ঢাকা : এবার শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কেন্দ্র করে সৃষ্ট পরিস্থিতির প্রভাব পড়েছে খোলাবাজারের ডলারের (কার্ব মার্কেট) দামে। গেল বেশ কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ প্রচারণা চালাচ্ছেন অনেক প্রবাসী।
এ ছাড়া কারফিউ ও ইন্টারনেট বন্ধের প্রেক্ষাপটে চলতি জুলাইয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেক কমে গেছে। এতে বেড়ে গেছে খোলাবাজারের ডলারের দাম।
রাজধানীর বিভিন্ন মানি এক্সচেঞ্জারগুলোতে ১২৪ টাকা ছাড়িয়েছে ডলারের দর। যদিও ব্যাংকগুলোতে রেমিট্যান্সের ডলারের দাম এখনো ১১৮ টাকায় সীমাবদ্ধ রয়েছে।
গত কয়েক দিন ধরেই খোলাবাজারে ডলারের দাম একটু একটু করে বাড়ছে। কোটা আন্দোলনের আগে মানি এক্সচেঞ্জগুলো ডলার বিক্রি করত ১১৯-১২০ টাকায়। তবে চলতি সপ্তাহে রেমিট্যান্স কমে আসার সংবাদে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে। চলতি সপ্তাহের শুরুর দুই দিন খোলাবাজারে ডলার ১২১ থেকে ১২২ টাকায় বিক্রি হলেও গতকাল এক দিনের ব্যবধানে বেড়েছে ২-৩ টাকা।
এ বিষয়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনৈতিক পরিস্থিতিই এই অর্থনৈতিক সংকট তৈরি করছে। মূলত বিদেশি মুদ্রা সংকটের কারণে এই পরিস্থিতিতে তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে।
রপ্তানি কমে গেছে, আবার রেমিট্যান্সও কম আসছে। এছাড়াও এই পরিস্থিতিতে অনেকেই এখন নগদ ডলার হাতে রাখতে চাইবে। সব মিলে এই অবস্থা তৈরি হয়েছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাবে।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল দিলকুশা এলাকায় বিভিন্ন মানি চেঞ্জার হাউজে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে প্রায় সবগুলো মানি চেঞ্জার হাউজগুলোতেই ডলার কেনা হচ্ছে ১২৩ টাকা থেকে ১২৩ টাকা ৫০ পয়সায়। আর বিক্রি করা হচ্ছে ১২৪ টাকা থেকে ১২৪ টাকা ২০ পয়সা পর্যন্ত।
রাজধানীর ফকিরাপুলের নিবেদিতা মানি এক্সচেঞ্জার লিমিটেডে যোগাযোগ করা হলে সেখানকার প্রধান মাকছুদুর রহমান বলেন, আজ পর্যন্ত আমরা ১২৩ টাকা করে কিনছি। সব জায়গায় এই দামেই কেনা হচ্ছে।
দিলকুশার জামান মানি এক্সচেঞ্জার হাউজের জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি কত ডলার কিনবেন তার ওপর দাম। আজ ১২৪ টাকা দরে বিক্রি করছি। ১২৩ টাকা ৫০ পয়সা আমাদেরই কেনা পড়ছে। কালকের দর কী হবে এখন বলা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে মানি এক্সচেঞ্জ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের মহাসচিব গৌতম দে বলেন, মার্কেটে ডলার কম থাকার কারণে দাম বেড়ে গেছে। আন্দোলন পরিস্থিতির কারণে রেমিট্যান্স ঠিকমতো আসছে না। যার কারণে সংকট তৈরি হয়েছে। আজ মার্কেট প্রাইস ১২৩-১২৪ চলছে। সামনে কী হবে বলা যাচ্ছে না।
ডলারের দাম বাড়ায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়তে থাকে। টানা তিন মাস ধরেই রেমিট্যান্স ২০০ কোটি ডলারের বেশি এসেছে। এর মধ্যে জুন মাসে ২৫৪ কোটি ডলারেরও বেশি আসে, যা একক মাস হিসেবে দেশের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কিন্তু ছন্দপতন হয় জুলাই মাসে। কোটা আন্দোলন কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিশৃঙ্খলা, হত্যার পাশাপাশি ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় প্রায় এক সপ্তাহ রেমিট্যান্স বাধাগ্রস্ত হয়।
এ ছাড়া কোটা আন্দোলন দমনে সরকারি পদক্ষেপে নাখোশ প্রবাসীদের অনেকেই বৈধপথে রেমিট্যান্স না পাঠানোর কথা বলছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। যার প্রভাব ইতিমধ্যেই পড়তে শুরু করেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি জুলাইয়ের ১ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় এসেছে ১৫৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। সে হিসেবে প্রতিদিন এসেছে ৫ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এর মধ্যে ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত এসেছে ৩৭ কোটি, ৭ থেকে ১৩ জুলাই ৬০ কোটি ও ১৪ থেকে ২০ জুলাই ৪৫ কোটি। আন্দোলনের তীব্রতা ও সরকারের কঠোর পদক্ষেপের পর ২১ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত এসেছে মাত্র ১৩ কোটি ডলার।
এমটিআই