• ঢাকা
  • বুধবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৪, ১৪ কার্তিক ১৪৩১

প্রশাসক বসার আগেই ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা সরিয়েছে এস আলম


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৩০, ২০২৪, ১০:৪৭ এএম
প্রশাসক বসার আগেই ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকা সরিয়েছে এস আলম

ঢাকা : শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে ৫০ কোটি টাকার আমানত সরিয়ে নিয়েছেন এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম এবং তার পরিবারের সদস্যরা। ওই টাকা অন্যদের নামে এবং অন্য ব্যাংকে স্থানান্তরের তথ্য উঠে এসেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক বিশেষ পরিদর্শন প্রতিবেদনে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, এস আলম ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেয় ৫ অগাস্টের পর।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদন বলছে, ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে টাকা সরানোর ক্ষেত্রে এস আলম গ্রুপের মূল সহযোগী ছিল ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ। ইউনিয়ন ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ বি এম মোকাম্মেল হক চৌধুরী এবং বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও জড়িত ছিলেন।

গত ২৭ অগাস্ট এ ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে প্রশাসক বসায় বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন থেকেই ব্যাংকের এমডি ও তার সহযোগীরা আত্মগোপনে রয়েছেন।

এস আলম গ্রুপ যখন ইউনিয়ন ব্যাংক থেকে টাকা সরিয়ে নেয়, তখন ব্যাংকটি তাদের নিয়ন্ত্রণেই ছিল। ২৭ অগাস্ট পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর সেখান থেকে তাদের টাকা উত্তোলনে নিষেধাজ্ঞা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ইউনিয়ন ব্যাংক যে পরিমাণ টাকা ঋণ দিয়েছে, তার বেশিরভাগ গেছে এস আলম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কোম্পানির পকেটে। সেসব টাকা আর ব্যাংকে ফেরত আসেনি।

ইউনিয়ন ব্যাংকে এস আলম গ্রুপ ও তাদের স্বার্থ সংশ্লিষ্টদের ঋণের স্থিতি ১৭ হাজার ২২৯ কোটি টাকা, যা ব্যাংকটির মোট ঋণের প্রায় ৬২ শতাংশ। ২৪৭টি প্রতিষ্ঠানের নামে নেওয়া এসব ঋণের কোনো টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দল দেখতে পেয়েছে, ইউনিয়ন ব্যাংকে যাদের চাকরি দেওয়া হয়েছে, তাদের অধিকাংশই এস আলমের নিয়োগ দেওয়া লোকবল। ব্যাংকটির জনবলের ৭৬ শতাংশ কোনো পরীক্ষা ছাড়াই সরাসরি নিয়োগ পাওয়া, যাদের বাড়ি সাইফুল আলমের মত চট্টগ্রামে। ফলে পর্ষদ ভেঙে দেওয়া হলেও তাদের সহযোগীদের মাধ্যমেই ব্যাংকটি পরিচালিত হচ্ছে।

২০১৩ সালে ইউনিয়ন ব্যাংকের যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকেই এস আলম সংশ্লিষ্টদের চাকরিতে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ ওঠে।

যেভাবে টাকা সরানো হয় : বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, সরকার পতনের পরপরই এস আলম ব্যাংকে থাকা আমানত নানা কায়দায় উঠিয়ে নেয়। প্রশাসক বসানোর আগেই তারা টাকা সরিয়ে ফেলে।

ইউনিয়ন ব্যাংকের চট্টগ্রামের মুরাদপুর ও বন্দরটিলায় শাখায় সাইফুল আলমের মেয়াদি আমানত হিসাব থেকে ১১ অগাস্ট টাকা তুলে নিয়ে খাতুনগঞ্জ শাখায় এস আলম অ্যান্ড কোম্পানির নামে জমা করা হয়।

একই দিনে ৪ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যাংকের ডিটি রোড শাখায় রাসেল এন্টারপ্রাইজ এবং বহদ্দারহাট শাখায় ৪ কোটি টাকা কোভ ট্রেডিংয়ের অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়।

সাইফুল আলমের ভাই রাশেদুল আলম ৮ ও ১৪ অগাস্ট কদমতলী শাখা থেকে ৮ কোটি টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে একই শাখায় রাশেদুল করিম চৌধুরী ও আজিজুন্নেসার নামে জমা করেন। ২৮ অগাস্ট সাইফুল আলমের শ্যালক আরশাদ মাহমুদ ৪ কোটি ২২ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে পে–অর্ডারের মাধ্যমে অন্য ব্যাংকে সরিয়ে নেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এস আলম সংশ্লিষ্ট আনসারুল আলম ওআর নিজাম রোড শাখা থেকে ২০ অগাস্ট দেড় কোটি টাকা তুলে নেন, পরে তা জনৈক রোকেয়া বেগম ও হাসনা হেনার নামে জমা করা হয়। এর আগে ১৮ অগাস্ট জনৈক গোলাম সারোয়ার চৌধুরী ৩ কোটি ২৬ লাখ টাকার মেয়াদি আমানত ভেঙে এস আলম কোল্ড রোল স্টিলমিলের হিসাবে জমা করেন।

এস আলম গ্রুপ সংশ্লিষ্ট টপ টেন ট্রেডিং হাউসের নামে ইউনিয়ন ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ, আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় জমা থাকা ৩২ কোটি ২৭ লাখ টাকার মধ্যে ১২ কোটি ২৯ লাখ টাকা ১১ আগস্ট তুলে নেওয়া হয়। বাকি অর্থ তুলে ব্যাংকের আগ্রাবাদ ও মুরাদপুর শাখায় বিভিন্ন ব্যক্তির নামে জমা করা হয়। এই গ্রাহকের নামে ব্যাংকটির ঢাকার গুলশান শাখায় ৬০ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ঋণ রয়েছে, যা আদায় হচ্ছে না।

এসব টাকা উদ্ধারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র হুসনে আরা শিখা বলেন, কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে তা নতুন প্রশাসক জানাননি। তাদের পক্ষ থেকে জানলেই আমরা জানাতে পারব। সূত্র : বিডিনিউজ

এমটিআই

Wordbridge School

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!