ঢাকা: পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর অস্থির হয়ে ওঠে মসলার বাজার। এই ঈদে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা মসলার দাম বাড়িয়ে দেন ইচ্ছেমতো। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের এখনো দুই সপ্তাহের বেশি বাকি থাকলেও বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। এমন দাম বৃদ্ধিকে ক্রেতাদের অনেকেই ‘আগুনের’ সঙ্গে তুলনা করছেন।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। সবখানেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আদা, রসুন, জিরা, এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গসহ বেশ ধরনের মশলাপণ্য। এর জন্য ব্যবসায়ীরা ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়নকে দায়ী করছেন।
তবে ভোক্তারা বলছেন, অতি মুনাফার লোভে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে। বাজারে নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এভাবে একটার পর একটা জিনিসের দাম বেড়েই চলছে।
ঢাকার পাইকারি ও বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এলাচের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। অন্যান্য মসলার মধ্যে জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
আমদানি করা এলাচ এখন মানভেদে প্রতি কেজি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ২ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
পাইকারিতে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
কেজিতে ১০০-২০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ ও সাদা গোলা মরিচ ১ হাজার ১০০ টাকায়। জিরা এক মাসে ৫৮০-৬২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি ৭৫০-৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনের কেজি এখন ২০০ থেকে ২৪০ টাকা আর তেজপাতা ১৫০-২০০ টাকা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গেল প্রায় দুই বছরে ডলারের দাম ৩৫ শতাংশের বেশি বেড়েছে। ডলারের অভাবে এলসি খোলায় সমস্যা হয়েছে। নগদ অর্থ জমা দিয়েও খোলা যায়নি। এলসি যদিও খোলা গেছে, ব্যাংক-দরের বেশি দরে ডলার কিনতে হয়েছে।
বাংলাদেশ পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাজি আতিকুল হক বলেন, ‘এবার ভারতেও এলাচের দাম বেশি। নতুন করে কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ বেড়েছে। মসলার বাজার চড়া।’
রাষ্ট্রীয় বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গেল এক বছরে গড়ে প্রতি কেজি মসলার দাম বেড়েছে ৩৩ শতাংশ। সবচেয়ে কম ১১ শতাংশ দাম বেড়েছে দারুচিনির। লবঙ্গে ১৭, ধনিয়ায় ৫২, তেজপাতায় ৫২ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি ৬১ শতাংশ বেড়েছে এলাচে।
গত বছর প্রতি কেজি এলাচ ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছিল। ওই সময় লবঙ্গের দাম ছিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা।
এ বিষয়ে কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস চেয়ারম্যান এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাজারে সরকারের কোনো তদারকি নাই। যার ফলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত সামনে এনে তাদের মতো করে দাম বাড়াচ্ছে। অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ীর কারণে বাজারটা আজ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
নাজের হোসাইন বলেন, বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নাই। আমি বলব সরকারের অবহেলার কারণে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :