ঢাকা: বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মানে সুশাসন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন একটি বিশেষ টাস্কফোর্স গঠন করেছে।
টাস্কফোর্সের সদস্যরা হলেন, ডঃ মোহাম্মদ হেলাল উদ্দীন, অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়; কে এ এম মাজেদুর রহমান, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসি; এ এফ এম নেসার উদ্দীন, এফসিএ, এফসিএস, সিনিয়র পার্টনার, হুদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোং; ডঃ মো: মোস্তফা আকবর, অধ্যাপক, সিএসই বিভাগ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়; আল-আমিন, সহযোগী অধ্যাপক, একাউন্টিং ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
এদের মধ্যে মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, কেএএম মাজেদুর রহমান ও এএফএম নেসার উদ্দিনকে সম্প্রতি ডিএসইর স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল বিএসইসি। তবে তারা স্টক এক্সচেঞ্জটির পর্ষদে অযোগ্য হয়ে পড়ায় যোগদানের আগেই বাদ পড়েছেন।
টাস্কফোর্স অবিলম্বে কার্যক্রম শুরু করবে এবং সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের মতামত বিবেচনাপূর্বক একটি যৌক্তিক সময়ে প্রস্তুতকৃত প্রতিবেদন (বিদ্যমান কাঠামো পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় সংশোধনী প্রস্তাব, প্রযোজ্য ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীতকরণের নিমিত্ত সুপারিশ প্রদান-সহঅন্যান্য বিষয়াদি) বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নিকট হস্তান্তর করবে;
টাস্কফোর্সের কার্যালয় টাস্কফোর্সের সুপারিশের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত হবে;
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-সহ পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান যেমনঃ ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএল-সহবাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং অন্যান্য পক্ষসমূহ টাস্কফোর্সের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সরবরাহসহ সকল ধরণেরসহযোগিতা প্রদান করবে;
পরবর্তীতে কমিশন প্রয়োজনে উপযুক্ত ব্যক্তিকে টাস্কফোর্সের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে;
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন এ টাস্কফোর্সকে সাচিবিক সহায়তা প্রদান করবে;
ফোকাস গ্রুপ গঠন: টাস্কফোর্সের অধীনে বিভিন্ন ইস্যুভিত্তিক ফোকাস গ্রুপ থাকবে। প্রতিটি ফোকাস গ্রুপ নির্দিষ্ট বিষয়ে কাজ করবে এবং সংশ্লিষ্টবিষয়ে টাস্কফোর্সকে সুপারিশ প্রদান করবে। উল্লেখ্য, কমিশন অবহিত করে টাস্কফোর্স উপযুক্ত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ফোকাস গ্রুপ গঠন করবে।
টাস্কফোর্সের গঠন: বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক উন্নয়ন, বিনিয়োগকারীদের আস্থা বৃদ্ধি, পুঁজিবাজারের আন্তর্জাতিক মানের সুপারিশ অর্জনের লক্ষ্যে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ, পুঁজিবাজারের অংশীজনদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংগঠন (ডিবিএ, বিএমবিএ, এসিআরএবি, বিএপিএলসি), অর্থনীতিবিদ, পেশাদার(চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টেন্ট, চার্টার্ড সেক্রেটারি প্রভৃতি), বিনিয়োগকারী ইত্যাদি ব্যক্তিবর্গের সুচিন্তিত মতামত ও সুপারিশের ভিত্তিতে বিএসইসি 'পুঁজিবাজার সংস্কার টাস্কফোর্স' গঠন করেছে।
এই টাস্কফোর্সের মাধ্যমে বাজারের প্রধান প্রধান দিকগুলো বিশ্লেষণ, প্রয়োজনীয় সংস্কার, পরিকল্পনা এবং বাস্তবায়নের জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করা হবে। বর্তমান বাজারের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং একটি টেকসইপুঁজিবাজার গঠনের জন্য এই টাস্কফোর্স অপরিহার্য।
দক্ষ পুঁজিবাজার বিশেষজ্ঞ ও বিশ্লেষক, অর্থনীতিবিদ, শিক্ষাবিদ, নিরীক্ষক, প্রযুক্তিবিদ ইত্যাদি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রের কাজের অভিজ্ঞ সদস্যদের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হ'ল। পরবর্তীতে কমিশন টাস্কফোর্সের আকার ও পরিধি চাহিদা অনুযায়ী পরিবর্তন করতে পারবে। টাস্কফোর্সের অধীনে গঠিত ফোকাস গ্রুপে পুঁজিবাজারের বিশেষজ্ঞ এবং পরামর্শক, নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিনিধিরা, বাজার মধ্যস্ততাকারী প্রতিষ্ঠানের দক্ষ পেশাজীবী, শিক্ষাবিদ,সাংবাদিক, বিশ্লেষক এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডার-সহ অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন।
টাস্কফোর্সের কার্যপরিধি:
১. বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের আকার তথা 'জিডিপি ও বাজার মূলধন'-এর অনুপাত কম হওয়ার প্রধান কারণগুলো চিহ্নিত করে উত্তরণের জন্যসরকারের আর্থিক খাতের নীতি প্রণয়নের প্রস্তাবনা;
২. দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়নে ব্যাংক ঋণের পরিবর্তে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়নের জন্য সরকারের আর্থিক নীতি প্রণয়ন ও নীতি নির্ধারণী সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে কমিশনের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন করা;
৩. আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী পুঁজিবাজারের সুশাসন উন্নীতকরণের লক্ষ্যে পুঁজিবাজারের বর্তমান পরিস্থিতি এবং প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো বিশ্লেষণকরা ও সমাধানের সুপারিশমালা প্রণয়ণ ;
৪. বিএসইসি'র প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, অভ্যন্তরীণ সুশাসন, অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমে প্রযুক্তি ও অটোমেশনের প্রয়োগ, তথ্যের গোপনীয়তারক্ষায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, সংবিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য উন্নত ওউন্নয়নশীল দেশের পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ প্রশাসনিক কাঠামোর সুপারিশ, মানব সম্পদের দক্ষতা বৃদ্ধি, কমিশনেরকর্মকর্তাদের দক্ষতা উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ, শিক্ষা, সেমিনার, কর্মশালায় অংশগ্রহণ-সহঅভ্যন্তরীণ অন্যান্য বিষয়ে সুপারিশ প্রদান;
৫. ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএল, সিসিবিএল-এর তদারকি কার্যক্রম বিশ্বমানে উন্নীতকরণ-সহ উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা,প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন;
৬. প্রাইভেট প্লেসমেন্ট/অফার-এর মাধ্যমে ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইস্যু অফ ক্যাপিটাল) রুলস,২০০১ যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন;
৭. তালিকাভুক্ত কোম্পানির স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন, কর্পোরেট ডিজক্লোজার, নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের সঠিকতানিশ্চিতকরণ-সহ কর্পোরেট গভর্ন্যান্স, বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা এবং বাজারের গভীরতা বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় নীতি প্রণয়ন;
৮. ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যুর আবেদনের ক্ষেত্রে দাখিলকৃত তথ্য-উপাত্ত, দলিল-দস্তাবেজ, সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন প্রতিবেদন, নিরীক্ষিতআর্থিক প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য বিষয়ে প্রস্তুতকারী পক্ষসমূহ যেমন: ইস্যুয়ার কোম্পানি, ইস্যু ম্যানেজার ও আন্ডার রাইটার (মার্চেন্টব্যাংকার), ভেল্যুয়ার এবং অডিটরসহ অন্যান্য পক্ষসমূহের দায়দায়িত্ব ও সুনির্দিষ্ট শান্তির বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়ন;
৯. বাজার মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানসমূহের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, প্রাতিষ্ঠানিক সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে এতদৃসংশ্লিষ্ট বিধিমালা যেমনঃসিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মার্চেন্ট ব্যাংকার ও পোর্টফোলিও ম্যানেজার) বিধিমালা, ১৯৯৬, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (স্টক-ডিলার, স্টক ব্রোকার ও অনুমোদিত প্রতিনিধি) বিধিমালা, ২০০০, সিকিউরিটিজ ও এক্সচেঞ্জ কমিশন (মিউচ্যুয়াল ফান্ড) বিধিমালা, ২০০১ সহসংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন;
১০. ডেট ও ইক্যুইটি সিকিউরিটিজ ইস্যু সংক্রান্ত বিধি-বিধানের যেমনঃ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (পাবলিক ইস্যু) রুলস২০১৫, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (রাইট ইস্যু) রুলস, ২০০৬, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ডেট সিকিউরিটিজ),রুলস ২০২১, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (ইনভেন্টমেন্ট সুকুক), রুলস ২০১৯, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (সম্পদভিত্তিক সিকিউরিটি ইস্যু) বিধিমালা, ২০০৪-সহ সংশ্লিষ্ট বিধিমালা যুগোপযোগীকরণের সুপারিশ প্রণয়ন;
১১. বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ ও আস্থা বৃদ্ধির লক্ষ্য স্টেকহোল্ডারদের সাথে নিয়মিত পরামর্শ ও সমন্বয় এর গাইডলাইন এবং প্রয়োজনীয়সুপারিশ প্রণয়ন;
১২. বাজারে কারসাজি, সুবিধাভোগী ব্যবসায় লেনদেন ও অন্যান্য অনিয়মের বিচার ও জরিমানায় সমতা আনয়নের জন্য বিদ্যমান আইনের শান্তিরধারার অধীনে একটি সুনির্দিষ্ট পেনাল কোড বা শাস্তির বিধিমালা প্রণয়ন করা;
১৩. মার্জিন রুলস, ১৯৯৯ যুগোপযোগীকরণ-সহ, বিদ্যমান ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল এবং আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স ও বিজনেস ইন্টেলিজেন্সমডিউল সমৃদ্ধ বিশ্বমানের অনলাইন ও অফলাইন সার্ভেইল্যান্স সিস্টেম বা বাজার তদারকি ব্যবস্থার কার্যকারিতা নিরুপণ ও প্রয়োজনীয় সংস্কারেরসুপারিশ প্রণয়ন;
১৪. বর্তমান বাজার কাঠামো-এর মূল্যায়ন, বাজারের গভীরতা, তারল্য ও পণ্য বৈচিত্র্য-কে বিবেচনাপূর্বক দেশীয় ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদেরকিভাবে আরো আকৃষ্ট করা যায় সেই কৌশল প্রণয়নে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রদান;
১৫. পুঁজিবাজারের কার্যক্রমে অটোমেশন বৃদ্ধির মাধ্যমে পুঁজিবাজারের সুশাসন এবং বিনিযোগকারীদের আস্থা পুনরুদ্ধার করার লক্ষ্যে প্ৰযুক্তিগতউদ্ভাবন ও উন্নয়ন এবং পুঁজিবাজার উপযোগী ফিনটেক টেকনোলজি প্রচলন এবং পুঁজিবাজারের প্রযুক্তিগত সংবেদনশীলতা বিবেচনায় নিয়ে সাইবারসিকিউরিটি নিশ্চিত করার জন্য সুপারিশ প্রণয়ন;
১৬. নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর (বিএসইসি, বাংলাদেশ ব্যাংক, আইডিআরএ, এমআরএ, এনবিআর, আরজেএসসি ইত্যাদি) সাথে সমন্বয় সাধনের উপায় নির্ধারণে একটি স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং পদ্ধতি (SOP) বা নির্দেশিকা প্রণয়ন;
১৭. তালিকাভুক্ত কোম্পানির সাথে অতালিকাভুক্ত কোম্পানি বা তালিকাভুক্ত কোম্পানির মার্জার, অ্যামালগামেশন, একুইজেশন এর মাধ্যমে কোনশেয়ার ইস্যু সংক্রান্ত বিষয়ে মহামান্য হাইকোর্টে এতদসংক্রান্ত স্কীম অনুমোদনের পূর্বে বিএসইসি হতে অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বিষয়ে সুপারিশমালা প্ৰণয়ন;
১৮. এছাড়াও টাস্কফোর্সের সাথে আলোচনার মাধ্যমে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি সমন্বয়/সংযোজন করা যাবে;
এএইচ/আইএ
আপনার মতামত লিখুন :