ঢাকা: চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে সাত দেশের আট প্রতিষ্ঠান থেকে সোয়া ১৪ লাখ টন পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করবে বাংলাদেশ।
ভারত, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমান থেকে এই তেল আমদানি করা হবে।
দেশগুলো থেকে জ্বালানি তেল আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ৯৬ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১১ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা।
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে গতকাল বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের এ বিষয়ক প্রস্তাব অনুমোদিত হয়।
সূত্রগুলো জানায়, সরকার থেকে সরকার পর্যায়ে অর্থাৎ জিটুজি ভিত্তিতে এ পরিশোধিত জ্বালানি তেল আমদানি করা হবে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনকে (বিপিসি) এ তেল আমদানির জন্য গত ২৪ অক্টোবর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।
সাত দেশের আট প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চীনের প্রতিষ্ঠান দুটি। বাকি ছয় দেশের ছয় প্রতিষ্ঠান থেকে আমদানি করা হবে এ জ্বালানি তেল।
চীনের প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে পেট্রোচীনা এবং ইউএনআইপিইসি। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে ভারতের আইওসিএল, ইন্দোনেশিয়ার বিএসপি, মালয়েশিয়ার পিটিএলসিএল, থাইল্যান্ডের পিটিটিটি, ওমানের ওকিউটি এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের ইউএনওসি।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, আমদানির করতে যাওয়া জ্বালানি তেলের মধ্যে গ্যাস অয়েল ৮ লাখ ৮০ হাজার টন, জেট এ-ওয়ান ১ লাখ ৯০ হাজার টন, মোগ্যাস ৭৫ হাজার টন, ফার্নেস অয়েল ২ লাখ ৫০ হাজার টন এবং মেরিন ফুয়েল ৩০ হাজার টন।
নতুন রেলপথ হবে, সংস্কারও হবে
ক্রয় কমিটিতে ক্ষতিগ্রস্ত মিটারগেজ ট্র্যাক সংস্কার এবং ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণের দুটি আলাদা প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সিলেট-ছাতক বাজার সেকশনের মিটারগেজ ট্র্যাকটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ২০২২ সালের বন্যায় সিলেট থেকে ছাতক বাজার পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
এ কারণে এই পথে রেল চলাচল এখন বন্ধ। রেলপথটি পুনর্বাসন করে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করার জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয় ২০২৩ সালে। ২১৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্প প্রস্তাব জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) ২০২৩ সালের ১১ এপ্রিল অনুমোদন পায়। প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৩ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ রেলওয়ের সিলেট থেকে ছাতক বাজার সেকশন (মিটারগেজ ট্র্যাক) পুনর্বাসন প্রকল্পের ডব্লিউডি-১ প্যাকেজের পূর্ত কাজের প্রস্তাব এটি। ক্ষতিগ্রস্ত প্রকল্পের পূর্ত কাজের দরপত্র ডাকলে চারটি দরপত্র জমা পড়ে। চারটিই কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি (টিইসি) সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপারিশ করে মীর আখতার হোসেন লিমিটেডের নাম। এ প্রতিষ্ঠানই কাজ পায়। এর প্রকল্পের ব্যয়ের ৮০ শতাংশ মার্কিন ডলার এবং ২০ শতাংশ বাংলাদেশি মুদ্রায় পরিশোধ হবে।
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ সেকশনে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ (১ম সংশোধিত) প্রকল্পের ডব্লিউডি-৩ প্যাকেজের পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়। প্রকল্পের পূর্ত কাজ ক্রয়ের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হলে পাঁচটি দরপত্র জমা পড়ে এবং প্রতিটিই রেসপনসিভ হয়। সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় জিপিটি এবং স্ট্যান্ডার্ড। এতে ব্যয় হবে ২৯৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা।
কেনা হচ্ছে সয়াবিন তেল ও মসুর ডাল
ক্রয় কমিটিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের কাজ পেয়েছে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড।
২ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার দরপত্র আহ্বান করলে ১ কোটি ১০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল সরবরাহের জন্য একটি দর প্রস্তাব জমা পড়ে।
দর প্রস্তাবটি আর্থিক ও কারিগরিভাবে রেসপনসিভ হয়। একমাত্র দরদাতা প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পায় সুপার অয়েল রিফাইনারি। এতে ব্যয় হবে ১৮৯ কোটি ১৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম পড়বে ১৭১ টাকা ৯৫ পয়সা। সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেড থেকে এ সয়াবিন তেল কেনা হবে। এই তেল কেনা হচ্ছে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য। টিসিবির পরিবার কার্ডধারীদের কাছে ভর্তুকি মূল্যে এই তেল বিক্রি করা হবে।
এদিকে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনার প্রস্তাবও অনুমোদিত হয়েছে গতকাল। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ধরা হয়েছে ৯৪ টাকা ৯৫ পয়সা। শবনম ভেজিটেবল অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ এ ডাল সরবরাহ করবে।
এআর