ঢাকা: বাজেটের জন্য রাজস্ব সংক্রান্ত বেশকিছু প্রস্তাবনা সরকারের বিবেচনার জন্য এফবিসিসিআইর পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছে। কিছু প্রস্তাবনা বিবেচনা হলেও কোন কোন ক্ষেত্রে প্রস্তাবের প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়নি বলে মন্তব্য করেন দি ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) সভাপতি মাহবুবুল আলম।
শনিবার (০৮ জুন) প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট ২০২৪-২৫ এর উপর এফবিসিসিআইয়ের সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ধান গম গোল আলু পেঁয়াজ রসুন ভোজ্য তেল চিনি বাদামসহ অনেক পণ্যের উৎসে কর ২ শতাংশ কমিয়ে ১ শতাংশ করা হয়েছে। যা মুল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
মাহবুবুল আলম বলেন, বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দক্ষতা, স্বচ্ছতা, জবাবদীহিতা এবং তদারকির মান ক্রমাগতভাবে উন্নয়নের জন্য সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা ও পরিকল্পনা নিশ্চিত করা জরুরী। এছাড়াও বাজেটে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব আরও জোরদার করতে হবে।
তিনি বলেন, বাজেটে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৬.৭৫ শতাংশ এবং মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬.এ৫ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের জন্যও বাজেটে মুল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬.৫ শতাংশ। কিন্তু চলতি বছর মে মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯.৮৯ শতাংশ । এ মুল্যস্ফীতির হারকে কমিয়ে এনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ বলে আমরা মনে করি। মূল্যস্ফীতির উদ্ধগতির লাগাম টেনে ধরতেই হবে। তা না হলে সাধারণ মানুষের কষ্ট ও ভোগান্তি বাড়বে।
তিনি আরো বলেন, ভূ-রাজনৈতিক ও পারিপার্শ্বিক কারণে আমাদের অর্থনীতিতে এমনিতেই বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বৈদেশিক মুদ্রার উচ্চ বিনিময় হার, ঋণের সুদের হার, মূল্যস্ফীতি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ প্রভৃতি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বাজেট বাস্তবায়নের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করতে হবে।
মাহবুবুল আলম বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে মোট রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে ৫ লক্ষ ৪১ হাজার কোটি টাকা- যা জিডপির ৯.৭% । রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪ লক্ষ ৮০ হাজার কোটি টাকা। অন্যান্য খাত থেকে আসবে ৬৫ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। এ বিশাল রাজস্ব সংগ্রহ করা হবে সরকারের জন্য একটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এমনিতেই দেশের সামষ্টিক অর্থনীতির সূচকসহ রাজস্ব আহরণ প্রক্রিয়া বিশ্বব্যাপী বিরাজমান কঠিন পরিস্থিতির কারণে চাপের মুখে।
‘লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী রাজস্ব আদায়ে ব্যবসা-বাণিজ্য বান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সংস্কার জরুরী। সেই সাথে ট্যাক্স-জিডিপি রেশিও বৃদ্ধির জন্য করের আওতা বাড়ানো এবং উপজেলা পর্যন্ত কর অফিস করা প্রয়াজন। এ বিষয়ে এফবিসিসিআই থেকে জাতীয় বাজেট পরামর্শক কমিটির সভায় সরকারের নিকট বিস্তারিত প্রস্তাবনা তুলে ধরেছিলাম।’
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি ২ লক্ষ ৫৬ হাজার কোটি টাকা যা জিডিপির ৪.৬ শতাংশ। যদিও চলতি অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি রাখা ছিল ৫.২ শতাংশ। ঘাটতি মেটাতে সরকারকে আভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ১ লক্ষ ৬০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা নিতে হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে নিতে হবে ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সেসাথে সরকারকে সুদের বোঝা টানতে হচ্ছে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে অধিক মাত্রায় সরকারের ঋণ গ্রহণ বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাজেট ঘাটতি মেটাতে স্থানীয় ব্যাংক ব্যবস্থার পরিবর্তে যথাসম্ভব সুলভ সুদে ও সতর্কতার সাথে বৈদেশিক উৎস হতে অর্থায়নের জন্য নজর দেয়া যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের (স্যোশাল সেফটি নেট) আওতা বাড়ানো হয়েছে। এসব উদ্যোগ সামাজিক নিরাপত্তা সুসংহত এবং সামাজিক অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আমরা মনে করি। তবে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের নিকট যাতে এ সুবিধা যথাযথভাবে পৌঁছায় সে বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।
এএইচ/আইএ