ঢাকা : ডিমের দাম নিয়ে অস্থিরতার মধ্যে পণ্যটির আমদানি শুল্ক কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দ্রব্যমূল্যকে সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে আসতে বিশেষ করে ডিমের দাম এই মুহূর্তে ঊর্ধ্বমুখী…আজকে কয়েকটা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ডিমের আমদানি শুল্ক ৩৩ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনা অর্থাৎ ২০ শতাংশ আমদানি শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভোজ্য তেলের আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমিয়ে আনা এবং উৎপাদন ও সরবরাহ পর্যায়ে মূল্য সংযোজন কর প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
ভোক্তা অধিকার কার্যালয়ে ডিম সরবরাহকারী এবং আড়তদার সঙ্গে বৈঠক হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে আড়তদাররা সরাসরি খামারিদের কাছ থেকে ডিম কিনবেন, যাতে করে ডিমের দাম কিছুটা কমে আসে, সহনীয় পর্যায়ে নেমে আসে।
এছাড়াও কৃষি বিপণন অধিদপ্তর রাজধানীর ২০টি স্পটে প্রাথমিকভাবে সুলভ মূল্যে দশটি পণ্য বিক্রি শুরু করেছে। এই পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে আলু, পেঁয়াজ, সবজি, কাচা পেঁপে ইত্যাদি। পরবর্তীতে অন্যান্য স্পটে এই কার্যক্রম সম্প্রসারণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে এনবিআরের একজন কর্মকর্তাও বলেন, এ বিষয়ে মৌখিক আলোচনা শুনেছি। অচিরেই ফাইল প্রস্তুত করা শুরু হবে।
দেশে ডিমের দাম প্রায় দুই সপ্তাহ ধরেই তেজিভাব বিরাজ করছে। খুচরা বাজারে প্রতিটি ১৫ টাকার নিচে ডিম কেনা যাচ্ছে না। সরকারি অনুমোদন নিয়ে ভারত থেকে সম্প্রতি কয়েক লাখ ডিম আমদানি হয়েছে; যার প্রতিটির দাম পড়েছে ৫ টাকা ৭০ পয়সা। ৩৩ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হয়েও ডিমের আমদানি মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রতিটি ৭ টাকার কাছাকাছি।
তবে দৈনিক প্রায় ৫ কোটি ডিমের চাহিদার মধ্যে আমদানি করা এই ডিম তেমন প্রভাব রাখতে পারছে না।
এই পরিস্থিতিতে আমদানি উৎসাহিত করতে শুল্ক কমানোর উদ্যোগ নিল সরকার।
যৌক্তিক মূল্যে ডিম বিক্রির সিদ্ধান্ত : এদিকে নিত্যপণ্যের বাজারদর নিয়ে সারাদেশে শোরগোলের মধ্যে গত ১৫ সেপ্টেম্বর ডিম-মুরগির তিন স্তরের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে সরকারি প্রাণি সম্পদ অধিদপ্তর। তবে এই সময়ের মধ্যে এই যৌক্তিক মূল্য আগের চেয়ে বেশি লংঘিত হয়েছে।
অধিদপ্তর প্রতিটি ডিম উৎপাদক পর্যায়ে ১০ টাকা ৫৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১১ টাকা ০১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করেছিল।
সোনালী মুরগি প্রতিকেজি উৎপাদক পর্যায়ে ২৬০ টাকা ৭৮ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ২৬৪ টাকা ৫৭ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৬৯ টাকা ৬৪ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি উৎপাদক পর্যায়ে ১৬৮ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৭২ টাকা ৬১ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৯ টাকা ৫৯ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে।
সরকারি ওই সিদ্ধান্ত প্রতিপালন করতে মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে অংশীজনদের এক সভা হয়। সেখানে আগামী দুই সপ্তাহের জন্য সরকারি যৌক্তিক মূল্য প্রতিপালনের বিষয়ে খামার মালিকরা সায় দিয়েছেন বলে জানায় ভোক্তা অধিদপ্তর।
ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান (ফার্ম ও করপোরেট), এজেন্ট/ডিলার, পাইকারি/খুচরা ব্যবসায়ী, ডিম ব্যবসায়ী সমিতি মতবিনিময় সভায় ছিলেন।
ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান সভায় সভাপতিত্ব করেন।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব শেখ কামরুল হাসান, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সহকারী পরিচালক লোকমান হোসেন, ব্রিডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, কাজী ফার্মের পরিচালক কাজী জাহিন হাসান, কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কোষাধ্যক্ষ মঞ্জুর-ই-খোদা তরফদার, ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি ব্যবসায়ী, ডিম ব্যবসায়ী সমিতি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর সংস্থার প্রতিনিধিরা সভায় ছিলেন।
সভা শেষে মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেন, পরীক্ষামূলকভাবে আগামী দুই সপ্তাহ ডিম উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সরাসরি তেজগাঁও ও কাপ্তান বাজারে ডিলারদের কাছে সরকার নির্ধারিত যৌক্তিক দামে ডিম সরবরাহে একমত হয়েছে।
‘সিন্ডিকেটের সদস্যদের শনাক্তের চেষ্টা চলছে’
তৈরি পোশাক খাতে অসন্তোষের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ প্রেস সচিব আজাদ মজুমদার বলেন, ৯৯ শতাংশ পোশাক কারখানা খোলা রয়েছে। যে দুই-একটি বন্ধ রয়েছে সেগুলো অন্য নানাবিধ কারণে রয়েছে। শ্রমিক অসন্তোষ এখন অনেকটাই প্রশমিত।
ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি হচ্ছে, এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, চাঁদা যেকোনো পর্যায়ে চাওয়াটাই অপরাধের পর্যায়ে পড়ে। কেউ চাঁদা চাইলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করবেন। পুলিশ সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেবে।
পুলিশকে এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, শুধু পোশাকখাত নয়, যেকোনো জায়গায় চাঁদাবাজির ঘটনা ঘটলে সেটি যেন শক্ত হাতে দমন করা হয়। সরকার এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন আছে এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সিন্ডিকেট বিষয়ক এক প্রশ্নে তিনি বলেন, সিন্ডিকেট একটা বিষয় অনেক দিন ধরে এটা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা ভাঙার বিষয়েও চেষ্টা করা হচ্ছে। সিন্ডিকেটের সদস্যদেরও শনাক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
আপনাদের কাছে যদি কোনো তথ্য থাকে সিন্ডিকেটের ব্যাপারে, কারা প্রাইস ম্যানিপুলেট করছে বা কারা প্রাইস মনোপলি পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে, আপনারা যদি সরকারকে এ বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন, সরকার অবশ্যই সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবে। আর কিছু চলমান প্রক্রিয়া তো আছেই, কিছু কিছু পদক্ষেপ রয়েছে। প্রতিদিনই এটা নিয়ে সরকারের নানা পর্যায়ে আলোচনা হচ্ছে। এসব পদক্ষেপ নিয়েই সরকার চেষ্টা করছে দ্রব্যমূল্য যাতে সহনীয় পর্যায়ে আসে। সরকার অত্যন্ত সজাগভাবে চেষ্টা করছে।
পরিবহনে চাঁদাবাজির বিষয়ে আজাদ মজুমদার বলেন, পরিবহনের ভাড়া যখন নির্ধারণ করা হয়, তখন চাঁদাবাজি কাউন্ট করে কিন্তু ভাড়াটা নির্ধারণ করা হয় না, চাঁদার বিষয় একটি অপরাধের পর্যায়ে আছে। যারা সরকারের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কাজ করেন তারা অবশ্যই এটা ভেবে দেখবেন চাঁদা কারা চায়, কেন দিতে হয়, সেগুলো নিয়ে তারা নিশ্চয় কাজ করবেন। কিন্তু ভাড়ার সঙ্গে চাঁদার বিষয়ে সরাসরি সম্পর্কিত নয়। যে বিষয়গুলো সম্পর্কিত সে বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় কাজ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম, সহকারী প্রেস সচিব সুচিস্মিতা তিথি ও নাঈম আলী।
এমটিআই