ঢাকা: দেশে ২০০৮ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে ৯২ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ আত্মসাৎ হয়েছে বলে জানিয়েছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ বা সিপিডি জানিয়েছে। গত ১৫ বছরে ব্যাংক খাতে ২৪টি বড় কেলেঙ্কারির মাধ্যমে এই অর্থ হাতিয়ে নেওয়া হয় বলে জানায় সংস্থাটি।
সোমবার (১২ আগস্ট) এক গবেষণাপত্রে সিপিডি এসব তথ্য জানিয়েছে। গত ১৬ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের সময়ে দেশের আর্থিক খাতের অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা নিয়ে এই গবেষণাপত্রটি প্রকাশ করা হয়।
সিপিডি জানায়, আত্মসাৎ হওয়া অর্থের পরিমাণ চলতি অর্থবছর বা ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটের ১২ শতাংশ এবং দেশের মোট জিডিপির দুই শতাংশের সমান।
সংস্থার নির্বাহী পরিচালক এবং এ রিপোর্টের যৌথ গবেষক ফাহমিদা খাতুন বলেন, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত এ সময়ে ধুঁকতে থাকা ব্যাংকগুলোর পুঁজির যোগান দিতে সরকারকে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে।
গ্লোবাল ফাইনানন্সিয়াল ইন্টেগ্রিটির এক রিপোর্টের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০০৭ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত দেশ থেকে ৪৭০০ থেকে ৬৭০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ অবৈধভাবে পাচার করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের ব্যাংক খাতে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে বহু অনিয়ম করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা হয়েছে, অ্যানন টেক্স গ্রুপ নামে এক প্রতিষ্ঠানকে ১০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে জনতা ব্যাংক, যা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকটির মোট পুঁজির এক চতুর্থাংশের বেশি। আবার ২০১৭ সালে দেশের একটি মাত্র ব্যবসায়িক করপোরেশন রাজনৈতিক প্রভাবে সাতটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের মালিকানা বা নিয়ন্ত্রণ নেয়।
মৃতপ্রায় ব্যাংকগুলোর বর্তমান ব্যবস্থাপনায় ও পরিচালক পর্ষদে বদল করার পরামর্শ দিয়ে ফাহমিদা খাতুন বলেন, অনেক ব্যাংক ক্লিনিক্যালি ডেথ হয়ে গেছে। এসব ব্যাংক আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না। স্বাভাবিকভাবে এদের মরে যেতে দেওয়া দরকার। সরকার এসব ব্যাংকগুলোকে অর্থ দিয়ে, মূলধন দিয়ে পুনর্ভরণ করে চালাচ্ছে।
ফাহমিদা খাতুন বলেন, ব্যাংকগুলোর ২০২১ সালের প্রতিবেদন অনুযায়ী ১১টি ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানদণ্ড ব্রাসেল নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারেনি। তৃতীয় ও চতুর্থ প্রজন্মের ব্যাংকগুলো ক্লিনিক্যালি ডেথ হয়ে গেছে। এক সময়ে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ভালো ব্যাংক ছিল। এটিকে দখলের পরে মুমূর্ষু হয়ে গেছে।
ব্যাংকিং খাতের সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানে তিন মাসের জন্য জন্য ব্যাংকিং কমিশন গঠন করার সুপারিশ করে সিপিডি বলেছে, ব্যাংক খাতে দ্বৈত প্রশাসন কমাতে অর্থমন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ বন্ধ করতে হবে। এ বিভাগের জন্য সরকারি ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে নেই।
এমএস
আপনার মতামত লিখুন :