ঢাকা: জীবন বীমা খাতের কোম্পানি সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের নামে ৫ বছরে অতিরিক্ত ৫৭ কোটি টাকা খরচ করেছে। এরফলে কোম্পানিটি বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। এছাড়া কোম্পানিটি নির্ধারিত সীমার অতিরিক্ত কমিশন প্রদান, বেতন ও কমিশন খাতে মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ খরচ করেছে। এই ব্যয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। তাছাড়া কোম্পানিটির লাইফ ফান্ডের ৯০ শতাংশই তারল্যে রূপান্তরের অযোগ্য বলে জানানো হয়েছে।
রোববার (৭ জুলাই) বীমা কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা ব্যয় নিয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থার একটি সভায় এই সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। আইডিআরএ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জয়নুল বারীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন কর্তৃপক্ষের সব সদস্য, নির্বাহী পরিচালক, পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক এবং সানফ্লাওয়ার লাইফেরমুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা, প্রধান অর্থ কর্মকর্তা, কোম্পানি সেক্রেটারিসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
সভায় জানানো হয়, আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২২ সালে ৪১ দশমিক ৩০ শতাংশ ও ২০২৩ সালে ১৫ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে সানফ্লাওয়ার লাইফ।
সভায় বলা হয়, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের খাতওয়ারী চিত্র পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের সর্বোচ্চ ব্যয় হয় কমিশন ও বেতন খাতে, যা মোট ব্যবস্থাপনা ব্যয়ের ৮০ দশমিক ৫০ শতাংশ।
কোম্পানির লাইফ ফান্ডের সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ তারল্যে রূপান্তরের যোগ্য বলে আর্থিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। ফান্ডের বাকি ৯০ শতাংশ মানসম্মত বিনিয়োগ নয়। দ্বিতীয় বর্ষের নবায়ন প্রিমিয়ামের হার ২ শতাংশেরও কম। এর ফলে পলিসি গ্রহীতারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলেও সভায় বলা হয়।
সভায় উপস্থিত সদস্যরা এজেন্টদের কমিশন নির্ধারিত সীমায় নিয়ে আসার বিষয়ে মতামত প্রদান করেন। এছাড়া কোম্পানির লাইফ ফান্ড যথাযথকরণ, যথাসময়ে বার্ষিক হিসাব প্রতিবেদন প্রস্তুত, তথ্যাদির নির্ভুলতা যাচাই করে কর্তৃপক্ষে দাখিল, নবায়ন প্রিমিয়াম আয় বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপসহ এ সম্পর্কিত অন্যান্য বিষয় আলোচনা হয়।
সভা সূত্রে জানা যায়, কোম্পানিটি গত ৫ বছরে ৫৭ কোটি টাকা অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা ব্যয় করেছে, যার ফলে কোম্পানিটি বীমা দাবি পরিশোধ করতে পারছে না। এছাড়াও কোম্পানির লাইফ ফান্ডের ৯০ শতাংশই তারল্যে রূপান্তরের অযোগ্য। কোম্পানির সার্বিক কার্যক্রমও গ্রাহকদের প্রতিশ্রুতি পূরণের জন্য যথেষ্ট নয়।
জানা গেছে, সভা থেকে আইডিআরএ কোম্পানি কর্তৃপক্ষকে কয়েকটি নির্দেশনা দিয়েছে। সেগুলো হলো- কোম্পানির গ্রেড অনুযায়ী কর্মচারীদের নাম, পদবী ও বেতনের পরিমাণসহ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রদান করতে হবে। প্রথম বর্ষ মোট প্রিমিয়াম ও তার ওপর এজেন্ট কমিশন ও অন্যান্যদের কমিশনের পরিমাণ (পৃথকভাবে), প্রথম বর্ষ কমিশনের ১০ শতাংশ পরিমাণ, এরজন্য কী পরিমাণ দ্বিতীয় বর্ষে পরিশাধ করা হয়েছে প্রমাণসহ তা দাখিল করতে হবে। লাইফ ফান্ডের যে পরিমাণ অর্থ তারল্যে রূপান্তরযোগ্য নয়, তার পরিমাণ ও তা অবলোপন করতে হবে।
এ বিষয় নিয়ে আইডিআরএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, অতিরক্তি ব্যবস্থাপনা ব্যয়, রূপান্তর অযোগ্য লাইফ ফান্ডসহ বিভিন্ন বিষয় পর্যালোচনা করে সানফ্লাওয়ার লাইফ ইন্স্যুরেন্স কর্তৃপক্ষকে কিছু নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। সেগুলো পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এএইচ/আইএ