ঢাকা: দেশে চলমান পরিস্থিতিতে ভয়ে বন্ধ অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বাদ পড়েনি বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম বুথও। জরুরি প্রয়োজনেও তুলতে পারছে না টাকা। এছাড়া হাতে গুনা দুই একটা বুথ চালু থাকলেও এক ব্যাংকের কার্ড দিয়ে অন্য ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা দিচ্ছে না। কার্ড পাঞ্চ করলে ডিক্লেইন করে দেওয়া হয়।
জানা যায়, নিরাপত্তার স্বার্থে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এটিএম বুথ বন্ধ রেখেছে ব্যাংকগুলো। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে গ্রাহকদের। টাকা তুলতে অনেককে একাধিক বুথে দৌড়াদৌড়ি করতে দেখা গেছে।
ব্যাংক খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দেশের বেশির ভাগ এটিএমে অর্থ সরবরাহের কাজটি করা হয় তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তৃতীয় পক্ষের এ সেবা বন্ধ রয়েছে। এ কারণে বেশির ভাগ এটিএমে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। তাই বন্ধ হয়ে গেছে দেশজুড়ে বেশির ভাগ ব্যাংকের এটিএম সেবা।
জানা গেছে, টাকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসায় এই সংকট তৈরি হয়েছে। মাঠে সোনালী নিউজের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ব্র্যাক ব্যাংকের এবং ইসলামী ব্যাংকের বুথে অন্য ব্যাংকের কার্ড দিলে তা ক্যান্সেল করে দিচ্ছে। তবে প্রতিটি ব্যাংকের নিজস্ব কার্ড দিয়ে টাকা তুলতে সমস্যা হচ্ছে না। তবে কিছু কিছু জায়গায় পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নিজস্ব ব্যাংকের কার্ডেও টাকা তোলা সম্ভব হচ্ছে না।
অধিকাংশ ব্যাংকের বুথে টাকা নেই নোটিশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। আবার কিছু এটিএম বুথের সামনের দরজা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দারোয়ান বাহিরে পাহারা দিচ্ছে। পাহারাদার একজনের সঙ্গে কথা বললে তিনি সোনালীনিউজকে বলেন, গত তিন দিন ধরে এটিএম বুথে টাকা নেই এজন্য বন্ধ রাখা হয়েছে।
টাকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান সিকিউরেক্স লিমিটেডের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছি আমরা। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী এটিএম বুথগুলোতে টাকা সরবরাহ করতে পারছি না। চারটি ব্যাংকের এটিএম বুথে আমরা প্রতিদিন প্রায় ৩০ কোটি টাকা সরবরাহ করি। কিন্তু গত বৃহস্পতিবার মাত্র ১০ কোটি টাকা দিতে পেরেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘গত দুই-তিন দিন ধরে আমি ৫০ থেকে ৬০ কোটি টাকা সরবরাহ করছি। কিন্তু পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সারা দেশে প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা সরবরাহ করে আমাদের কোম্পানি।
জানা যায়, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ডাকাতির ভয়ে শুধু সিকিউরেক্স নয়, সব টাকা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানই এই সমস্যার মধ্যে রয়েছে।’
এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের সীমা আরোপ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এক হিসাব থেকে এক লাখের বেশি টাকা উত্তোলন করা যায়নি। তবে এ সিদ্ধান্ত শুধু বৃহস্পতিবারের জন্য প্রযোজ্য ছিল বলে ব্যাংকগুলোকে খুদে বার্তা দেওয়া হয়।
এদিকে অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এবং ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম আর এফ হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে খুদে বার্তার মাধ্যমে এক লাখ টাকার বেশি উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
তা ছাড়া যোগাযোগব্যবস্থা পুরোপুরি ঠিক না হওয়ায় ব্যাংকগুলোতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদা মতো পর্যাপ্ত ক্যাশ সাপোর্ট দিতে পারছে না। ব্যাংকের শাখাগুলোও এটিএম বুথে পর্যাপ্ত টাকা পৌঁছাতে পারছে না। এ কারণেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক এক দিনের জন্য ব্যাংক থেকে টাকা তোলার ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক লাখ টাকার সীমাবদ্ধতা আরোপ করেছে।
এটিএম বুথে টাকা না তুলতে পেরে ছুটোছুটি করতে দেখা গেছে অনেককে। এক বুথ থেকে অন্য বুথে গিয়েও টাকা তুলতে পারেনি তারা। এত হয়রানিতে ক্ষিপ্ত তারা। মাসের শেষে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে অনেককে বাসা ভাড়াসহ বিভিন্ন বিল পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু একদিকে ব্যাংক থেকে বেশি টাকা তুলতে নিষেধাজ্ঞা অন্য দিকে এটিএম বুথে টাকা নেই তাই বিপাকে পড়তে হচ্ছে সবাইকে। সবার প্রত্যাশা এই সংকটের দ্রুত সমাপ্তি হোক।
নগদ এক লাখের বেশি উত্তোলন শুরু রোববার থেকে: বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, নগদ টাকা তোলার জন্য এক লাখ টাকার যে সীমাবদ্ধতা ছিল তা আজই শেষ। আগামী কর্মদিবস থেকে এই সীমাবদ্ধতা আর থাকবে না। শুক্র ও শনিবার ব্যাংক বন্ধ থাকায় রোববার থেকে চাইলে এক লাখ টাকার বেশি নগদ উত্তোলন করা যাবে।
এআর