ঢাকা: বাংলাদেশে বর্তমানে চ্যালেঞ্জিং সময়ে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৮ শতাংশ প্রস্তাব করা উচ্চাকাঙ্খী টার্গেট বলে মন্তব্য করেছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুন।
বৃহস্পতিবার (৬ জুন) জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ ঘোষণা পরবর্তী সিপিডির পর্যালোচনা সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমাদের প্রত্যাশা ছিল এই বাজেট অনেক উদ্ভাবনী হবে। এখানে সৃজনশীল ও কিছু সাহসী পদক্ষেপ থাকবে। কারণ অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জিং সময়ে গতানুগতিক বাজেট কোনো ধরনের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না। বাজেটে জিডিপির লক্ষ্যমাত্রা ৬.৮ শতাংশ প্রস্তাব করা হয়েছে যা উচ্চাকাঙ্খী ছাড়া কিছু না। কারন এ লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করতে বিনিয়োগ লাগবে সেটা কোথায় থেকে আসবে?
তিনি বলেন, বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার ১১৭ টাকা ধরা হয়েছে। বিগত দিনের পর্যালোচনা করলে এই হারের প্রাক্কলন আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এছাড়াও রাজস্ব আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এ লক্ষ্যমাত্রা পুরণ করা সম্ভব হবে না।
তিনি আরও বলেন, নতুন বাজেটটা আমাদের কাছে অতীতের বাজেটের মতোই মনে হয়েছে। বর্তমান সময়ের সমস্যা, ক্রান্তিকালীন সংকট দেখা দিয়েছে অর্থনীতিতে। সেগুলো সমাধানে এই বাজেট যথোপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে পারেনি। দিকনির্দেশনা দিতে পারেনি। ২০২৪ সালে যে বাজেট প্রাক্কলন করা হয়েছে তার মতোই এবারের বাজেট প্রস্বাবনা। যা বাস্তবতার উপর বিবেচনা করে করা হয়নি বলে মনে করছি।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, উন্নয়ন ব্যয় যে হিসাব ধরা হয়েছে তা আরও বাড়বে কারণ পরিচালন ব্যয় যেটা ধরা হয়ে সে অনুযায়ী উন্নয়ন ব্যয় অনেক কম ধরা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ১৫ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগকে নৈতিকভাবে সমর্থন করা যায় না জানিয়ে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয় না। এ ধরনের পদক্ষেপ বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য করা হয়। কিন্তু এর ফলাফল আমরা দেখি না। একেবারে কালো টাকা সাদা করার জোয়ার এসেছে বা প্রচুর টাকা এসেছে, এমন কিছু দেখা যায় না।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, বাজেটে বিভিন্ন সূচকে যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সেগুলো বাস্তবসম্মত কি না? এমন প্রশ্ন তুলে ফাহমিদা বলেন, জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা, বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা এ রকম সবগুলো ক্ষেত্রে যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, এগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার ছোঁয়া নেই। মনে হচ্ছে অনেকটাই আইএমএফ যে লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দিয়েছে, সেটার কাছাকাছি নেওয়ার একটা চেষ্টা। এখানে যৌক্তিক কোনো চিন্তাভাবনা করা হয়েছে কি না সেটা নিয়ে সন্দেহ আছে।
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেশ কিছু পণ্যের উপর সরকার কিছু করছাড়ের প্রস্তাব দিয়েছে। এটা ভালো প্রস্তাব। তবে দেখার বিষয় হলো এটা কীভাবে বাস্তবায়ন হয়। কারণ দেখা যায় কর কমালেও সেটার বাজারে প্রভাব পড়ে না। এজন্য বাজার ব্যবস্থাপনা মনিটরিংটা গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক নিরাপত্তাখাতের বরাদ্দে সামান্য পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু এরমধ্যে সঞ্চয়পত্রের সুদ, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পেনশনের অর্থ, কৃষিখাতের ভর্তুকী এখানে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে এটাকে বড় বরাদ্দ দেখা যায়। এগুলো বাদ দিলে দেখা যায় সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ বাড়েনি।
এমএস