ঢাকা: দেশে বন্যায় ফেনী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালীসহ ১১ জেলার লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় আছেন। বন্যার্তদের সহায়তায় বিভিন্ন ধরনের সংগঠন, সমিতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ফলে শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় কিছু পণ্যের বেচাবিক্রি ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। এ সুযোগে কয়েকটি পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যার্তদের সহায়তার জন্য তিন দিন ধরে চিড়া, মুড়ি, গুড়, বিস্কুট, মোমবাতি, ম্যাচ, ওরস্যালাইন, বোতলজাত পানি, লাইফ জ্যাকেট ইত্যাদি পণ্যের চাহিদা বেড়েছে। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় প্রতি কেজি চিড়ার দাম পাইকারি পর্যায়ে ৬–৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। মুড়ির দাম বেড়েছে কেজিতে ৪–৫ টাকা। এক ডজন মোমবাতির দাম ২০ টাকার বেশি বেড়েছে। তারপরও অধিকাংশ দোকানে পণ্যটি মিলছে না।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারে গতকাল শুক্রবার সকাল থেকেই বন্যার্তদের সহায়তায় শুকনা খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট দল ভিড় করতে থাকে। এক দল পণ্য কিনে ভ্যান বা পিকআপে তুলে নিয়ে যাচ্ছে তো আরেক দল পণ্য কিনতে আসছে। এ অবস্থা বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলতে থাকে।
গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের নিচতলায় গিয়ে দেখা, চিড়া-মুড়ির দোকানে বেশ ভিড়। এক দোকানে ৫০০ কেজি মুড়ি আর ৫০০ কেজি চিড়া কিনতে এসেছেন দুজন ব্যক্তি। তবে ব্যবসায়ী রমজান আলী ক্রেতাদের বলেন, এখন চিড়া-মুড়ি কোনটাই নেই। তাঁদের সন্ধ্যার পর যোগাযোগ করতে বলেন এই ব্যবসায়ী।
জানতে চাইলে এক বিক্রেতা বলেন, তিন দিন ধরে ক্রেতাদের চাপ বেশি। গাড়ি আসার সঙ্গে সঙ্গে সব চিড়া-মুড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। তবে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য না আসায় অনেক ক্রেতাকেই ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে। তারপরও গত তিন দিনে প্রায় ২০ টন চিড়া-মুড়ি বিক্রি করেছেন বলে জানান তিনি।
চিড়া বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ভাই ভাই ট্রেডার্সের সামনে বেশ কয়েকজন ক্রেতার ভিড় দেখে এগিয়ে যাই। ক্রেতারা চিড়া কিনতে চাইলেও দোকানের স্বত্বাধিকারী মনির হোসেন বলছেন, আপাতত নেই। গাজীপুরের মিল থেকে চিড়ার গাড়ি এলে দিতে পারবেন।
জানতে চাইলে মনির হোসেন বলেন, গতকাল সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ৫০ বস্তা (প্রতি বস্তায় ২৫ কেজি) চিড়া বিক্রি করেছেন। চাহিদা থাকায় মিলমালিকেরা চিড়ার দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, গত সপ্তাহে প্রতি কেজি চিড়া ৫৬ টাকায় কিনেছেন। এখন ৬২-৬৩ টাকায় কিনতে হচ্ছে। গাড়ি ভাড়া বাবদ প্রতি কেজিতে ২ টাকা খরচ আছে। সে কারণে চিড়ার কেজি ৬৮–৭০ টাকা বিক্রি করতে হচ্ছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী বন্যার্তদের সহায়তা ১০০ কেজি মুড়ি, ১০০ কেজি চিড়াসহ অন্যান্য পণ্য কিনতে কারওয়ান বাজারে আসেন। তাঁদের একজন তানজিরুল হক অভিযোগ করে বলেন, ‘মুড়ি কিনতে পারলেও চিড়া কিনতে পারেননি। দোকানদারেরা বলছেন, চিড়া নেই। তবে কর্মচারীদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারছি, গুদামে চিড়া আছে। দাম বেশি নেওয়ার জন্য দোকানদারেরা বলছেন চিড়া নেই।’
কিচেন মার্কেটের দোতলা গিয়ে দেখা যায়, বিস্কুট, ওরস্যালাইন, মোমবাতি, ম্যাচ ইত্যাদি পণ্য কিনতে কমবেশি প্রতিটি দোকানেই ক্রেতাদের ভিড়। যদিও অধিকাংশ দোকানি মোমবাতি দিতে পারছেন না। একটি দোকানে দেখা গেল মোমবাতি আছে, তবে দাম বেশি।
ব্যবসায়ী মো. আতিক বলেন, ‘দু–এক দিন আগেও এক ডজন মোমবাতির দাম ছিল ৭০ টাকা; কিন্তু এখন ৯০ টাকা দিয়েও কোম্পানি থেকে মোমবাতি পাচ্ছি না।’ তিনি আরও বলেন, মোমবাতি খুবই স্লো আইটেম (কম বিক্রীত পণ্য)। তাই অধিকাংশ দোকানে নেই।
এএইচ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :