ঢাকা : কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর আর্থিক খাতের নিয়মিত তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তারা যেসব তথ্য সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রকাশ করে আসছিল, সেগুলো মাসে একবার প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
সর্বশেষ সাপ্তাহিক ভিত্তিতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বা মজুতের তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দিয়েছে। সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় গণমাধ্যমও যথাযথভাবে এসব তথ্য সংগ্রহ করতে পারছে না। ফলে মানুষ দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে হালনাগাদ তথ্য জানতে পারছেন না।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কাজগুলোর অন্যতম একটি হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; যা সংস্থাটি করতে পারছে না। ফলে পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়া তথা মূল্যস্ফীতির কারণে ভোগান্তিতে আছেন সারা দেশের মানুষ। জোর করে ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ ও সুদের হার দীর্ঘদিন আটকে রাখার কারণে মূল্যস্ফীতি কমছে না বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদেরা। অবশ্য সুদের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি ডলারের দামও কিছুটা বাজারভিত্তিক করা হয়েছে; কিন্তু এই পদক্ষেপ সময়মতো না নেওয়ায় সংকট কাটছে না, এমন অভিমতই দিচ্ছেন অর্থনীতিবিদেরা।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ, যা অর্থবছরওয়ারি হিসাবে অন্তত এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ। পুরো বছরে কোনো মাসেই সার্বিক মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের নিচে নামেনি। গত ১২ মাসের মধ্যে ৭ মাসই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল।
গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল। বিদায়ী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৬ শতাংশে রাখার লক্ষ্য ছিল সরকারের। বছর শেষে দেখা গেছে, সেই লক্ষ্যের ধারেকাছেও নেই। নতুন বছরেও মূল্যস্ফীতি কমার কোনো লক্ষণ নেই, উল্টো বাড়ছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বেশ আগে থেকেই তাদের ওয়েবসাইটে সাপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক, ষাণ্মাসিক ও বার্ষিক ভিত্তিতে দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংক খাতের বিভিন্ন আর্থিক সূচকের হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ করে আসছিল। তবে ২০২২ সালের জুলাইয়ে বর্তমান গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার বাংলাদেশ ব্যাংকে যোগ দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটিতে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার প্রথমে সীমিত করেন। পরে তা একেবারে বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটির ওয়েবসাইটে অর্থনীতির হালনাগাদ তথ্য প্রকাশ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটে পণ্যভিত্তিক ঋণপত্র (এলসি) খোলার তথ্য সাপ্তাহিক ভিত্তিতে প্রকাশ করে আসছিল। তা দুই বছর ধরে বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগে (সিএমএসএমই) যে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে, আগে তা ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে প্রকাশ করা হতো, যা এখন বন্ধ রয়েছে। ব্যাংকভিত্তিক ঋণ ও আমানতের সুদহারসহ বিভিন্ন তথ্য প্রকাশও নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি বন্ধ করে দিয়েছে।
এদিকে চলতি সপ্তাহ থেকে রিজার্ভের তথ্য প্রকাশ বন্ধ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আইএমএফ–স্বীকৃত বিপিএম-৬ পদ্ধতি অনুযায়ী ৪ জুলাই রিজার্ভের স্থিতি ছিল ২১ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন বা ২ হাজার ১৭৮ কোটি মার্কিন ডলার। এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নে (আকুতে) আমদানি দায় শোধের পর তা কমে হয়েছে ২০ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪৬ কোটি ডলার। তবে প্রকৃত রিজার্ভ আরও ৬ বিলিয়ন বা ৬০০ কোটি ডলার কম। ৪ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব হিসাবে মোট রিজার্ভ ছিল ২৬ দশমিক ৮১ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬৮১ কোটি ডলার, যা থেকে আকুতে আমদানি দায় শোধ করা হয়। এরপর রিজার্ভ কমে হয়েছে ২৬ দশমিক ১৭ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৬১৭ কোটি ডলার।
দুই বছর আগে দেশে প্রতি ডলারের মূল্য ছিল ৮৫ টাকা, যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১৯ টাকা। এদিকে ব্যাংকঋণের সুদহার বেড়ে হয়েছে ১৬ শতাংশ।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :