ঢাকা: উচ্চ মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু আর্থিক খাতের এই সূচক কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে ব্যাংকে গচ্ছিত সঞ্চয় ভেঙে চলতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। সব খরচের পাশাপাশি বেড়েছে শিক্ষা ব্যয়ও। এ কারণে পরিবারকে সাহায্য করতে নিজেদের ব্যাংক আমানত ভাঙতে শুরু করেছে শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাবে চলতি বছরের মে মাসেও কমেছে স্কুলপড়ুয়াদের ব্যাংক হিসাবে জমানো টাকার অঙ্ক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিলে স্কুল শিক্ষার্থীদের ২ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৮ লাখ টাকার ব্যাংক আমানত ছিল। আর পরের মাসে এর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১২৭ কোটি ৮২ লাখ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসে আমানত কমেছে ২২ কোটি ৬ লাখ টাকা।
জানা গেছে, শিক্ষার্থীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে ও তাদের আর্থিক ব্যবস্থাপনার বিষয়ে শিক্ষিত করে তোলার উদ্যোগের অংশ হিসেবে ২০১০ সালে কেন্দ্রীয় ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা হয়। এই কার্যক্রমের লক্ষ্য, শিক্ষার্থীদের মধ্যে টাকা জমানোর অভ্যাস তৈরি করা এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় তাদের আরও উপযোগী করে তোলা। এ পর্যন্ত ৫৯টি ব্যাংক স্কুল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করেছে। ১১ থেকে ১৭ বছর বয়সীরা এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খুলতে পারে।
এই অ্যাকাউন্টগুলোর সঙ্গে বেশকিছু সুবিধা পাওয়া যায়। যেমন—সব ধরনের ফি ও চার্জের ক্ষেত্রে রেয়াত, বিনামূল্যে ইন্টারনেট ব্যাংকিং সুবিধা, ন্যূনতম স্থিতির বাধ্যবাধকতার ক্ষেত্রে ছাড় ও স্বল্প খরচে ডেবিট কার্ড পাওয়ার সুযোগ। ১০০ টাকা আমানত রেখেই এ ধরনের অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যমতে, গত এপ্রিলে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত ছিল ১ হাজার ৫৫৬ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর পরের মে মাসে শহরের শিক্ষার্থীদের আমানত দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৫৩৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। সেই হিসাবে এক মাসে শহরের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত কমেছে ২০ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। এপ্রিলে গ্রামের শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত ছিল ৫৯৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরের মে মাসে আমানত কমে দাঁড়িয়েছে ৫৯১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ মাসের ব্যবধানে তাদের আমানত কমেছে ১ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
স্কুল পড়ুয়াদের ব্যাংক আমানতের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, গত বছরের জুলাই থেকেই আমানত কমছে। ওই মাসে শিক্ষার্থীদের ব্যাংক আমানত ছিল ২ হাজার ২৯৯ কোটি টাকা, যা আগস্টে এসে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ২৮৫ কোটি, সেপ্টেম্বরে ২ হাজার ২৩২ কোটি, অক্টোবরে ২ হাজার ২০২ কোটি, নভেম্বরে ২ হাজার ১৯৯ কোটি ও ডিসেম্বরে ২ হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়ায় ২ হাজার ১৩৬ কোটি, ফেব্রুয়ারিতে ২ হাজার ১০৯ কোটি এবং মার্চে বেড়ে হয় ২ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের মে শেষে মোট আমানত ছিল ২ হাজার ২২৮ কোটি টাকা।
এএইচ/আইএ