ঢাকা: দেশের শেয়ারবাজারে বড় পতন হয়েছে। এমন পতনে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) মূল্যসূচক গত ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমেছে। সূচক কমে নেমেছে ৫ হাজারের ঘরের নিচে। শেয়ারবাজারের এমন পতনে দিশেহারা বিনিয়োগকারীরা।
এমন পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার ছাড়তে শুরু করেছেন। নিয়মিত সিকিউরিটিজ শূণ্য হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের হাজার হাজার পোর্টফোলিও।
এদিকে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শেয়ারবাজারে মূল্যসূচক পতনে রয়েছে।
রোববার (২৭ অক্টোবর) পতনে ডিএসইএক্স সূচকটি ২০২০ সালের ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থায় নেমে গেছে। অর্থাৎ আজকের সূচকটি বিগত প্রায় ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে সর্বশেষ ২০২০ সালের ২ ডিসেম্বর সূচকটি আজকের তুলনায় কম ছিল। ওইদিন ডিএসইএক্স ছিল ৪৯৩৫ পয়েন্টে।
এদিন দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ১৪৯ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ৪৯৬৫ পয়েন্টে। যা গত সপ্তাহে কমেছে ১৪৩ পয়েন্ট।
রোববার ডিএসইতে ৩০৩ কোটি ৮১ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। যার পরিমাণ আগের দিন হয়েছিল ৩০৬ কোটি ১ লাখ টাকা। এ হিসাবে লেনদেন কমেছে ২ কোটি ২০ লাখ টাকার বা ১ শতাংশ।
এদিন ডিএসইতে লেনদেন হওয়া ৩৯৬ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিটের দর বেড়েছে ২৯ টি বা ৭.৩২ শতাংশের। আর দর কমেছে ৩৪১ টি বা ৮৬.১১ শতাংশের ও দর পরিবর্তন হয়নি ২৬ টি বা ৬.৫৭ শতাংশের।
অপরদিকে সিএসইতে রোববার ৪ কোটি ২৫ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এদিন সিএসইতে লেনদেন হওয়া ২০৪ টি কোম্পানির মধ্যে শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে ২৩ টির, কমেছে ১৭৩টির এবং পরিবর্তন হয়নি ৮ টির। এদিন সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ২৯৬ পয়েন্ট কমে দাঁড়িয়েছে ১৪০০৭ পয়েন্টে।
শেয়ারবাজারকে স্থিতিশীল অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সময় আন্দোলন-সংগ্রাম করেছেন। অনেক বিনিয়োগকারী প্রাণও দিয়েছেন শেয়ারবাজারে তাদের পুঁজি হারিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের কিছুদিনের মাথায় শেয়ারবাজারে দীর্ঘ ১৬ বছরে অস্থিতিশীলতা থেকে রক্ষা করতে বিএসইসিতে নতুন চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়। বিনিয়োগকারীদের আপত্তি করলেও খন্দকার রাশেদ মাকসুদকেই আস্থা রাখে সরকার।
তবে খন্দকার রাশেদ মাকসুদ বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে শেয়ারবাজার আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। সর্বশেষ সরকারের সাথে সাথে বিনিয়োগকারীরাও খন্দকার রাশেদ মাকসুদের প্রতি বিশ্বাস ছিল শেয়ারবাজারে তিনি স্থিতিশীলতা ফিরাতে সক্ষম হবেন। তাদের ধারণে ছিল বাজার আর কখনোই ৫ হাজার পয়েন্টের নীচে নামবে না। তবে বিনিয়োগকারীদের সেই বিশ্বাস শেষ পর্যন্ত আর রইল না। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই মুহুর্তে শেয়ারবাজারের প্রতি আস্থাহীন হয়ে পড়েছে বিনিয়োগকারীরা।
শুধু শেয়ারবাজার না নিয়ন্ত্রক সংস্থাসহ মার্কেট মেকার, ডিএসই, সিএসই, সিডিবিএলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রতিও বিনিয়োগকারীরা তাদের আস্থা হারিয়েছে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার নানামূখী চেষ্টার পরও প্রতিনিই নি:স্ব হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। এছাড়াও শেয়ারবাজার উন্নয়নে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ফোর্সসেল।
শেয়ারবাজারে অব্যাহত পতনে বেশকিছু শীর্ষ সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক তাদের নিজেদের টাকা তুলে নিতে মার্জিন অ্যাকাউন্টের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন। এই ফোর্সসেলের কারণে শেয়ারবাজারে অতিরিক্ত বিক্রির চাপ পড়ছে। এতে পতন থেকে বের হতে পারছে না শেয়ারবাজার।
অন্যদিকে সিকিউরিটিজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে বাধ্য হয়েই ফোর্সসেলের রাস্তা বেছে নিয়েছেন। তবে এর থেকে বের হতে প্রয়োজন নতুন বিনিয়োগ এবং যুগপোযোগী সিদ্ধান্ত।
এআর
আপনার মতামত লিখুন :