ঢাকা: শীত জেঁকে বসার আগেই রাজধানীর বাজারগুলোতে শোভা পাচ্ছে এই মৌসুমের সবজি। বাজার ঘুরে সরবরাহও খারাপ দেখা যায়নি। কিন্তু শীতের সবজি হাতের নাগালে পেয়েও দামের কারণে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছেন অনেক ক্রেতা। এর কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা উৎপাদন বৃদ্ধি না হওয়াকে দায়ী করছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত সপ্তাহের তুলনায় শিম, মুলা, বেগুনসহ বেশ কয়েকটি সবজির দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। শীত বেশি এলে আরও কমবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন বিক্রেতারা।
গত সপ্তাহের তুলনায় দুএকটি সবজির দাম বাড়লেও অধিকাংশ দামই অপরিবর্তিত রয়েছে। এছাড়া বাজারে এসেছে নতুন আলু, দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকা। গত সপ্তাহে কাঁচা মরিচের ঝাল কিছুটা কম থাকলেও এখন তা আরও বেড়েছে। প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা কেজি দরে।
শুক্রবার (২৯ নভেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুড়ে দেখা গেছে এমন চিত্র।
বাজারে প্রতি কেজি বরবটি ৭০ টাকা, মুলা ৪০ টাকা, লতি ৬০ টাকা, ধুন্দুল ও পটোল ৬০ টাকা, বেগুন ৬০-৮০ টাকা, করলা ৭০ থেকে ৯০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি পেঁপে ৪০ টাকা, গাজর ১৩০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকা, শালগম ১১০ টাকা ও শসা বিক্রি হচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। নতুন আলু ১০০ আর পুরান আলু ৭৫ থেকে ৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে।
এক কেজি কাঁচা মরিচের দাম ১৪০ টাকা হলেও প্রতি ২৫০ গ্রাম মরিচের জন্য ৪০ টাকা গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। প্রতি কেজি ধনেপাতা ৭০ থেকে ৮০ টাকা, পেঁয়াজের কলি ৮০ টাকা। আর মানভেদে প্রতি পিস ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা এবং লাউয়ের জন্য গুনতে হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা। তবে ছোট বড় আকারের উপরে এই তিন সবজির দাম নির্ধারণ হয়।
এদিকে বাজারে লালশাকের আঁটি ১০ টাকা, পাটশাক ১০-১৫ টাকা, পুঁইশাক ৩০-৪০ টাকা, মুলাশাক ১০ টাকা, ডাঁটাশাক ১০-১৫ টাকা, কলমিশাক ১০ টাকা ও পালংশাক বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়।
এদিকে, এনবিআরের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত সপ্তাহে ভোজ্যতেল আমদানিতে মূল্য সংযোজন কর ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়। এতে বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম কমার কথা থাকলেও সেই চিত্র কোথাও দেখা যায়নি। খোলাবাজারে প্রতি লিটার পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ১৭২ টাকায়, বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে অপরিবর্তিত ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা লিটার, ৫ লিটারের সয়াবিন ৮০০ থেকে ৮১০ টাকা।
এদিকে শুল্ক ছাড়ের এক মাস পর কমতে শুরু করেছে চিনি ও ডিমের দাম। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ১৯ কোটি ডিম আমদানির খবরে ৫ টাকা কমে প্রতি ডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ টাকায়। প্রতি কেজি চিনি ১২০-১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়।
এদিকে সপ্তাহজুড়ে ১৩০ টাকা কেজিতে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হলেও ৫ টাকা কমেছে এ পণ্যের দাম। বর্তমান বাজারে প্রতি কেজি দেশি পেঁয়াজ ১২৫ এবং ইন্ডিয়ান পেঁয়াজ ১০০ থেকে ১১০ টাকা।
এদিকে দেশের ইলিশের বাজার এখনও অস্থির। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সুস্বাদু এ রুপালি মাছ। সপ্তাহ ব্যবধানে কেজিতে ৪০০-৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২২০০ টাকায়। এছাড়া দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ৩ হাজার টাকা, ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৯০০ টাকা হারে, আর ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ ১৪০০ টাকা ও ৩০০-৪০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের জন্য গুনতে হচ্ছে ৮০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চাহিদার তুলনায় পর্যাপ্ত মাছ না আসায় দাম বাড়ছে। ইলিশের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতায় বাইরে চলে যাচ্ছে। আর ক্রেতারা বলছেন, দিনকে দিন যেভাবে দাম বাড়ছে ইলিশের, তাতে ইলিশ কেনাই দুরূহ হয়ে পড়বে।
রাজধানীর বাজারে কেজিতে ১০-৩০ টাকা বেড়ে গেছে অন্যান্য মাছের দামও। বাজারে প্রতি কেজি রুই ৩৮০ থেকে ৪৫০ টাকা, কাতল ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা, চাষের শিং ৫৫০ টাকা, চাষের মাগুর ৫০০ টাকা, চাষের কৈ ২৪০ থেকে ২৮০ টাকা, কোরাল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, টেংরা ৫৫০ থেকে ৭০০ টাকা, চাষের পাঙাশ ১৮০ থেকে ২৩০ টাকা ও তেলাপিয়া ১৮০ থেকে ২২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি বোয়াল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা, পোয়া ৪৫০, পাবদা ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, আইড় ৮৫০ থেকে ৯০০ টাকা, দেশি কৈ এক হাজার ৩০০ টাকা থেকে এক হাজার ৭০০ টাকা, শিং এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৫০০ টাকা, শোল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা এবং নদীর পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়।
এদিকে, সোনালি ও ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা কমলেও স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য মাংস ও ডিমের দাম। কেজিতে ১০ টাকা কমে প্রতিকেজি সোনালি মুরগি ২৯০ থেকে ৩০০ টাকা ও ব্রয়লার মুরগি ১৭৫-১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি কেজি দেশি মুরগি ৫৫০-৬০০ টাকা, সাদা লেয়ার ২৩০ টাকা ও লাল লেয়ার বিক্রি হচ্ছে ২৮০ টাকায়। আর জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৫৫০-৬০০ টাকায়।
অপরিবর্তিত আছে গরু ও খাসির মাংসের দামও। প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮০০ টাকায়। এছাড়া প্রতি কেজি খাসির মাংস এক হাজার ৫০ টাকা থেকে এক হাজার ১০০ টাকা এবং ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
আর বর্তমানে প্রতি ডজন লাল ডিম খুচরা পর্যায়ে ১৪৪-১৪৫ টাকা ও সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৪ টাকায়। আর প্রতি ডজন হাঁসের ডিম ২৪০-২৫০ টাকা ও দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকায়।
এএইচ/এসএস