• ঢাকা
  • বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫, ১ মাঘ ১৪৩০

আতঙ্কে অফিস করছেন না বিএসইসি চেয়ারম্যান


নিজস্ব প্রতিবেদক আগস্ট ৭, ২০২৪, ০৭:২৮ পিএম
আতঙ্কে অফিস করছেন না বিএসইসি চেয়ারম্যান

ঢাকা: পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম চলতি সপ্তাহে একদিনও অফিস করেননি। সদ্য ক্ষমতা থেকে বিতারিত আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার অত্যন্ত আস্থাভাজন শিবলী রুবাইয়াত জনরোষের ভয়ে অফিস করছেন না বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে। তিনি বাসায় আছেন নাকি অন্য কোথাও আত্মগোপনে গেছেন, সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি।

গত সোমবার (৫ আগস্ট) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রবল গণআন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। এর পরপর দেশের পুরো দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। বিক্ষুব্ধ জনতা আওয়ামীলীগ নেতা ও সরকার ঘনিষ্ট উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তাদের উপর চড়াও হচ্ছেন। পুলিশ, র‍্যাবসহ আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর শীর্ষ কর্তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক কর্মকর্তা ভয়ে পদত্যাগ করছেন।

বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামও ভয়ে আছেন। তার মেয়াদে পুঁজিবাজারে ব্যাপক লুটতরাজ হয়েছে। তার সঙ্গে যোগসাজশ করে হাজার কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান। বাজারে লাগামহীন কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফতুর করে দিয়েছেন আবুল খায়ের হিরো, এনআরবিসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান পারভেজ তমালসহ শিবলীঘনিষ্ট চক্র। পর্ষদ পুনর্গঠনের নামে বিভিন্ন কোম্পানিতে নিজের ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচালক হিসেবে বসিয়ে নতুনভাবে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া; ব্যবসা না করতে পেরে বন্ধ হয়ে যাওয়া কোম্পানিকে নিজের লোকদের হাতে তুলে দিয়ে সেগুলোকে পুনরায় বাজারে নিয়ে এসে বিনিয়োগকারীদের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার সুযোগ করে দেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে টাকা পাচার এবং পাচারকারীদের সহায়তা করারও অভিযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বিভিন্ন দেশে বিনিয়োগ সম্মেলন আয়োজনের অন্যতম লক্ষ্য ছিল এর আড়ালে টাকা পাচারের সুযোগ করে দেওয়া। এসব সম্মেলনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে অংশ নিতেন। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হতেন এক ঝাঁক ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনৈতিক নেতা। প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের কোনো লাগেজ বিমানবন্দরে কাস্টমস পরীক্ষা করে না। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে লাগেজে করে ক্যাশ ডলার পাচার হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারে যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়ে সবচেয়ে বেশি কারসাজি হয়েছে, সেসব কোম্পানি বা তার উদ্যোক্তারা এসব রোড শো স্পন্সর করেছেন। শিবলী রুবাইয়াতের উদ্যোগে সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জাপান, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে রোড শো বা বিনিয়োগ সম্মেলন হয়েছে।

শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম পুঁজিবাজারে যেসব মধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স দিয়েছেন, সেগুলো নিয়েও রয়েছে বিতর্ক। বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাজারকে সবচেয়ে সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর মনে করা হয়। এ বাজার পুরোটাই আস্থার উপর চলে। এ কারণে বাজার সংশ্লিষ্ট কোনো লাইসেন্স দেওয়ার আগে আবেদনকারীর যোগ্যতা, তার ভাবমূর্তি, অতীত রেকর্ড খুব গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়া হয়। কিন্তু এখানে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুই বিবেচনায় নেওয়া হয়নি। বেশিরভাগ লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে আওয়ামীলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এবং তার নিজের ঘনিষ্ট ব্যক্তিদের। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে আর্থিক অপরাধের জন্য শাস্তিপ্রাপ্ত তার বন্ধু জাভেদ মতিন এবং দেশের শেয়ারবাজারে একাধিক কারসাজিতে অভিযুক্ত আবুল খায়ের হিরোর স্ত্রীকে ব্রোকারহাউজের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগ সংক্রান্ত একটি মিটিংয়ের উছিলায় গত মাসের শেষ সপ্তাহে তিনি কানাডা গিয়েছিলেন। গত শনিবার (৩ আগস্ট) রাতে তিনি দেশে ফিরেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিবলীর একজন ঘনিষ্ট ব্যক্তি বলেন, রোববার পর্যন্ত তারা কল্পনাই করেননি, ছাত্রদের আন্দোলনে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হবে। কারণ এর আগে তিনি বিডিআরে হত্যাযজ্ঞসহ অনেক বড় বড় সংকট সামলে উঠেছেন। তারা ভেবেছিলেন, প্রয়োজনে ভারতের সহায়তা নিয়ে হলেও এবারের আন্দোলনকে মাঝপথে থামিয়ে দিতে পারবেন তিনি। এ বিশ্বাসের কারণেই শনিবার শিবলী রুবাইয়াত দেশে ফিরেছেন। নইলে তিনি দেশেই ফিরতেন না।

এএইচ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!