• ঢাকা
  • সোমবার, ০৮ জুলাই, ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১

মুদ্রানীতিতে বাড়তে পারে নীতি সুদহার ও ডলার দর


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ৪, ২০২৪, ০১:১০ পিএম
মুদ্রানীতিতে বাড়তে পারে নীতি সুদহার ও ডলার দর

ঢাকা : সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফল হলেও বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ। বিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ায় এ উদ্যোগ কোনো কাজেই লাগেনি। উল্টো ডলারের দামবৃদ্ধি মূল্যস্ফীতি আরও উসকে দিচ্ছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যেই আগামী মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ফের নীতি সুদহার বাড়াতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। একই সঙ্গে বাড়তে পারে মার্কিন ডলারের মূল্যও। আসন্ন মুদ্রানীতিতে এমন পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।

গত মে মাসে দেশে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৮৯-এ উন্নীত হয়েছে। আর খাদ্য মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্ক ছাড়িয়ে গেছে। এমন পরিস্থিতিতে চাপের মধ্যে রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত বছরের জুলাই থেকে ধারাবাহিকভাবে নীতি সুদহার বাড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর ফলে ঋণের সুদহারও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে ১৬ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি গ্রহণ করলেও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে তা কোনো কাজেই আসছে না। মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে মার্কিন মুদ্রা ডলার দর নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিন্তু বারবার বিভিন্ন দাওয়াই দিয়েও এই সূচকে লাগাম টানা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে আগামী মুদ্রানীতিতে ডলারের দর ১১৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২০ টাকা পর্যন্ত করা হতে পারে। পাশাপাশি কয়েক মাসের মধ্যে ক্রলিং পেগ বাদ দিয়ে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হতে পারে মুদ্রা বিনিময় হার। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও ডলারের পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রার সংকট, বিদেশি লেনদেনে ভারসাম্যহীনতা এবং নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাংক খাত মোটাদাগে এগুলোই এখন আর্থিক খাতের প্রধান সমস্যা। এসব সমস্যার মধ্যেই আগামী ১৪ জুলাই চূড়ান্ত অনুমোদনের পর যে কোনো দিন ঘোষণা হবে মুদ্রানীতি। মুদ্রানীতির প্রধান লক্ষ্য থাকবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। সেক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত অনুযায়ী বাড়বে নীতি সুদহার। পাশাপাশি বর্তমানে বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ডলারের দরে আসবে পরিবর্তন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, বর্তমানে নির্ধারিত নীতি সুদহার ৮ দশমিক ৫ শতাংশ। নতুন মুদ্রানীতিতে তা ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়ে করা হতে পারে ৮ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আর ক্রলিং পেগ অনুযায়ী বর্তমানে ডলারের নির্ধারিত দর ১১৭ টাকা। এর থেকে ১ টাকা কম-বেশিতে মার্কিন এই মুদ্রার ক্রয়-বিক্রয় করার বিধান রয়েছে। নতুন মুদ্রানীতিতে ডলারের দরে ১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত পরিবর্তন হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ডলারের দর দাঁড়াতে পারে ১২০ টাকা।

জিনিসপত্রের লাগামহীন দামের চাপে টানা ১৪ মাস ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের ওপরে। গত ১৭ জানুয়ারি মুদ্রানীতি ঘোষণা অনুষ্ঠানে গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার জানিয়েছিলেন, আগামী জুনের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে ৭ দশমিক ৫ শতাংশে নেমে আসবে। তবে জুন পার হলেও মূল্যস্ফীতি কমেনি, বরং তা বেড়ে বর্তমানে প্রায় ১০ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে সাধারণ মানুষ চরম ভোগান্তিতে রয়েছে। গভর্নর জানিয়েছিলেন, মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে নেমে না আসা পর্যন্ত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অব্যাহত থাকবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর ও সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. হাবিবুর রহমান বলেন, আমাদের মূল লক্ষ্য মূল্যস্ফীতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে মুদ্রানীতির বৈঠক রয়েছে। আমরা সেখানে বিষয়টিতে নজর দেব। এরপরই বিস্তারিত বলা যাবে। পাশাপাশি যেহেতু ক্রলিং পেগ আমাদের জন্য কাজে দিচ্ছে সে জন্য এখনই ক্রলিং পেগ তুলে দেওয়া হবে না বলেও নিশ্চিত করেছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের স্বার্থে আগামী মুদ্রানীতিও সংকোচনমূলক হবে। বাড়ানো হতে পারে নীতি সুদহার, রেপো, রিভার্স রেপোর মতো মুদ্রানীতির মৌলিক সুদ কাঠামোগুলোও। আর ডলারের দর দেড় থেকে ৩ টাকা পর্যন্ত বাড়তে পারে। তারা জানান, রিজার্ভ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক উদ্বিগ্ন। এর কারণ হিসেবে ডলারের বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে না দেওয়াকে দায়ী করা হচ্ছে। তাই ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টি এবার বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। আইএমএফের তৃতীয় কিস্তির ঋণও যোগ হচ্ছে। রেমিট্যান্সও আসছে ভালো। জুন মাসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রি বন্ধ রেখেছে। সব মিলিয়ে রিজার্ভকে যে কোনো মূল্যে ভালো অবস্থানে ধরে রাখার সিদ্ধান্ত রয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নতুন মুদ্রানীতিতে দেশের ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি (এসএমই) শিল্পের ঋণপ্রবাহ নিশ্চিত করতে হবে। বড়দের জন্য পুঁজিবাজার আছে, তারা তহবিল সংগ্রহের জন্য সেখানে যাক। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সরবরাহ বাড়াতে হবে। বাজারব্যবস্থায় শৃঙ্খলা আনতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান বাড়ানোর কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। মুদ্রানীতিতে এসব বিষয়ে সুস্পষ্ট বার্তা না থাকলে সেটি প্রণয়ন কিংবা ঘোষণা দিয়ে কোনো লাভ নেই।

এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!