ঢাকা : দীর্ঘ ৬৮ বছর পর অবশেষে নিত্যপণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছে ধান, চাল, গম, আটা ও আলু। তবে নিত্যপণ্য হিসেবে বাদ পড়ছে সিগারেট, কয়লা ও কাঠ। আর যুক্ত হচ্ছে বিদ্যুৎ।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তৈরি প্রস্তাবিত অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন, ২০২৪-এর খসড়া বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
তবে এবারও স্বীকৃতি পাচ্ছে না অবশ্য পানি। আবার সাবান, কীটনাশক, ডিটারজেন্ট পাউডার, টুথপেস্ট—এগুলো সমাজের সর্বস্তরে প্রতিদিন কমবেশি ব্যবহৃত হলেও নিত্যপণ্য হিসেবে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না।
খসড়ার ওপর চলতি সপ্তাহের মধ্যে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে মতামত আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। প্রচলিত আইনটির নাম ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৫৬’। এটি পাল্টিয়ে করা হচ্ছে ‘অত্যাবশ্যকীয় পণ্য আইন, ২০২৪’। নতুন আইন থেকে ‘নিয়ন্ত্রণ’ শব্দটি বাদ দেওয়া হচ্ছে।
১৯৫৬ সালের মূল আইনে ৩৪ ধরনের নিত্যপণ্যের তালিকা দেওয়া আছে। প্রথম শ্রেণিটিই হচ্ছে ভোজ্যতেল, তৈলবীজসহ খাদ্যদ্রব্য। বিদ্যমান আইনে আরও রয়েছে নিউজপ্রিন্টসহ সব ধরনের কাগজ, জ্বালানি তেল, ইস্পাত, প্রাকৃতিক রেশম সুতা, কয়লা, ওষুধ, সাইকেল ও সাইকেলের যন্ত্রাংশ, সিগারেট, চা, চিনি, শেভিং ব্লেড, সেলাই মেশিন, শিশুখাদ্য, স্কুল-কলেজের পাঠ্যবই, তুলার সুতা, গ্যাসসহ রাসায়নিক পণ্য, ইলেকট্রিক্যাল পণ্য, গ্লাস, কাঠ, সিমেন্ট, স্যানিটারি ফিটিংস, টাইলস, সিনেমার কাঁচা ফিল্ম, রাসায়নিক সার, টাইপরাইটার ইত্যাদি।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের জুলাইয়ে ১৭টি পণ্যকে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ঘোষণা করে। এগুলো হচ্ছে পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা, শুকনা মরিচ, দারুচিনি, লবঙ্গ, এলাচি, ধনে, জিরা, আদা, হলুদ, তেজপাতা, সয়াবিন তেল, পাম তেল, চিনি ও খাওয়ার লবণ। চিনি ও ভোজ্যতেল মূল আইনেও ছিল, ২০১২ সালেও নতুন করে উল্লেখ করা হয়।
২০১২ সালে একবার সরকার অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের তালিকা সংশোধন করে। তখন ১৭ ধরনের পণ্যকে নিত্যপণ্যের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তবে আগের আইনটিই বহাল থাকে। বিদ্যমান আইনকে যুগোপযোগী করতে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) ও বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন (বিটিটিসি) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে সুপারিশ করেছিল এক বছর আগেই।
অত্যাবশ্যকীয় পণ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকা না-থাকার মধ্যে পার্থক্য কী—জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, তালিকায় থাকলে দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার যেকোনো সময় ব্যবস্থা নিতে পারে। অতিরিক্ত মুনাফার লোভে কেউ কারসাজি করলে, লম্বা সময়ের জন্য মজুত রাখলে বা কৃত্রিম সংকট তৈরি করলে তখন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়। শুধু মূল্য নিয়ন্ত্রণ নয়, আইন অনুযায়ী অত্যাবশ্যকীয় নিত্যপণ্যের উৎপাদন ও বিপণন নিয়ন্ত্রণ করারও ক্ষমতা রাখে সরকার।
প্রস্তাবিত আইনে বলা হয়েছে, যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, সংরক্ষণ, পরিবহন, সরবরাহ, বিক্রি, নিষ্পত্তি, অধিগ্রহণ, ব্যবহার বা ভোগ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে এবং এগুলোর ব্যবসা-বাণিজ্য সীমিত করতে পারবে সরকার।
পণ্যের বিক্রি স্থগিত রাখা বা নিষিদ্ধ করার ক্ষমতাও সরকারের থাকবে। এ ছাড়া যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি উন্মুক্ত বা নিষিদ্ধ করতে পারবে সরকার। সরকার যেকোনো অত্যাবশ্যকীয় খাদ্যপণ্য নিম্ন আয়ের জনগণের কাছে বিক্রির জন্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশকে (টিসিবি) দেশি ও বিদেশি উৎস থেকে সরাসরি পণ্য কেনার ক্ষমতা দিতে পারবে।
আইন লঙ্ঘনকারীকে তিন বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা ১০ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান থাকবে। কেউ নির্দেশ পরিপালনে ব্যর্থ হলে, আদেশ লঙ্ঘনের চেষ্টা করলে এমনকি প্ররোচনা দিলেও তিনি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা তিন লাখ টাকা জরিমানা গুনবেন অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে বিদ্যমান আইনে শুধু তিন বছরের কারাদণ্ডের বিধান আছে। নতুন আইনের খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে, অপরাধ প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তি কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানা দেবেন বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এদিকে, সিগারেটকে নিত্যপণ্যের তালিকায় রাখা ভালো হবে, নাকি তালিকা থেকে বাদ দেওয়া ভালো হবে—তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের মতে, বাদ দিলে সিগারেটের উৎপাদন, বিপণন ও মূল্য নিয়ন্ত্রণবিষয়ক কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের ক্ষমতা কমে যাবে।
এমটিআই