• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

বিমা খাতে পরিবর্তন আনবে ব্যাংকাস্যুরেন্স, শঙ্কায় বিমা প্রতিনিধিরা


আবদুল হাকিম  এপ্রিল ৮, ২০২৪, ০৩:০৬ পিএম
বিমা খাতে পরিবর্তন আনবে ব্যাংকাস্যুরেন্স, শঙ্কায় বিমা প্রতিনিধিরা

ঢাকা: বিমা খাতে দীর্ঘদিনের সংকট তীব্র হচ্ছে, আসছে না কোনো সমাধান। নানান পদক্ষেপেও যেন কমছে না গ্রাহক হয়রানি। বিশেষ করে কোম্পানিগুলো সঠিক সময় দিতে পারছে বিমা দাবি পরিশোধের টাকা। 

এত সব আলোচনা সমালোচনার মধ্যে সরকার প্রায় ১০ বছর ধরে ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবাটি চালুর চেষ্টা করে আসছিল। সব ধরনের আইনি ধাপ পার করে অবশেষে ১ মার্চ জাতীয় বিমা দিবসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবার উদ্বোধন করেন।

অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও ব্যাংকের মাধ্যমে বিমাসেবা দেওয়ার যৌক্তিকতা এবং এর বাজার চাহিদা রয়েছে। ব্যাংকগুলো ইনস্যুরেন্স (বিমা) সেবাটি দিচ্ছে বলে এর নাম দেওয়া হয়েছে ব্যাংকাস্যুরেন্স। এতে বিমা প্রতিনিধিদের কাজ যে ব্যাপক হারে কমে যাবে, তা নিঃসন্দেহ। তাই বড় শঙ্কা তৈরি হয়েছে বিমা প্রতিনিধিদের মধ্যে।

এখন পর্যন্ত আটটি ব্যাংক ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। এগুলো হচ্ছে স্থানীয় দি সিটি ব্যাংক, ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ইস্টার্ণ ব্যাংক লিমিটেড (ইবিএল) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক (এমটিবি) এবং বিদেশি স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক। 

এসব ব্যাংক ইতিমধ্যে কয়েকটি সাধারণ (নন-লাইফ) ও জীবনবিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি সই করেছে। যেসব বিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে সেগুলো হচ্ছে গ্রীন ডেলটা ইনস্যুরেন্স, রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স, প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স, গার্ডিয়ান লাইফ ও মেটলাইফ বাংলাদেশ।

প্রগতি লাইফ, গ্রীন ডেলটা ও পাইওনিয়ার ইনস্যুরেন্স কোম্পানির সঙ্গে এমটিবি চুক্তি করেছে। আর মেটলাইফ বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করেছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক ও ইবিএল। গার্ডিয়ান লাইফের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে দি সিটি, ডাচ্-বাংলা ও এমটিবির। এবি ব্যাংক চুক্তি করেছে প্রগতি লাইফের সঙ্গে। ব্র্যাক ব্যাংক চুক্তি করেছে গ্রীন ডেলটা ইনস্যুরেন্সের সঙ্গে। চার্টার্ড লাইফের সঙ্গে চুক্তি করেছে এক্সিম ব্যাংক। এছাড়া রিলায়েন্স ইনস্যুরেন্স চুক্তি হয়েছে দি সিটি ব্যাংকের সঙ্গে।

জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) নীতিমালা অনুসরণ করে চুক্তিগুলো সই হয়। এর মধ্যে কোনো কোনো ব্যাংক বিমাসেবা বিক্রির কার্যক্রম শুরু করতে পারলেও কেউ কেউ এখনো পারেনি।

তথ্য মতে, ব্যাংকাস্যুরেন্স নামের এই বিমা পণ্য বিক্রির বিপরীতে ব্যাংক নির্ধারিত হারে বিমা কোম্পানির কাছ থেকে কমিশন পাবে। সেবাটি তদারকির জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকে ব্যাংকাস্যুরেন্স নামে আলাদা শাখা খোলা হয়েছে। আইডিআরএ নিজেও বিমাসংক্রান্ত অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য আলাদা ইউনিট চালু করেছে। বিমা কোম্পানিগুলো কমিশন ভাগাভাগি করে ব্যাংকের মাধ্যমে নিজেদের পণ্যের প্রসার ঘটাতে পারবে। এতে উভয় পক্ষেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ থাকবে।

আইডিআরএর কর্মকর্তারা জানায়, ব্যাংকাস্যুরেন্সের ক্ষেত্রেও বিমাদাবি বা অভিযোগ নিষ্পত্তি হবে বিদ্যমান নিয়ম অনুযায়ী। ব্যাংক কিন্তু দাবি পরিশোধের নিশ্চয়তা দেবে না। ব্যাংক থেকে পলিসি কিনতে গেলে ব্যাংকে হিসাব থাকতে হবে। বিমা কোম্পানির মাধ্যমে একই পলিসি কিনতে গেলে ব্যাংক হিসাব শুরুতে না থাকলেও চলে, কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই ব্যাংক হিসাব খোলা বাধ্যতামূলক।

দেশে চালুর প্রথম দুই সপ্তাহে কতজন ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবার গ্রাহক হয়েছেন জানতে চাইলে আইডিআরএর মুখপাত্র ও পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, মাত্র তো শুরু হলো। এখনো উল্লেখ করার মতো কোনো সংখ্যা নেই। তবে মাসখানেক পার হলে কিছুটা বোঝা যাবে।

ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি করতে কী কী লাগবে: 
কোনো ব্যাংক যদি ব্যাংকাস্যুরেন্স সেবা চালু করতে চায়, তাহলে প্রথমেই সেটির পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদনের কপিসহ আবেদন করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকে। আবেদনের সঙ্গে ব্যাংকের দুই বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন, ঋণমান, খেলাপি ঋণের হারসহ ২০ ধরনের তথ্য দিতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে পূর্বানুমতি নেওয়ার পর আইডিআরএ থেকে করপোরেট এজেন্ট হিসেবে লাইসেন্স নিতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট বিমা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করা লাগবে।

অন্যদিকে বিমা কোম্পানিকে ব্যাংকাস্যুরেন্সের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির অনুমোদন পেতে আইডিআরএতে সাত ধরনের তথ্য দিতে হবে। ১৩ মার্চ বেসরকারি সব জীবনবিমা কোম্পানিকে পাঠানো এক চিঠিতে আইডিআরএ এ নির্দেশনা দিয়েছে।

করপোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাস্যুরেন্স) নির্দেশিকা, ২০২৩ অনুযায়ী ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তি সম্পাদনের অনুমোদনের আবেদনে প্রয়োজনীয় সব তথ্য দাখিল করতে হবে। তথ্যগুলো হচ্ছে বিমা দাবি নিষ্পত্তির হার, অনুমোদিত ব্যবস্থাপনা ব্যয় ও প্রকৃত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের পরিমাণ, মোট সম্পদের কত শতাংশ বিনিয়োগ রয়েছে ও কত শতাংশ তারল্যে রূপান্তর করা যাবে, কোম্পানির বিনিয়োগ রিটার্নের হার, জীবন তহবিলের পরিমাণ, নবায়ন হার এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তির খসড়া।

বিমা দাবি পরিশোধে ব্যাংকের দায়িত্ব নেই: 
ব্যাংকাস্যুরেন্স হচ্ছে চুক্তি, কোনো বিমা পণ্য নয়। এ চুক্তির মাধ্যমে বিমা কোম্পানির পক্ষে তাদের পণ্য বা পলিসি বিক্রি বা বাজারজাত করে থাকে ব্যাংক। অর্থাৎ ব্যাংক এখানে কমিশন এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। গ্রাহকের বিমাদাবি পরিশোধে বিমা কোম্পানির সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত।

বিমা দাবি পরিশোধে বিমাগ্রাহক বা তার নমিনি বিমা কোম্পানির সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ অথবা ব্যাংকের মাধ্যমেও যোগাযোগ করতে পারবেন। দাবি গ্রহণযোগ্য হলে বিমা কোম্পানি সরাসরি বিমাগ্রাহক বা তার নমিনিকে চেক দেবে এবং ব্যাংককে জানিয়ে দেবে। তবে দাবির টাকা পরিশোধের ব্যাপারেও আইনগতভাবে ব্যাংকের কোনো দায়দায়িত্ব থাকবে না।

ব্যাংকাস্যুরেন্স চালুর ক্ষেত্রে ব্যাংকের আর্থিক সূচকের মানদণ্ড ঠিক করে দিয়ে গত ডিসেম্বরে নীতিমালা জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, ব্যাংককে বিমাকারীর বিমাসংক্রান্ত কোনো ঝুঁকি গ্রহণ করবে না বা বিমাকারী হিসেবে কাজ করবে না মর্মে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিতে হবে।

এআর

Wordbridge School
Link copied!