ঢাকা: দেশব্যাপী ১৭ জুলাই থেকে শুরু হওয়া ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট অনলাইন-ভিত্তিক ছোট ব্যবসা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার ফলে উদ্যোক্তা এবং ফ্রিল্যান্সাররা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এসব ক্ষতি থেকে বাঁচতে দ্রুত স্থায়ী সমাধান চাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
দেশে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হলেও, কোটা সংস্কার চলমান অস্থিরতার কারণে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম এবং টিকটকের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলি স্বাভাবি অবস্থায় ফিরতে সমস্যা হচ্ছে। ফলে ফেসবুক ভিত্তিক ব্যবসা বা এফ কমার্স খাত আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। স্বাভাবিক গতি কার্যক্রম চালাতে না পারায় বড় ক্ষতি গুণতে হচ্ছে এই খাতকে।
খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দশ দিনের ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউটের ফলে এফ-কমার্স সেক্টরে মোট লেনদেন ১২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে, যা প্রতিদিন গড়ে ১২০ কোটি টাকা।
এ ছাড়া এ খাতের উদ্যোক্তাদের ব্যক্তিগত ক্ষতি হয়েছে ৩০ কোটি টাকা। ফলস্বরূপ, দেশব্যাপী অর্ধ মিলিয়নেরও বেশি এফ-কমার্স উদ্যোক্তারা গ্রাহকদের আস্থা পুনরুদ্ধার করতে এবং তাদের ব্যবসার টিকে থাকা নিশ্চিত করতে চেষ্টা করছে।
আফিয়া মুনিরা, একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী এবং একজন গৃহিনী, ফেসবুক ভিত্তিক ক্লাউড কিচেনের ব্যবসা রয়েছে তার। ইন্টারনেট বন্ধের কারণে তিনি যথেষ্ট আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
তিনি বলেন, "আমি একটি ছোট ক্লাউড কিচেন চালাই যেখানে আমার মা খাবারের আইটেম তৈরি করেন যা আমরা আমাদের ফেসবুক পেজের মাধ্যমে বিক্রি করি। আমার পুরো ব্যবসা ফেসবুকের উপর নির্ভর করে, কিন্তু ১৭ জুলাই থেকে, কোন মোবাইল ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, গত মঙ্গলবার ব্রড ব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করে দিয়েছে কিন্তু এখনও আমার ব্যবসা কার্যক্রম চালু করতে পারিনি কারণ সরকার ফেসবুক, টিকটক এবং অন্যান্য অ্যাপগুলিকে সীমাবদ্ধ করে রেখেছে। আমি খুবই অসহায় বোধ করছি আমার গ্রাহকদের সাথে কোন যোগাযোগ করতে না পেরে। এটা আমার জন্য অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যবসা এবং গ্রাহকদের সাথে পুনঃসংযোগ করা।
কুঞ্জ নামে একটি ফেসবুক ভিত্তিক জুয়েলারি দোকানের মালিক নাবিল আহমেদ তিনি বলেন, আন্দোলন শুরু হলে অর্ডার এবং ডেলিভারি সিস্টেম উভয়ই ব্যাহত হয়। গ্রাহকরা ফোনে অভিযোগ করেছেন যে তারা পার্সেল পাননি এবং আমরা আমাদের বকেয়া টাকাও পাইনি।
"বিক্ষোভের কারণে আমার ৩০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। একজন ছোট এফ-কমার্স ব্যবসার মালিক হিসাবে সঠিক সময়ে পণ্য বা সেবা দিতে না পারায় বড় ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।
ফেসবুক ভিত্তিক ৪ লাখ ব্যবসায়ীর মধ্যে প্রায় ২০০ জন ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) সাথে যুক্ত। তাদের মতে ফেসবুক পেজের মালিকরা প্রতি মাসে গড়ে ১০ হাজার টাকা থেকে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারেন।
এফ কমার্স খাতে নারী উদ্যোক্তরা অনেক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে বলে জানিয়েছেন ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার নিশা। তিনি বলেন, পাঁচ লক্ষ নারী-পুরুষ এফ-কমার্সে কাজ করছেন। তারা সবাই এখন আর্থিক ক্ষতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। এটি কাটিয়ে উটতে বেশ বেগ পোহাতে হবে। আমার তাদের নির্ভরতা কমিয়ে- সবার ডাটা সংগ্রহ করে, একটু সময় নিয়ে তাদের ডিজিটালি ট্রান্সফার করতে কাজ করব।
চলমান সংকটে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকা ও অন্যান্য কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ই-কমার্স খাতের ক্ষয়ক্ষতি ও বর্তমান অবস্থা তুলে ধরে তা থেকে উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন এই খাতের উদ্যোক্তারা।
এএইচ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :