ঢাকা: বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাচ্ছে। এতে চাপ বাড়ছে বৈদেশিক দায়-দেনা পরিশোধের ওপর। এমনি পরিস্থিতিতে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন আনার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে চলমান পণ্য আমদানির সুযোগ আরো কমে যেতে পারে।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এমনিতেই ডলার সংকটের কারণে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আামদানি করা যাচ্ছে না। শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামালসহ সামগ্রিক পণ্য আমদানি কমে গেছে। এর ওপর আরো কঠোর সিদ্ধান্ত নেয়া হলে পণ্য আমদানি আরো কমে যাবে। যার সরাসরি প্রভাব পড়তে পারে শিল্প উৎপাদন তথা কর্মসংস্থানের ওপর।
বিবিএসের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, এক বছরে বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছে সাড়ে তেইশ লাখ। বর্ধিত জনসংখ্যার ক্ষেত্রে বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান দরকার। এজন্য প্রয়োজন শিল্পায়নের। আর শিল্পায়নের প্রধান উপকরণ হলো মূলধনী যন্ত্রপাতিসহ এর কাঁচামাল। কিন্তু ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানি কমে গেলে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে কর্মসংস্থানের ওপর।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত বছরের মার্চ মাসে ৬০৮ কোটি ৫০ লাখ ডলারের পণ্য আমদানি করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাসে তা ৫১০ কোটি ডলারে নেমে গেছে। গত বছরের তুলনায় এবার মার্চে কমেছে প্রায় ১৬ শতাংশ। অর্থাৎ মাস হিসেবে ১০০ কোটি ডলারের পণ্য কম আমদানি হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ডলার সংকটের কারণে পণ্য আমদানিতে বিশেষ করে বিলাসজাত পণ্য আমদানিতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছিল। প্রথমে শতভাগ মার্জিনে এলসি খোলার নির্দেশনা দেয়া হয়। এরপরেও ব্যাংকগুলো গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, তারা নগদ টাকার যোগান দিচ্ছেন। কিন্তু ব্যাংকগুলো ডলার সংস্থান করতে পারছে না। এ কারণে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য আমদানি করতে পারছেন না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, জুলই-ফেব্রুয়ারিতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ২৫ শতাংশ। পাশাপাশি শিল্পের কাঁচামাল আমদানিও কমেছে ২৫.০৬ শতাংশ। আর ভোগ্য পণ্যের আমদানি কমেছে প্রায় ১৯ শতাংশ। মূলধনী যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাবেই শিল্পের উৎপাদন কমে গেছে। এতে সরাসরি প্রভাব পড়েছে কর্মসংস্থানের উপর। আমদানি কমার পরেও রিাজর্ভ পতন ঠেকানো যাচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে নীট রিজার্ভ দেখানো হচ্ছে ১৮.৭২ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভ রয়েছে ১৩ বিলিয়নের কাছাকাছি। এমনি পরিস্থিতিতে আগামীতে রিজার্ভের ওপর চাপ কমানোর জন্যই আমদানি ব্যয়ে বড় ধরনের লাগাম টানা হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
সূত্র মতে, চলতি অর্থবছরে আমদানি ব্যয়ের লক্ষ্যমাত্রার প্রবৃদ্ধি ছিল ১৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। সম্প্রতি অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে এ প্রবৃদ্ধি সংশোধন করে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়। এছাড়া আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে এ খাতের ব্যয়ের প্রবৃদ্ধি না বাড়িয়ে ১০ শতাংশের ঘরে রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ২০২৫-২৬ এবং ২০২৬-২৭ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি যথাক্রমে ৯ শতাংশ ও ৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২৪-২০২৭ অর্থবছরে আমদানি খাতে ব্যয়ে এক ধরনের লাগাম টেনে দেওয়া হচ্ছে।
অর্থনৈতিক কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকে আমদানিতে কঠোরতা প্রসঙ্গে উদ্বেগ জানিয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, রপ্তানি যেহেতু আমদানিনির্ভর, তাই মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য আমদানি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যেন রপ্তানিতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।
এসআই/আইএ