ঢাকা : সরকারি ব্যাংক বেসরকারি খাতে একীভূত করা অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অযৌক্তিক ও বৈষম্য বলে মনে করছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এমন পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে নয় বরং সরকারি খাতের অন্য যেকোনো বাণিজ্যিক ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার দাবি জানিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন বেসিক ব্যাংকের কর্মীরা।
মঙ্গলবার (১৬ এপ্রিল) বেসিক ব্যাংকের সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পক্ষ থেকে গভর্নরের দপ্তরে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়েছে, দেশের ক্ষুদ্র শিল্পে অর্থায়নের লক্ষ্যে ১৯৮৯ সালে বেসিক ব্যাংক লিমিটেড এর কার্যক্রম শুরু হয়, যা ১৯৯২ সালে শতভাগ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে একটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বিশেষায়িত ব্যাংক হিসেবে সরকারি আর্থিক সেবা প্রদান করে আসছে যা ২০১৫ সালে পুরোপুরি রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে রূপান্তরিত হয়। বেসিক ব্যাংক একটি সরকারি খাতের ব্যাংক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনা করেছে এবং দীর্ঘ প্রায় ২৩ বছর ধরে বাংলাদেশ সরকারকে বিপুল অঙ্কের মুনাফা প্রদান করেছে, যা অন্যান্য ব্যাংকের কাছে ছিল উদাহরণ।
শতভাগ রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকে অন্যান্য রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের অনুরূপ চাকুরি বিধিমালা অনুসরণ করা হয়, যা বেসরকারি মালিকানার ব্যাংকের সাথে পুরোপুরিভাবেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ। জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ অনুযায়ী বেসিক ব্যাংককে বিদ্যমান কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের গ্রেড নির্ধারণ এবং বেতন ও অন্যান্য ভাতাদি প্রদান করা হয়।
পাশাপাশি, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পেনশন সুবিধা বলবৎ রয়েছে। এছাড়া, বেসিক ব্যাংকে নিয়োগ ও পদোন্নতিতে সম্পূর্ণরূপে সরকারি ব্যাংকের অনুরূপ বিধিবিধান অনুসরণ করা হয়। বেসিক ব্যাংকে ১২তম থেকে ২০তম গ্রেডের কর্মচারীদের স্থায়ী চাকুরি বিদ্যমান রয়েছে। শ্রম আইন অনুযায়ী সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেসিক ব্যাংকে সরকারি শ্রম অধিদপ্তর কর্তৃক অনুমোদিত ও রেজিস্ট্রেশন প্রাপ্ত কর্মচারী ইউনিয়নের (সিবিএ) কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
দেশের অন্যান্য সরকারি ব্যাংকের ন্যায় শতভাগ রাষ্ট্রমালিকানাধীন বেসিক ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান, পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন।
উল্লিখিত বিষয়গুলোর সঙ্গে বেসরকারি কোনো ব্যাংকের সামঞ্জস্যতা নেই। ইতোমধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তাদের অনেকেই সরকারি ব্যাংকের পদোন্নতির অধীনে পদোন্নতিপ্রাপ্ত হয়েছেন এবং বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। এদের মধ্যে একজনকে সোনালী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে পদায়নের পর কয়েকমাস আগে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এমডি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া, রূপালী ব্যাংক ও পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকে দুইজনকে ডিএমডি হিসেবে, একজনকে জনতা ব্যাংকে এবং দুইজনকে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকে জিএম হিসেবে পদায়ন করা হয়।
স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বেসরকারি মালিকানাধীন সিটি ব্যাংকের সঙ্গে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংক মার্জারের বিষয়ে যে আলোচনা হয়েছে, তা একেবারেই অসামঞ্জস্যপূর্ণ এবং অযৌক্তিক। যেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লি. এবং রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক অন্য দুটি রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকের সঙ্গে মার্জ হতে চলেছে, সেখানে রাষ্ট্র মালিকানাধীন বেসিক ব্যাংককে কেন বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে মার্জারের আলোচনা চলছে? মার্জার প্রক্রিয়ায় কোনোভাবেই বৈষম্য কাম্য নয়।
এর আগে গত ৮ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদারের সঙ্গে সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাসরুর আরেফিনের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক একীভূত করার বিষয় জানানো হয়।
তার আগে গত ১৯ মার্চ সিটি ব্যাংকের পর্ষদকে বেসিক ব্যাংককে একীভূত করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তারপর সিটি ও বেসিক ব্যাংকের পর্ষদের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। দুই ব্যাংকের কর্মকর্তারা এ নিয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করেন। ব্যাংক দুটি একীভূত হলেও আগামী তিন বছর পৃথক আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করবে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :