ঢাকা: চলমান তাপপ্রবাহের ফলে হিটস্ট্রোকের কারণে সারা দেশে প্রতিদিন প্রায় এক লাখ মুরগি মারা যাচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ পোল্ট্রি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ)।
মারা যাওয়া এই মুরগির আনুমানিক মূল্য ২০ কোটি টাকা। এই ভয়ানক পরিস্থিতিতে, ডিম ও মুরগি উৎপাদন ৪ থেকে ১০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পেয়েছে। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে আগামী দিনে ব্রয়লার মুরগি ও ডিম সরবরাহে সংকট দেখা দিতে পারে।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি ২১০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছিল। বাজারগুলোতে সোনালির কেজি ৩৭০ টাকা, সোনালি হাইব্রিড ৩৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৬৫০ থেকে ৬৮০ টাকা, লেয়ার ৩৫০ টাকা এবং সাদা লেয়ার ৩৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
বিক্রেতারা বলছেন, তীব্র গরমের কারণে মুরগি মরে যাওয়ার শঙ্কায় কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এ সময়ে দাম কমার কথা না, গত সপ্তাহেও ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তবে গরমে হিট স্ট্রোক করছে মুরগি। তাই ক্ষতি এড়াতে ছোট ছোট মুরগি কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন খামারিরা।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিপিএ’র সভাপতি মো. সুমন হাওলাদার স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ১০ থেকে ১২ দিনে সারা দেশে ১০ লাখের বেশি ব্রয়লার, লেয়ার ও সোনালী মুরগি মারা গেছে। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ ছিল ব্রয়লার মুরগি এবং ১০-১৫ শতাংশ ছিল লেয়ার মুরগি। এছাড়া সোনালীসহ অন্যান্য মুরগির ৫ শতাংশ মারা গেছে। এতে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াবে ২০০ কোটি টাকা। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে খামারগুলো বন্ধ হয়ে যাবে।
বিপিএ আশঙ্কা করছে এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে কর্পোরেট ডিম মুরগি সরবরাহকারী ও তেজগাঁও ডিম সিন্ডিকেট ডিম ও মুরগির সংকট তৈরি করবে। জুন থেকে তারা দাম বাড়াতে শুরু করবে। আগস্ট থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ডিম ও মুরগির দাম মারাত্মক ভাবে বাড়বে।
বিপিএ মনে করছে এ অবস্থা থেকে উত্তরণে সরকারের উচিত পোল্ট্রি খামারিদের রক্ষা করা। যেমন সরকারের পক্ষ থেকে খামারিদের মুরগির বাচ্চা ও পোল্ট্রি ফিডে ভর্তুকি দিয়ে উৎপাদনে ধরে রাখতে হবে এবং সাপ্লাই চেইন ঠিক রাখতে হবে যাতে করে বাজারে যাতে সংকট সৃষ্টি না হয়।
বর্তমানে দেশে ৬০ থেকে ৬৫ হাজার প্রান্তিক মুরগির খামার রয়েছে উল্লেখ করে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ২০ হাজার খামারি করপোরেট গ্রুপের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে থাকলে নতুন করে আবারও বন্ধ হয়ে যাবে ১৫ থেকে ২০ হাজার খামার। প্রান্তিক পোলট্রি খামারিরা কখনোই ডিম মজুত করতে পারেন না। তবে করপোরেট গ্রুপগুলো ও ঢাকা তেজগাঁও, কাপ্তান বাজারসহ দেশের অধিকাংশ ডিম ব্যবসায়ী কোল্ড স্টোরেজের মাধ্যমে ডিম মজুত শুরু করেছেন। পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে তারা বেশি দামে ডিম-মুরগি বিক্রি করবেন। প্রতিদিন ব্রয়লার মুরগির চাহিদা ৩ হাজার ৫০০ টন, সোনালি লেয়ার মুরগির চাহিদা এক হাজার ২০০ টন। স্বাভাবিক সময়ে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির মাংস উৎপাদন হতো ৫ হাজার ২০০ টন, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। তবে অপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাবে, ফলে মাংসের মুরগি উৎপাদন নেমে আসতে পারে ৪ হাজার টনে।
এতে আরও বলা হয়, প্রতিদিন ডিমের চাহিদা ৪ কোটি পিস। স্বাভাবিক সময়ে দিনে সাড়ে ৪ কোটি পিস ডিম উৎপাদিত হয়, যা চাহিদার তুলনায় বেশি। তবে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে এখন দৈনিক মাত্র ৩ কোটি ৮০ লাখ থেকে ৯০ লাখ পিস ডিম উৎপাদন হচ্ছে। ফলে দৈনিক ২০ লাখ ডিমের ঘাটতি রয়েছে।
এএইচ/আইএ