ঢাকা: দেশের ব্যাংকিং খাতের দুর্দশাগ্রস্ত এক্সিম ব্যাংকের সাথে একীভূত হয়েছে পদ্মা ব্যাংক। নীতি নির্ধারকদের পরামর্শে এক্সিম ব্যাংকের পরিচালকরা পদ্মা ব্যাংক অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নিলেও বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। একীভূত স্বাক্ষরের দিনে এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার দরপতনে নেমেছে ফেসভ্যালুর নিচে।
ব্যাংক দু্টির একীভূতকরণ সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশের পর এমন চিত্র দেখা গেছে ঢাকা স্টক একচেঞ্জে (ডিএসই)। সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস সোমবার (১৮ মার্চ) এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের বড়দর পতন হয়েছে। শেয়ার মূল্য ৩০ পয়সা কমে ফেসভ্যালু ১০ টাকার নিচে নেমে গেছে।
এদিন সকালে লেনদেন শুরুর সময় এক্সিম ব্যাংকের শেয়ারের দর ছিল ১০ টাকা। গত সপ্তাহের শেষ দিন ১০ পয়সা বেড়ে এ অবস্থানে এসেছিল ব্যাংকটির শেয়ার মূল্য। কিন্তু আজ সোমবার এক্সিম ব্যাংকের শেয়ার দর ৩০ পয়সা কমে ৯ টাকা ৭০ পয়সায় অবস্থান করছে। সামনের দিনগুলোতে ব্যাংকের শেয়ার মূল্য আরও কমতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এর আগে গত রবিবার (১৭মার্চ) একীভূতকরণ সংক্রান্ত মূল্য সংবেদনশীল তথ্য প্রকাশ করেছে ব্যাংকটি। এর ফলে একীভূত হওয়ার খবর পুঁজিবাজারের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে জানতে পেরেছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। রবিবার শেয়ারবাজারের লেনদেন বন্ধ থাকায় এ বিষয়ে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব বোঝা যায়নি। আজ সোমবার লেনদেন শুরু হওয়ার পর নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এক্সিম ব্যাংকের সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিনিয়োগকারীদের প্রতিক্রিয়া কেবল শেয়ার মূল্যের হ্রাসবৃদ্ধি দেখে পুরোপুরি বলা যাবে না। অপেক্ষা করতে হবে এজিএম পর্যন্ত। তবে বিশ্লেষকদের ধারণা, সাধারণভাবে পদ্মা ব্যাংকের সঙ্গে একইভূত হওয়ার বিষয়টি ভালোভাবে নেওয়ার যৌক্তিক কারণ নেই বিনিয়োগকারীদের কাছে।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘বিনিয়োগকারীদের পূর্ণ মনোভাব জানতে এজিএম পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। সেখানে তারা প্রশ্ন তুলতে পারেন- কেন পদ্মা ব্যাংকের মতো একটি দুর্দশাগ্রস্ত ব্যাংককে অধিগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এখানে অনেকগুলো প্রশ্নেই অজানা। যেমন- পদ্মা ব্যাংকের মূলধন থেকে দায় (দেনা) বাদ দিলে ব্যাংকটির সম্পদ পজিটিভ নাকি নেগেটিভ আছে? খেলাপি ঋণের কী হবে? বাংলাদেশে এখনও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি নেই। যদি এমন কোনো কোম্পানি দুর্দশাগ্রস্ত সম্পদ কিনে নেয়, তাহলে কত দামে কিনবে, বাকি অর্থের দায়ই-বা কে বহন করবে? কবে নাগাদ এই বেচাকেনা হবে?’ ‘সব মিলিয়ে, পুরো বিষয়টিই এখনও অস্পষ্ট। এমন পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের অনেক প্রশ্ন রয়েছে। তারা বিষয়টি নিয়ে কেমন প্রতিক্রিয়া দেখায় তা বোঝার জন্য আরও কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হবে।’
দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবসে লেনদেনে অংশ নেওয়া ৩৯৬টি কোম্পানির মধ্যে ৩৩০টি কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে। এর মধ্যে দরপতনের শীর্ষে উঠে এসেছে গোল্ডেন সন লিমিটেড। দর হারানোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা খুলনা প্রিন্টিংয়ের শেয়ারদর আগের দিনের তুলনায় ৯ শতাংশ কমেছে। আর শেয়ারদর ৮ দশমিক ৩৫ শতাংশ কমে যাওয়ায় তালিকার তৃতীয় স্থানে অবস্থান নিয়েছে আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড।
দরপতনের তালিকায় উঠে আসা অন্যান্য কোম্পানিগুলো হলো- এইচ আর টেক্সটাইল, এসএস স্টিল, ওরিয়ন ইনফিউশন, সিএপিএম বিডিবিএল মিউচুয়াল ফান্ড, মনোস্পুল পেপার, তুং হাই নিটিং এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটাল লিমিটেড।
উল্লেখ, পদ্মা ও এক্সিম একীভূত, সমঝোতা স্মারক সই। ব্যাংক দুটি একীভূত করার লক্ষ্যে এ দিন সকালে বাংলাদেশ ব্যাংকে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার, চার ডেপুটি গভর্নর, পদ্মা ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যানসহ বাংলাদেশ ব্যাংক ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক দুটির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত নীতিমালা প্রকাশ করবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর একিভূতকরণ প্রক্রিয়া কার্যকর হবে।
সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর শেষে এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার বলেন, এক্সিম ব্যাংকের পরিচালকরাই যাবতীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। পদ্মা ব্যাংকের পরিচালকরা পরিচালক পদে থাকবেন না। এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে মিল রেখে পদ্মা ব্যাংক শরিয়াহ ব্যাংকে রূপান্তরিত হবে। আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষ হলে পদ্মা ব্যাংকের আমানতকারীরা এক্সিম ব্যাংক থেকে তাদের আমানত উত্তোলন করতে পারবেন।
এমএস