ঢাকা: দেশের ব্যবসাবাণিজ্য, রাজনীতি, অর্থনীতি ও সমসাময়িক বিষয়ে তিনি গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম বাণিজ্য সংগঠন সার্ক চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন। দেশের ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন তিনি।
মো. জসিম উদ্দিন বেসরকারি খাতের বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান।
তিনি বলেন, একসময়ের ঋণের ৯ শতাংশ সুদ এখন ১৫ শতাংশ। দাম বাড়ার পরও পাওয়া যাচ্ছে না চাহিদামতো জ্বালানি। মূলধনি যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমেছে। কিছুদিন আগে শিল্পকারখানায় হামলা করা হয়েছে। অনেক মালিক ঠিকমতো বেতনভাতা দিতে পারছেন না। এসব কারণে ব্যবসায়ীদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে।
সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন বলেন, ব্যবসায়ীদের এ দুরবস্থা আজকে তৈরি হয়নি। এটা আরও অনেক দিন আগেই তৈরি হয়েছে। কোভিডের পর থেকেই আমরা একটার পর একটা সমস্যার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কোভিড-পরবর্তী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, ডলার সংকট তৈরি হয়েছে। এসব কারণেই আজকের এ দুরবস্থা। দুটি খাতের জন্য বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত। প্রথমত. ব্যাংক খাত। দ্বিতীয়ত. জ্বালানি খাত। আমি এফবিসিসিআই সভাপতির দায়িত্বে থাকার সময় থেকে এ দুটি সমস্যার কথা বলে আসছি। বাংলাদেশের মতো দেশে মূলধনি যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল ও অনেক নিত্যপণ্য আমদানি করতে হয়। জ্বালানির প্রায় পুরোটাই আমদানি করতে হয়। যখন ডলারের দাম বাড়ে তখন এগুলোর দাম বেড়ে গেছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি একটা খারাপ অবস্থায় চলে এসেছে। অনেকেই মনে করেন ৫ আগস্টের পর এ সমস্যা তৈরি হয়েছে। না, এ সমস্যা আমরা বিগত সরকারের আমল থেকেই মোকাবিলা করে আসছি।
করোনার কারণে অর্থনীতির অবস্থা যখন খারাপ হলো, তখন বাংলাদেশ ব্যাংক একটা সার্কুলার জারি করে জানিয়েছিল, নয় মাস ব্যাংক ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করলেও খেলাপি হবে না। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ নেওয়ার জন্য এ সময়সীমা ধীরে ধীরে কমিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বর্তমানে ৯০ দিনে নিয়ে এসেছে। কিন্তু অর্থনৈতিক অবস্থার তো উন্নতি হয়নি। অনেক ব্যবসায়ী মাঝেমধ্যে আমাকে বলেন, আমরা কোভিডের সময় ভালো ছিলাম। আমরা কোভিডে ফিরে যেতে চাই। তার মানে কোভিডের চেয়েও খারাপ অবস্থায় এখন আছি। গ্যাস-বিদ্যুতের কারণে কারখানা চালাতে পারছি না। শ্রমিক অসন্তোষ ছিল দুই মাস। আমি ব্যাংকের টাকা কোথা থেকে দেব? সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে কোনো গ্রুপ অব কোম্পানির একটি প্রতিষ্ঠান খেলাপি হলে পুরো গ্রুপকে খেলাপি করা হচ্ছে। এটা ঠিক করতে আমরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নরের সঙ্গে আলোচনা করেছি। এজন্য একটি আইনও পাসও হয়েছে, কিন্তু বাস্তবায়নে যায়নি, সমাধানও হয়নি। আইনটি বাস্তবায়ন করতে হবে। মূল্যস্ফীতির চাপে হিমশিম খাচ্ছে আমাদের নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর মনে করেন সুদহার বাড়ালেই মূল্যস্ফীতি কমবে। ব্যবসায়ী হিসেবে আমার কাছে মনে হয় না সুদহার বাড়ালেই মূল্যস্ফীতি কমবে। দেশের ৮০ শতাংশের বেশি মানুষ ইনফরমাল অর্থনীতিতে। ৭০ শতাংশ মানুষ ব্যাংকেই যায় না। সেখানে সুদহার বাড়ালে কীভাবে হবে? বরং আমাদের কাঁচামাল, মূলধনি যন্ত্রপাতি, জ্বালানি পুরোটাই আমদানি করতে হয়। সুদহার বাড়লে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। আমার মনে হয় উল্টোটা হচ্ছে। কারণ মূল্যস্ফীতির জন্য অনেক আইটেম দায়ী। তো এতগুলো আইটেমের মধ্যে অন্য জায়গায় হাত না দিয়ে শুধু সুদহার নিয়ে খেলাধুলা করলে মূল্যস্ফীতি কমবে না। মূল্যস্ফীতি কমানোর সবচেয়ে বড় জায়গা সাপ্লাই চেইন। সাটুরিয়ার এক কৃষক ৬০ টাকা কেজিতে বেগুন বিক্রি করছেন। কৃষকের কাছ থেকে হাতবদল হয়েই দাম হলো ৭৫ টাকা। ঢাকায় সে বেগুন কিনতে হচ্ছে ১৫০ টাকা কেজি। এখানে ব্যাংক সুদের কোনো বিষয় আছে কি না? তার মানে এখানে সাপ্লাইয়ের বিষয়। এসব জায়গায় হাত দিতে হবে। সুদহার বাড়লে তো বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতা থাকবে না। সুদহার বেশি, গ্যাস না পেয়ে এলপিজি-সিএনজি-ডিজেল দিয়ে কারখানা চালাচ্ছি। খরচ কিন্তু বেড়ে যাচ্ছে। দেশের পাশাপাশি রপ্তানি বাজারেও প্রতিযোগিতার সক্ষমতা হারাচ্ছি। গত কয়েক মাসে ২৭ শতাংশ ভোগ্যপণ্য আমদানি কমেছে। যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি কমেছে।
আপনি সুদহার বৃদ্ধির কথা বলছেন, সুদহার বৃদ্ধির আরেকটি ধাক্কা লাগবে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে। আপনারা বলছেন গত তিন মাসে অনেক ব্যবসায়ী ঋণখেলাপি হয়েছেন। এখান থেকে উত্তরণের পথ কী?
এমন প্রশ্নে জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা এখন স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে নাই। আমাদের এ পরিস্থিতি একদিনে তৈরি হয় নাই, দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। এক দিনে এটা ঠিক করতে পারবেন না। ঋণ পরিশোধে নয়টা কিস্তির বদলে তিনটাতে নিয়ে আসা হয়েছে। আগামী বছর থেকে মাসে একটা কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলেই ঋণখেলাপি হবেন ব্যবসায়ীরা। একটা গ্রুপের একটা প্রতিষ্ঠান খেলাপি করা হলে তার অন্য সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি বন্ধ করে দেওয়া হয়, ব্যবসা করতে পারে না। কমপ্লায়েন্স বাস্তবায়ন করতে হবে ধীরে ধীরে। পরিস্থিতিটা আস্তে আস্তে সামলাতে হবে। তার জন্য নয় কিস্তির জায়গায় কমপক্ষে ছয় কিস্তিতে নিয়ে আসেন। পরিস্থিতি যখন উন্নত হবে তখন পর্যায়ক্রমে সময় কমিয়ে নিয়ে আসেন। কারা ইচ্ছাকৃত খেলাপি তালিকা প্রকাশ করেন। ৯৫ শতাংশ ব্যবসায়ী ব্যাংকের টাকা ফেরত দেন। ফেরত না দিলে ব্যাংকগুলো এত বড় হয়েছে কীভাবে? চাহিদামতো গ্যাস, বিদ্যুৎ পাব না, কাঁচামাল আমদানি করতে পারব না, তাহলে কীভাবে ব্যাংকের টাকা ফেরত দেব? ব্যবসায়ীদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে এসব সমস্যার সমাধান করতে হবে।
ব্যবসায়ীদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে উল্লেখ্য করে তিনি বলেন, অবশ্যই। ৯ শতাংশ সুদে ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে কারখানা করেছি। এখন সুদহার প্রায় ১৪ শতাংশ হয়ে গেছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক আবারও নীতি সুদহার বাড়িয়েছে। তার মানে সুদ আরও ১ শতাংশ বাড়বে। নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদ ১৫-১৬ শতাংশ হয়ে গেছে, কীভাবে টিকে থাকব? কারখানা করার সময় সরকার আমাকে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানির নিশ্চয়তা দিয়েছিল, এখন দিতে পারছে না। দিতে যে পারবে তারও কোনো নিশ্চয়তা নাই। কারণ সবকিছু এখন আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন ৬০ শতাংশ জ্বালানি উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। ভারতে প্রায় ৮০ শতাংশ। কিন্তু আমাদের কয়লা থাকার পরও আমরা ব্যবহার করি নাই। মাসে জ্বালানি আমদানির ২-৩ বিলিয়ন ডলার কোথা থেকে আসবে? জ্বালানির বিষয়ে আমাদের একটি রোডম্যাপ করা দরকার। বাপেক্সের সক্ষমতা বাড়ানো, কয়লা উত্তোলন করে ব্যবহার করা দরকার।
জ্বালানি খাত নিয়ে বর্তমান সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দৈনন্দিন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। জ্বালানি আমদানির একটি রোডম্যাপ থাকতে হবে। আমি মনে করি নির্বাচিত সরকার এ বিষয়ে পরিকল্পনা করতে পারবে। সরকারপ্রধানের কাছে জনগণের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সবার কাছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্যরকম একটা জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা বিভিন্ন জায়গার সংস্কার যদি বর্তমান সরকার করে যায়, ভালো হবে। কারণ দলীয় সরকার এসে সংস্কারগুলো করতে পারে না। নির্বাচনব্যবস্থা, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নীতি ও বাস্তবায়ন বিভাগ আলাদা করা, ট্যাক্স-জিডিপি অনুপাত বাড়ানো, বাংলাদেশ ব্যাংকের সংস্কার দরকার। রাজস্ব বাড়াতে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়াতে হবে। যারা ভ্যাট-ট্যাক্স দেন তাদের ওপরই বোঝা বাড়ানো হচ্ছে! এটা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। আমরা আশা করি করের পরিধি বাড়াতে রাজস্ব বোর্ডের পুনর্গঠন দরকার। অনেকেই কর দেওয়ার যোগ্য আছেন। তাঁদের করজালের মধ্যে নিয়ে আসতে হবে। তাহলে ব্যবসায়ীরা ভোগান্তিতে পড়বেন না। ভ্যাট-ট্যাক্স নিয়ে ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা বিপদে আছেন। মার্কেটে ১০০ দোকান থাকলে ইএফডি মেশিন আছে ২০টা দোকানে। বাকি ৮০ জনকে ভ্যাট দিতে হচ্ছে না। যাঁরা দিচ্ছেন তাঁরাই বিপদে আছেন। এ বৈষম্য থেকে আমাদের বের হতে হবে।
জসিম উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশের গণতন্ত্র সুসংগঠিত করা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত বর্তমান সরকারকে। আমাদের বড় সমস্যা এক সরকার আরেক সরকারকে ক্ষমতা বুঝিয়ে দিতে পারে না। এটা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে ঠিক করতে হবে। গণতন্ত্র সুসংগঠিত হলে জবাবদিহি নিশ্চিত হবে।
অনেকেই বলেন ব্যবসায়ীদের মধ্যে গণতন্ত্রের অভাব রয়েছে। যার উদাহরণ ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে ভোট হচ্ছে না! এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আর কোনো বাণিজ্য সংগঠনকে নিবন্ধন না দেওয়ার জন্য এফবিসিসিআই সভাপতি হিসেবে আমি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম। আমাদের ব্যবসার খাত আছে ৪২টি। আর অ্যাসোসিয়েশন রয়েছে প্রায় ৪৬০টি। একটি খাতের জন্য একটি অ্যাসোসিয়েশন হওয়ার বিধান রয়েছে। প্রতিটি খাতে ১০টির বেশি অ্যাসোসিয়েশন। এটা কেন হলো? একসময় মনোনীত পরিচালক পদ ছিল আটটি। ৮০ জনের পর্ষদে এখন সেটা ৩৭ থেকে ৩৮টি মনোনীত পরিচালক পদ। আমি সংস্কারের প্রস্তাব দিয়েছিলাম। ২০২২ সালে একটি আইন পাস হয়েছে, এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। আমাদের অনেক অ্যাসোসিয়েশনে সুশাসন নাই। পকেটের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন নিয়ে বসে আছি। প্রকৃত অংশীজনেরা এফবিসিসিআইতে যেতে পারেন না। একই ব্যক্তি বছরের পর বছর পরিচালক হচ্ছেন। আমাদের তো নতুন নেতৃত্ব আনা প্রয়োজন। সংস্কার ছাড়া এফবিসিসিআইয়ের আগামী নির্বাচন করা ঠিক হবে না বলে আমি মনে করি। সংস্কার না করলে আগের মতো একই জিনিস হবে। যারা ব্যবসা করছেন তাদের জন্য সংস্কারটা করতে হবে। প্রকৃত ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিত্ব দরকার। পকেট অ্যাসোসিয়েশন বাতিল করে গণতন্ত্র নিশ্চিত করতে হবে। সঠিক ব্যক্তিকে নির্বাচিত করতে হবে।
ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন এবং রাজনীতিবিদরাও ব্যবসায়ীদের ব্যবহার করেছিলেন। এর ফলে ব্যবসায়ীরা কি এখন এক ধরনের চাপে আছেন?
জসিম উদ্দিন বলেন, অবশ্যই। ব্যবসায়ীরা বিপদগ্রস্ত হয়ে রাজনীতিতে গেছেন। কারণ ব্যবসায়ীরা অনেক রাজনীতিবিদকে চাঁদা দিয়েছেন। তখন ব্যবসায়ীরা চিন্তা করেছেন আমি কেন রাজনীতিতে যাচ্ছি না! এভাবেই আমাদের ব্যবসায়ীরা রাজনীতিতে গেছেন। রাজনীতিবিদরা ব্যবসা করেছেন। দুটোই উল্টো হয়েছে। আমি মনে করি সবার সঙ্গে সবকিছু যায় না। আমাদের রাজনীতির মধ্যে থাকা উচিত না বলে আমি মনে করি। তবে ব্যবসার পরিবেশটা তৈরি করে দিতে হবে। স্বাধীনতার পর থেকেই ব্যবসার পরিবেশটা আসলেই ছিল না। তাই অনেক সময় নিরুপায় হয়ে ব্যবসায়ীদের অনেক কিছু করতে হয়েছে। সবকিছু যে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছাকৃত করেছেন বিষয়টি সে রকম ছিল না। ২-৩ শতাংশের জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজকে খারাপ বলা হচ্ছে।
বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, এক-এগারোর সময় অনেক ব্যবসায়ীকে ধরপাকড় করার কারণে অনেকেই ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। এখন ভোগ্যপণ্য ব্যবসা মানুষ করে। ভোগ্যপণ্য আমদানি যে ২৭ শতাংশ কমেছে তার প্রভাব তো বাজারে আসবেই। সংকট হলে দাম বাড়ে। ভোগ্যপণ্য ব্যবসায় এখনো সনাতন পদ্ধতি রয়ে গেছে। এটা সংস্কার করতে হবে। ডিলারের বাইরে পণ্য বিক্রি বন্ধ করতে হবে। সনাতন পদ্ধতিতে অনেক কিছু ম্যানুপুলেট করা যায়। সরবরাহব্যবস্থা সংস্কার করতে হবে। অনেক হাতবদল হয়ে পণ্য বাজারে আসছে। এসব জায়গায় কাজ করতে হবে। ইউরোপ-আমেরিকার মতো মডেল ব্যবহার করলেই হবে।
বিগত সময়ে আমলারা এক প্রকার রাজনীতিবিদ হয়েছিলেন, কেন?
‘আমলারা বক্তব্যের শুরুতে যে ভূমিকা দিতেন, রাজনীতিবিদরাও এমন করে ভূমিকা দিতেন না। নীতিমালা প্রণয়নের সময় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। কারণ বাস্তবায়ন তো করতে হয় ব্যবসায়ীদের। তাই নীতি প্রণয়নের আগে আমাদের মতামত নিলে বিষয়গুলো অনেক সহজ হবে। আমলারা অনেক নীতিমালা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিলেন। বাজেটের আগে রাজস্ব বোর্ড আমাদের সঙ্গে বৈঠক করত, কিন্তু ব্যবসায়ীদের দাবিগুলো উপেক্ষিতই থাকত। তার মানে আমাদের সঙ্গে একটা নাটক করা হতো। বর্তমান বাস্তবতায় এনবিআরের এসব নাটক বন্ধ হবে বলে আশা করি। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে এটাই প্রত্যাশা।’
দেশের তৈরি পোশাকশিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে জসিম উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের পর তৈরি পোশাক কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনায় ক্রেতারা আস্থা হারিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, সস্তায় অর্ডার দিয়ে পণ্য না পেলে লাভ কী? এ ভয়ে কিছু কিছু ক্রেতা চীন, ভারত, পাকিস্তান, ভিয়েতনামে চলে গেছেন। এখন যদি আমরা স্থিতিশীল হতে পারি তাহলে অর্ডারগুলো আবার ফেরত আসবে।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ীকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। সাংবাদিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে মামলায় জড়ানো হয়েছে। ঘটনার সময় অনেকে দেশেই ছিলেন না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে দেখছেন?
এমন প্রশ্নে জসিম উদ্দিন বলেন, সরকারও বলেছে ঢালাওভাবে মামলার আসামি করা ঠিক হয়নি। সুবিধা নেওয়ার জন্য কিছু লোক পেছনে থেকে এ মামলাগুলোয় ব্যবসায়ী-শিল্পপতি ও সাংবাদিকদের আসামি করেছে। এতে তারা মানসিকভাবে ভীতসন্ত্রস্ত হয়। ব্যবসাবাণিজ্য হুমকিতে পড়েছে। কর্মচারীদের বেতনভাতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। সরকারকে এগুলো দেখা উচিত। যত দ্রুত সম্ভব নির্দোষ ব্যক্তিদের অব্যাহতি দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি, আপনি জানেন না কখন আপনাকে ধরে ফেলবে। এসব মামলার পেছনে রাজনৈতিক দলের নেতাদের ইন্ধন আছে। আমি আশা করব মামলায় আসামি করার উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে দলগুলো ব্যবস্থা নেবে।
এ সবকিছুর মধ্যেও আশান্বিত হতে চান এফবিসিসিআই’র সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। এখনকার মতো ১৯৭১ সালে আমাদের অনেক কিছু ছিল না, তার পরও দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমাদের তরুণরা যে আশা নিয়ে একটা পরিবর্তন এনেছেন, বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে তারা যে রক্ত দিয়েছেন, সেটা যেন বৃথা না যায়। আমার প্রত্যাশা, উল্লেখযোগ্য সংস্কারগুলো করে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে বর্তমান সরকার; যাতে ভবিষ্যতে আমাদের অন্ধকারে যেতে না হয়। সূত্র-বাংলাদেশ প্রতিদিন
আইএ