যশোর: বিজয় দিবস উপলক্ষ্যে যশোরের গদখালীতে বেড়েছে ফুল বিক্রি। বুদ্ধিজীবী দিবসেও ভালো দাম পেয়েছেন চাষিরা। গেল তিনদিনে এখানকার কৃষকরা অন্তত ৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রি করেছেন। দাম ভালো পাওয়ায় কয়েক বছরের ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার আশা চাষিদের।
ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী ও পানিসারা ইউনিয়ন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস ও মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে এবার দুই দিনে ৩ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে গদখালী বাজারে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ী ও ফুলচাষিদের হাঁকডাকে দীর্ঘদিন পর প্রাণ ফিরে পায় ঐতিহ্যবাহী এ বাজার।
প্রতিদিন ছোট হাট বসলেও ঢাকাসহ বৃহৎ জেলার বড় বড় পাইকারেরা এসেছেন রোববার (১৫ ডিসেম্বর) ও আগের দিন শনিবার (১৪ ডিসেম্বর)। এদিন প্রতিটি গোলাপ ১২-১৫, রজনীগন্ধা ১০, মানভেদে প্রতিটি জারবেরা ১০-১৭, চন্দ্রমল্লিকা প্রতিটি ২-৩ এবং গাঁদা প্রতি হাজার সাড়ে ৪০০-৪৫০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হয়েছে গাঁদা ফুল। ফুলচাষিরা জানিয়েছেন, মাসখানেক আগের থেকে বর্তমানে প্রতিটি ফুল দ্বিগুণ দামে বিক্রি হচ্ছে। আসছে ১৩ ফেব্রুয়ারি পয়লা ফাল্গুন, ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও মহান শহীদ দিবস এবং ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসের আগমুহূর্তে দাম আরও ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখছেন ফুলচাষিরা।
যশোর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে ফুলের রাজধানী খ্যাত গদখালীর ছোট্ট এই বাজার। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, যশোরের প্রায় ৬ হাজার কৃষক দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৫ ধরনের ফুলের চাষ করেন। এর বেশির ভাগই চাষ হয় ঝিকরগাছার গদখালী ও পানিসারায়।
হাড়িয়াদাড়া গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন। তিনি চলতি মৌসুমে ২ বিঘা জমিতে গাঁদা, সাড়ে চার বিঘা জমিতে রঙিন গ্লাডিওলাস, রজনীগন্ধা চাষ করেছিলেন। কিন্তু গত জুলাই-আগস্টের অতিবৃষ্টিতে তাঁর খেত নষ্ট হয়ে যায়। পরে নতুন করে চারা রোপণ করেন। এখন সেই জমি ফুলে ছেয়ে গেছে। বৃষ্টির ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে খেতের ফুল বিক্রির জন্য তুলেছেন বাজারে। উপলক্ষ মহান বিজয় দিবস। ফুলের ভালো বিক্রি ও দাম পেয়ে হাসি ফুটেছে তার মুখে।
দুই দশকের বেশি সময় ধরে ফুল চাষ করা এই কৃষক বলেন, বাজারে এ সময় এমন ফুলের দাম থাকে না। কিন্তু এবার সব ধরনের ফুলের দাম বেশি। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে। এমন দাম অব্যাহত থাকলে বিগত সময়ের ক্ষতি কাটিয়ে লাভের মুখ দেখা যাবে বড় পরিসরে।
মঞ্জুর হোসেন নামের এক ফুলচাষি বলেন, ‘এ বছর বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হয়েছে। অতিবৃষ্টির কারণে এ বছর শীতকালীন ফুল চাষ বিলম্বিত হয়েছে। কিছু সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে ফুলের চাহিদা বাড়ে। সে কারণে আমরা বিশেষ পরিচর্যায় উদ্যোগ গ্রহণ করি। বিলম্বে চাষাবাদের কারণে ফুলের উৎপাদন কম হলেও দাম ঊর্ধ্বমুখী থাকায় লাভের আশা করছি।’
যশোরের গদখালীর ফুল চাষি ও ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু জাফর বলেন, ‘গত তিন চার দিনে এখান থেকে সারা বাংলাদেশে সব জেলায় প্রায় আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে। দুই থেকে আড়াইশ ফুল চাষি আছে যারা এখানে ফুল নিয়ে আসে। এছাড়া এখানকার পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে সারা দেশে ফুল ছড়িয়ে যায়।’
সারাদেশের ফুলের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশই পূরণ করে গদখালীর বাজার। আর কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, যশোরে প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১১ ধরনের ফুলের চাষ হয়।
এসএস