ঢাকা : বেক্সিমকোর তালিকাভুক্ত সব কোম্পানির শেয়ার দরে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ফ্লোরে আটকে আছে বাংলাদেশ এক্সপোর্ট ইমপোর্ট কোম্পানির (বেক্সিমকো) শেয়ার দর। এর ফলে বর্তমান দর ১১৫ টাকা ৬০ পয়সার চেয়ে বেশি কমার কোনো সুযোগ নেই। আর এই দরের চেয়ে বেশি দাম দিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার কেনার গ্রাহকই নেই বর্তমানে।
এই গ্রুপের অপর দুই কোম্পানি শাইনপুকুর সিরামিকস ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ারের দাম প্রায় প্রতিদিনই কমেছে। বেশিরভাগ দিন সার্কিটব্রেকারের সর্বোচ্চ সীমা পর্যন্ত (৩%) দর হারিয়েছে কোম্পানি দুটির শেয়ার। স্বাভাবিক সমযের সার্কিটব্রেকার (১০%) থাকলে হয়তো শেয়ারগুলোর দাম আরও বেশি কমে যেতো।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
সূত্র মতে, চলতি মাসের প্রথম ১১ কার্যদিবসে শাইনপুকুর সিরামিকসের শেয়ারদর কমেছে ৭ টাকা ৩০ পয়সা (২২.৬৭%)। এ সময়ে প্রতিদিনই শেয়ারের দর হারিয়েছে কোম্পানিটি। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে (১৫ আগস্ট) কোম্পানিটির শেয়ার দর ৭০ পয়সা (২.৭৩%) কমে সর্বশেষে ২৪ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর আগে গত ১ আগস্ট কোম্পানিটির শেয়ার দর ছিলো ৩২ টাকা ২০ পয়সা।
অপরদিকে বেক্সিমকো ফার্মসিটিক্যালসের শেয়ারে টানা ৯ কার্যদিবস দর পতন হয়ে। এরপর গত ১৪ আগস্ট সামান্য উত্থানের পরের দিন (১৫ আগস্ট) আবারও শেয়ার দরে পতন হয়। সবমিলিয়ে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এ কোম্পানির শেয়ার দর কমেছে ২৩ টাকা (২১.২১%)। গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বেক্সিমকো ফার্মসিটিক্যালসের শেয়ারদরে পতন হয়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা (২.৯৫%)। সর্বশেষ কোম্পানিটির শেয়ার দর দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা ৪০ পয়সা।
শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন সালমান এফ রহমান। দরবেশ খ্যাত এই মানুষটির নামে গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে। ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ফেরত না দেওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি করে দেশে টাকা না আনার অভিযোগও রয়েছে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত তার মালিকানাধীন বেক্সিমকো গ্রুপের বিরুদ্ধে।
২০০৬-২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলেও ঋণখেলাপিসহ নানা অভিযোগে জেলে গিয়েছিলেন সালমান এফ রহমান। এরপর জেল থেকে বের হয়ে নাম জড়ান ২০১০-১১ সালের পুঁজিবাজার কেলেঙ্কারিতে। এতকিছুর পরও তাকে স্পর্শ করার সাহস হয়নি কারও।
গত ১৫ বছরে আর্থিক খাতে নজিরবিহীন দুর্নীতি, লুটপাট, জালিয়াতি ও টাকা পাচারের অভিযোগ রয়েছে সালমান এফ রহমানের বিরুদ্ধে। জানা গেছে- বিগত বছরগুলোর পুঁজিবাজারের প্রত্যেকটি বড় কেলেঙ্কারিতে সালমান এফ রহমান জড়িত। প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তিনি পুঁজিবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন।
২০১০-১১ সালে শেয়ার বাজার ধসের পর এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছিল। কমিটির প্রধান ছিলেন খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। সেই রিপোর্টে পুঁজিবাজারে ফিক্সড প্রাইস, বুক-বিল্ডিং, রাইট শেয়ার, ডিরেক্ট লিস্টিং, সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন, প্রেফারেন্স শেয়ারসহ সব ক্ষেত্রেই অনিয়ম হওয়ার এবং এর সঙ্গে সালমান এফ রহমানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়। তাই খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ সেই রিপোর্টে সালমান এফ রহমান থেকে পুজিবাজারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন।
মূলত ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর একদম বেপরোয়া হয়ে ওঠেন সালমান এফ রহমান। শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক, ব্যবসায়ী নেতার পর ২০১৮ সালে এমপি ও টানা দুইবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হন তিনি।
এমটিআই