ঢাকা : ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের কর নির্ধারণী প্রস্তাবে দাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্তের প্রভাব স্পষ্ট। রাজস্ব আয় বাড়াতে আয়কর ও ভ্যাট দুই বিভাগেই অব্যাহতি কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
ব্যক্তির সর্বোচ্চ করহারসহ অনেক ক্ষেত্রে বেড়েছে কর ও ভ্যাটের বোঝা। তবে, কিছু পণ্যে আমদানি শুল্কে ছাড় দেওয়া হলেও আয় বাড়াতে অনেক পণ্যে বাড়ানোও হয়েছে।
এদিকে আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী মূল্যস্ফীতির হার কমাতে আগামী অর্থবছরেও মুদ্রানীতিকে ব্যবহার করতে হবে। এটি করলে সুদহার বাড়াতে ও টাকার প্রবাহ কমাতে হবে।
ব্যক্তির করমুক্ত আয়ের সীমা অপরিবর্তিত রেখে, করের সর্বোচ্চ হার বাড়িয়ে ত্রিশ করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। শেয়ারবাজারে লেনদেনে মূলধনী মুনাফায় কর বসানো হয়েছে। ভৌত অবকাঠামো খাতে কর অব্যাহতি বাড়ানোর প্রস্তাব করেননি অর্থমন্ত্রী। বাতিল করেছেন বেসরকারি হাইটেক পার্কের সুবিধা। আইসিটি খাতে ছাড়ের মেয়াদ তিন বছর বাড়ানোর প্রস্তাব করলেও, সেবার সংখ্যা কমিয়েছেন ৮টি।
হোটেল রেস্টুরেন্ট, কনভেনশন সেন্টার এসেছে উৎসে করের আওতায়। কর বেড়েছে মিষ্টি পানীয় উৎপাদনকারী কোম্পানি, ট্রাস্ট ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মুনাফা আয়ে। বাড়ানো হয়েছে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র দেখানোর পরিধি। কর বাড়ছে পোশাক খাতেও। আয় বাড়াতে কালো টাকা সাদা করায় সাধারণ ক্ষমার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ।
অল্পকিছু ক্ষেত্রে কর কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। শেয়ারবাজারের বাইরের ও এক ব্যক্তির কোম্পানির করপোরেট কর কমছে। নিত্যপণ্য সরবরাহেও করের চাপ কমিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
ভ্যাটে আয় বাড়ানোর চাপ আরও বেশি স্পষ্ট। কিছু ক্ষেত্রে ব্যাংকের আবগারি শুল্ক বাড়ছে। আইস্ক্রিম, কোমল পানীয় জুস, মোবাইলে কথা বলা, সিগারেটসহ নানা খাতে কর বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। বিনোদনসহ অনেক খাতে বেড়েছে ভ্যাটের হার।
কমানো হয়েছে ভ্যাট অব্যাহতিও। এসি, ফ্রিজ উৎপাদনে ছাড় কমানো হয়েছে। মোবাইল উৎপাদন, এভিয়েশন খাত, অফশোর ব্যাংকিংসহ অল্প কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দেয়ার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
ট্যারিফ যৌক্তিকীকরণের অংশ হিসেবে দুইশ ৮২ পণ্যে আমদানি শুল্ক যেমন এসডি, আরডি কমানোর প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। হাইটেক পার্ক ও অর্থনৈতিক অঞ্চলের আমদানিতে আরোপ করা হয়েছে আমদানি শুল্ক। আরও বেশকিছু খাতে কাঁচামাল ও মূলধনী যন্ত্র আমদানিতে শুল্ক বাড়িয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
উল্লেখ্য, আইএমএফ ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সরকারের অনুকলে ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ইতোমধ্যে দুটি কিস্তিতে ১১৬ কোটি ডলার পেয়েছে। তৃতীয় কিস্তি বাবদ আরও ১১৫ কোটি ডলার জুনের মধ্যেই পাওয়া যাবে। ওই ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন করতে গিয়ে এখন অর্থনীতিতে চাপের সৃষ্টি হয়েছে।
আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা শুরু হয়েছে। ফলে এখন পর্যন্ত একদফা এর দাম কমেছে, বেড়েছে দুদফা। এর প্রভাবে পরিবহণ ভাড়া বেড়েছে। কিন্তু কমানোর পর তা কমেনি। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাব ইতোমধ্যে ভোক্তা পর্যায়ে পড়তে শুরু করেছে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপ আরও বাড়বে।
এমটিআই