হিলি: ভারতে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারনে ও লোকসানের আশঙ্কায় হিলি স্থল বন্দরের আমদানি রফতানি কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়েছে। কমেছে ভারত থেকে পণ্যের আমদানি। কয়েকমাস আগেও হিলি বন্দর দিয়ে ১২০ থেকে ১৫০ ট্রাকে পন্য আমদানি হলেও, বর্তমান তা ৩০ থেকে ৪০ ট্রাকে আমদানি হচ্ছে। এদিকে বন্দরে কাজকর্ম কমে যাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন শ্রমিকরা। ব্যবসায়ীরা জানান, ভারত থেকে পণ্য আমদানি করে লোকশান গুনতে হচ্ছে, তাই আমদানি করতে অনীহা করছেন তারা। তাছাড়া ভারতে পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ও অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের কারনে আমদানি কমেছে বলে জানান তারা। ব্যবসায়ীরা আরও জানান, আগামীতে আমদানি রপ্তানি স্বাভাবিক না হলে দেশের নিত্যপণ্যের বড় ধরনের সংকট দেখা দেবে। এতে করে ঊর্ধ্বগতি হতে পারে দ্রব্যমূল্যের দাম।
মাস দুয়েক আগেও হিলি স্থল বন্দরে দৈনিক ১২০ থেকে ১৫০টি ট্রাক প্রবেশ করলেও এখন সেটি দাঁড়িয়েছে ৩০ থেকে ৪০টি ট্রাকে। অন্যান্য সময়ের তুলনায় অনেকটাই কমে গেছে পাইকারি ব্যবসায়ীদের সংখ্যা। আগে প্রতিদিন সকাল ১০টার পর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে দুদেশের শ্রমিক- কর্মচারী এবং পাইকারদের হাঁকডাকে সরগরম থাকতো এই বন্দর। বর্তমানে আমদানি কম হওয়ায় পণ্য কিনতে আসে না পাইকাররা। ফাঁকা পড়ে আছে গোটা বন্দরের জায়গা। বন্দরের অভ্যন্তরে আমদানিকারকদের মধ্যে কর্ম ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যায় না। এদিকে আগে যেসব পণ্য আমদানি হতো তার মধ্যে অধিকাংশই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য যেমন পেঁয়াজ, আদা, রসুন, কাঁচা মরিচ ও আলুসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। সেসব পণ্যতে ভারতে শুল্ক বৃদ্ধির ফলে অনেকটাই কমে গেছে আমদানি। এতে বিপাকে পড়েছেন আমদানিকারকসহ পানামা কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভাটা পড়া আমদানি-রপ্তানিতে প্রাণ ফেরানো নিয়ে দেখা দিয়েছে নতুন শঙ্কা। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর গঠিত হয়েছে অন্তবর্তী সরকার। এদিকে হিলি সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনেরও নতুন কমিটি গঠন করেছেন। সেই কমিটি হিলি স্থলবন্দরে আমদানি রপ্তানি গতিশীল করতে এতিমধ্যে গণমাধ্যমদের সাথে মতবিনিময় ও ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছেন।
ভারতীয় ব্যবসয়ীরা জানান, হিলি স্থলবন্দরে বর্তমান আমদানি রপ্তানি তলানিতে নেমেছে সেহেতু আমরা উভয় পক্ষ মিলে কিভাবে এই বন্দর দিয়ে ব্যবসা বাড়ানো যায় সেই বিষয়ে আলাপ আলোচনা কিংবা বৈঠক করছি। যাতে করে আগামীতে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি আগের মতো গতিশীল হয়। আমরা চাই হিলি আমাদের প্রাণকেন্দ্র আবার ফিরে আসুক।
হিলি সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন সভাপতি ফেরদৌস রহমান জানান, আমরা এতোমধ্যে কমিটির নতুন সদস্য হয়েছি, আমরা হিলি স্থলবন্দরের কার্যক্রম স্বাভাবিক করতে গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে বৈঠক করেছি এবং সেই সাথে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠকও করেছি। কিভাবে আমরা হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আগের মতো আমদানি রপ্তানি বাড়ানো যায় সেদিকে চেষ্টা করছি। আমদানি রপ্তানি গতিশীল হলে এই হিলির কর্মসংস্থান ফিরে পাবে এবং শ্রমিক, চালক, হেলপারসহ ব্যবসায়ীদের মাঝে চাঞ্জল্য ফিরে আসবে।
হিলির আমদানিকারকরা জানান, ভারতে পণ্যের দাম বৃদ্ধি ও অতিরিক্ত শুল্কর ফলে পণ্য আমদানি করে লোকশান গুনতে হচ্ছে বলে জানান তারা। বিগত কয়েকমাস থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আমদানি রপ্তানি অনেকটাই কমে গেছে। এতে করে শ্রমিক, ব্যবসায়ীরা দেওলিয়া হয়ে গেছে। যদি বর্তমান আমদানি-রপ্তানি গতিশীল না করা হয় তাহলে দেশের মধ্যে একটা বড় প্রভাব পড়বে।বিশেষ করে পেঁয়াজ ও কাঁচামালের দাম ঊর্ধ্বগতি হয়ে যাবে। যদি ভারত সরকার পেঁয়াজের উপর আরোপ করা শুল্ক আরও কমানো হয় তাহলে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানিটা বেড়ে যাবে। এবং দামটাও অনেকটাই কমে আসবে বলে মনে করছেন তারা।
হিলি পানামাপোর্টের কয়েকজন শ্রমিক বলেন, এদিকে আমদানি রপ্তানি কমে যাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাদের। আগে বন্দরের ৪ থেকে ৫ টি পণ্যবাহী ট্রাক খালাস করলেও, এখন সারাদিনে মাত্র একটি ট্রাক খালাস করছেন তারা। এতে করে আগে সারাদিনে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করলেও এখন আয় হচ্ছে মাত্র ৫০ থেকে ৬০ টাকা। এতে করে পরিবার পরিজন নিয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের।
বন্দর কর্তৃপক্ষ বলছেন, হিলি স্থলবন্দরে ঝিমিয়ে পড়া আমদানি-রপ্তানী দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক না হলে বড় প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। পাশাপাশি বন্দরের কার্যক্রম গতিশীল হলে জীবিকা নিয়ে ভোগান্তির শেষ হবে শ্রমিক থেকে শুরু চালক-হেলপার, দোকানী ও পানামা পোর্টের কর্মচারিদের, এমনটাই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এসএস