিক্রি করছেন, অনেকেই আবার দাম হাঁকছেন কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাজারে সরবরাহ বাড়াতে না পারলে গরুর মাংসের দামে অস্থিরতা দূর করা কঠিন হবে।
রাজধানীর কয়েকটি কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি করছেন ৭২০ থেকে ৮০০ টাকায়। আবার মালিবাগ, রামপুরা ও শাহজাহানপুর বাজারের কিছু বিক্রেতা গরুর মাংসের দাম রাখছেন প্রতি কেজি ৬০০ টাকা। এ ছাড়া সরকারিভাবে রাজধানীর ৩০টি স্থানে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ টাকা কেজি দরে।
৫০ বছর ধরে ঢাকায় ব্যবসা করি। কিন্তু এমন পরিস্থিতি আমি দেখিনি। যে যার মতো করে দাম রাখছে।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মুর্তজা বলেন, বিক্রেতারা এখন কেউ কারও কথা শোনার মতো অবস্থায় নেই। একেকজন একেক দরে মাংস বিক্রি করছেন। বিক্রির ধরনের ওপর নির্ভর করে দাম নির্ধারণ করা হচ্ছে। ক্রেতারা দেখেশুনে কিনলেও এ পরিস্থিতিতে বাজারে একধরনের ‘ফাঁকি’ তৈরি হয়েছে। তাতে অনেক ক্রেতা ঠকছেন বলেও মনে করেন তিনি।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গরুর মাংসের বেচাকেনা পড়ে গেছে, এমন কথা বলে গত বছরের শেষ দিকে হঠাৎ করে ঢাকার বাজারে ব্যবসায়ী ও খামারিরা দামে ছাড় দিয়ে মাংস বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। তখন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করা হয় প্রতি কেজি ৬৫০ টাকা।
গত ডিসেম্বরে ঠিক করা ওই দাম কার্যকর থাকে জাতীয় নির্বাচনের দিন (৭ জানুয়ারি) পর্যন্ত। এরপর বাজারে গরুর মাংসের দাম আবার বাড়তে থাকে। পবিত্র শবে বরাতের সময় গরুর মাংসের দাম ওঠে প্রতি কেজি ৮০০ টাকা।
মিজানুর রহমান পেশায় একজন বেসরকারি চাকরিজীবী। রাজধানীর পলাশী বাজার থেকে দুই কেজি গরুর মাংস কিনে ১ হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধ করতে হয়েছে তাকে। বিক্রেতাকে নানা অনুরোধের পরও দাম কমাতে পারেননি তিনি।
একসময় পবিত্র রমজানের আগে ঢাকা সিটি করপোরেশন গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করে দিত। দুই বছর ধরে মাংস ব্যবসায়ীরা নিজেরাই মাংসের দাম ঠিক করেছেন, যা খুচরা বিক্রেতারা অনুসরণ করতেন। তবে এখন বিভিন্ন বাজারে বিভিন্ন দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে। এ নিয়ে বিক্রেতারাও খানিকটা বিভ্রান্ত।
ভেবেছিলাম দুই কেজি নিলে কিছুটা কম রাখবে। কিন্তু না, একদাম ৮০০ টাকা কেজিতে মাংস কিনতে হলো। শবে বরাতের আগে মাংস কিনেছি ৭০০ টাকায়, এখন দাম ৮০০ টাকা। আমি তো বাজারের তাল ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, হাঁস, মুরগিসহ সব ধরনের মাংসের উৎপাদনই কিছুটা কমেছে। টানা ৯ বছর বৃদ্ধি পাওয়ার পর গত অর্থবছরে (২০২২-২৩) প্রথমবারের মতো মাংসের উৎপাদন কমে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বার্ষিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে মাংসের উৎপাদন ছিল ৯২ লাখ ৬৫ হাজার মেট্রিক টন। তবে গত বছর তা কমে দাঁড়ায় ৮৭ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টনে।
গরুর মাংসের মতো খাদ্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। সরকার দাবি করে দেশে মাংসের উৎপাদন ভালো। কিন্তু বাজারে দাম কমছে না। এমন পরিস্থিতিতে ক্রেতাদের স্বস্তি দিতে সরকার ভারত থেকে গরু আমদানির উদ্যোগ নিতে পারে। তাহলে দামে এর প্রভাব পড়বে। আমদানি খুলে দেওয়ার পর বেশ কিছু পণ্যের দাম কমার ঘটনা আমরা দেখেছি।
এআর