• ঢাকা
  • শনিবার, ১১ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৭ পৌষ ১৪৩০

ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সরকারের ব্যাংক ঋণে সুদহার বাড়ছে


নিজস্ব প্রতিবেদক ডিসেম্বর ৮, ২০২৪, ০৩:৪১ পিএম
ট্রেজারি বিল ও বন্ডে সরকারের ব্যাংক ঋণে সুদহার বাড়ছে

ঢাকা: ট্রেজারি বিল ও বন্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের বিপরীতে বাজার থেকে টাকা তুলছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই মধ্যে তিনটি নিলামে উত্তোলন করা হয়েছে ১ হাজার ২৫৪ কোটি টাকা। 

প্রথম দু’দিনের তুলনায় গত সপ্তাহের নিলামে বেশি সুদ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের নিলামের প্রভাবে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে অর্থাৎ সরকারের ব্যাংক ঋণে সুদহার বাড়ছে। 

গত সপ্তাহে তিন বছর মেয়াদি বন্ড বিক্রি হয়েছে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ সুদে। দুই বছর মেয়াদি বন্ডে সুদ ছিল ১২ দশমিক ২৯ শতাংশ। এতে সরকারের সুদ ব্যয়ের চাপ আরও বাড়ছে।

বিগত সরকারের সময়ে ঋণ জালিয়াতিসহ বিভিন্ন কারণে দুর্বল হয়ে পড়েছে কয়েকটি ব্যাংক। এসব ব্যাংক আমানতকারীর টাকা ফেরত দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা বাংলাদেশ ব্যাংকে ধরনা দেয়। 

অন্তর্বর্তী সরকারের শুরুর দিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কোনো টাকা ছাপিয়ে না দেওয়ার ঘোষণা দিলেও ব্যাংক খাতের অস্থিরতা কাটাতে ৬টি ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাধারণভাবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি টাকা দিলে মূল্যস্ফীতিতে তার প্রভাব পড়ে। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজ করছে। 

গত নভেম্বর মাসের মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ১১ দশমিক ৩৮ শতাংশ। যে কারণে একদিকে দুর্বল ব্যাংককে টাকা দিয়ে, আরেক দিকে ভালো ব্যাংক থেকে তুলে নেওয়া হচ্ছে। আবার ব্যাংকগুলোকে ধারে ব্যবহৃত রেপোর সুদহার কয়েক দফা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে গ্রাহক পর্যায়েও সুদহার বাড়ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, আস্থাহীনতার কারণে দুর্বল ব্যাংক থেকে টাকা তুলে সাধারণত ভালো ব্যাংকে রাখে। যে কারণে সামগ্রিকভাবে ব্যাংক খাতে আমানত প্রবৃদ্ধি কমলেও ভালো কয়েকটি ব্যাংকে অনেক বাড়ছে। এসব ব্যাংকের বাড়তি টাকা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আনতে এবারের বিল ছাড়ার প্রধান লক্ষ্য। দুর্বল ব্যাংকগুলোকে দেওয়া বিশেষ ধারের বিপরীতে বাজার থেকে টাকা উঠিয়ে নিতে (স্টেরিলাইজেশন) বাংলাদেশ ব্যাংক এ পদক্ষেপ নিয়েছে। এতে করে টাকা ছাপানোজনিত মূল্যস্ফীতির প্রভাব নিয়ন্ত্রণ করা যাবে বলে মনে করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ৩০ দিন মেয়াদি বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের বিপরীতে গত ২০ নভেম্বর ৫০১ কোটি এবং ২৭ নভেম্বর ৪৫৩ কোটি টাকা উত্তোলন হয়েছে ১১ দশমিক ১০ শতাংশ সুদে। আর গত ৪ ডিসেম্বর ৯০ দিন মেয়াদি বিলের সুদ বেড়ে ১১ দশমিক ৬৩ শতাংশ হয়েছে, যেখানে তোলা হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা। আগামী ১১, ১৮ এবং ২৬ ডিসেম্বর ৯০ দিন মেয়াদি বিলের নিলাম হবে। সেখানে সুদহার আরও বাড়তে পারে। পাশাপাশি ট্রেজারি বিল ও বন্ডের চলমান নিলামে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তোলা হয়েছে ১২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। যেখানে সুদহার ছিল ১১ দশমিক ৭০ থেকে ১৩ দশমিক ১৯ শতাংশ।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন উৎসে সরকারের এখন ঋণ রয়েছে ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি। দেশি-বিদেশি উৎসে সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ছে। যে কারণে চলতি অর্থবছরের সুদ পরিশোধে সরকারের ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। 

মোট বাজেটের যা ১৪ দশমিক ২৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের বাজেটে ৯৪ হাজার ৩৭৬ কোটি টাকা ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুদ পরিশোধে ব্যয় হয় ৫৮ হাজার ৩২২ কোটি টাকা। এর মানে ৬ বছরে সুদ পরিশোধ ব্যয় বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। আবার ডলারের বিপরীতে টাকার দর অনেক কমে যাওয়ায় ঋণ পরিশোধে টাকার অঙ্কে সরকারকে বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক হুসনে আরা শিখা বলেন, বর্তমানে মুদ্রা সরবরাহ কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার মধ্যেই আছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে কয়েকটি ব্যাংকে টাকা দেওয়া হয়েছে। এই টাকা দেওয়ার কারণে যেন মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে না যায়, সে জন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক বিলের মাধ্যমে বাজার থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। এটা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সতর্কতামূলক পদক্ষেপের অংশ।

এআর

Wordbridge School
Link copied!