• ঢাকা
  • বুধবার, ০৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৩ পৌষ ১৪৩০

তিন মাসে ১০ শতাংশ দাবি পরিশোধ নন-লাইফ বীমায়


আবদুল হাকিম  জানুয়ারি ৬, ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম
তিন মাসে ১০ শতাংশ দাবি পরিশোধ নন-লাইফ বীমায়

ঢাকা:  দেশে কার্যক্রম চালানো ৪৬টি নন-লাইফ বীমা কোম্পানির অনিষ্পন্ন দাবি দাঁড়িয়েছে ১৬ হাজার ৮৮৬টি। টাকার পরিমাণে অনিষ্পন্ন রয়েছে ২ হাজার ৮২৫ কোটি ৮৪ লাখ ৮৪ হাজার ৮৮৬ টাকা। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে কোম্পানিগুলোর দাবি উত্থাপন করা হয় ৩ হাজার ১৪০ কোটি ৪২ লাখ ৯৮ হাজার ৪৬৩ টাকা। দাবি পরিশোধ করা হয় ৩১৪ কোটি ৫৮ লাখ ১৩ হাজার ৫৭৭ টাকা। অর্থাৎ দাবি পরিশোধের পরিমাণ মাত্র ১০ দশমিক ০২ শতাংশ।

বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের (জুলাই-সেপ্টেম্বর) অনিরীক্ষিত দাবি সংক্রান্ত প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

আইডিআরএর প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে শুধু সাধারণ বীমা করপোরেশনের অনিষ্পন্ন দাবি জমেছে এক হাজার ৪৮৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫৭ হাজার ৮৭৮ টাকা। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানটিতে বীমা দাবি উত্থাপন হয় এক হাজার ৫৫৮ কোটি ৩৪ লাখ এক হাজার ৪৮৬ টাকা। পরিশোধ করেছে মাত্র ৭৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৩ হাজার ৬০৮ টাকা। দাবি পরিশোধের হার মাত্র ৪ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

দেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত নন-লাইফ ও পুনঃবীমা প্রতিষ্ঠান হলো সাধারণ বীমা করপোরেশন। প্রতিষ্ঠানটি সরাসরি যেমন বীমা করে তেমনি পুনঃবীমাও করে। পুনঃবীমা হলো একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অন্য একটি বীমা প্রতিষ্ঠানের আংশিক বা পূর্ণ বীমাদাবির দায়সহ বীমা কিনে নেওয়া।

বীমা আইন ২০১০ অনুযায়ী, গ্রাহক কোম্পানিতে বীমা দাবির আবেদন করার ৯০ দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করতে হয়। কিন্তু মাসের পর মাস, বছরের পর বছর পার হলেও কোম্পানিগুলো দাবি পরিশোধ করছে না।

অনিষ্পন্ন বীমা দাবিতে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স। এই কোম্পানির অনিষ্পন্ন দাবি জমেছে ২৯৪ কোটি ৫৩ লাখ ৮০ হাজার ৯৮৯ টাকা। কোম্পানিটির দাবি উত্থাপিত হয়েছিলো ৩০৪ কোটি ৫১ লাখ ৭২ হাজার ৯২৯ টাকা। পরিশোধ করেছে ৯৯৭ লাখ ৯১ হাজার ৯৪০ টাকা। অর্থাৎ দাবি পরিশোধ হয়েছে মাত্র ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ।

দাবি পরিশোধের দিক দিয়ে এরপরেই পিছিয়ে রয়েছে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স। এই কোম্পানিটির অনিষ্পন্ন দাবি রয়েছে ১৭৫ কোটি ১৫ লাখ ১০ হাজার ৪২২ টাকা। জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে দাবি উত্থাপন হয়েছিলো ১৮০ কোটি ৯৩ লাখ ৪০ হাজার ৬০৫ টাকা। পরিশোধ করেছে ৫ কোটি ৭৮ লাখ ৩০ হাজার ১৮৩ টাকা। অর্থাৎ দাবি পরিশোধ করেছে মাত্র ৩ দশমিক ২০ শতাংশ।

১৪৭ কোটি ৫৯ লাখ ৮০ হাজার ২১৬ টাকার অনিষ্পন্ন দাবি নিয়ে এরপরেই রয়েছে রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স। জুলাই-সেপ্টেম্বরে এই কোম্পানিতে মোট ১৮৪ কোটি ৯৩ লাখ ৩১ হাজার ২৪৬ টাকা। পরিশোধ করেছে মাত্র ৩৭ কোটি ৩৩ লাখ ৫১ হাজার ৩০ টাকা। দাবি পরিশোধ করেছে মাত্র ২০ দশমিক ১৯ শতাংশ।

এছাড়াও বীমা দাবি পরিশোধে পিছিয়ে রয়েছে ইস্টার্ন ইন্স্যুরেন্স, পিপলস ইন্স্যুরেন্স, নর্দার্ন ইসলামী ইন্স্যুরেন্স ও ঢাকা ইন্স্যুরেন্স।

সাধারণ বীমা করপোরেশনের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ বীমা করপোরেশনের কাছে যে অমীমাংসিত দাবি জমেছে তার বেশিরভাগই পুনঃবীমা দাবি। গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আমরা যে দাবি পেয়েছি তার মাত্র পাঁচ শতাংশ নিষ্পত্তি হয়েছে। অনেক গ্রাহক প্রয়োজনীয় নথি দিতে পারেননি। এই কারণে প্রতিষ্ঠানগুলো দাবি পরিশোধ করতে পারছে না।

সময়মতো বীমা দাবি পরিশোধ না করলে কী ধরনের ক্ষতি হতে পারে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হাসিনা শেখ বলেন, এমনিতেই আমাদের দেশে বীমা নিয়ে নেতিবাচক আলোচনা রয়েছে। এখন দাবি পরিশোধে কোম্পানির ধীরগতি আরও নেতিবাচক আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে নতুন গ্রাহকে তৈরিতে বাধা সৃষ্টি করছে।

বীমা দাবি নিষ্পত্তির বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএ’র পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম সোনালী নিউজকে বলেন, বীমা দাবি পরিশোধের জন্য কোম্পানিগুলোকে নিয়মিত আইডিআরএ তাগিদ দিচ্ছে। তার অংশ হিসেবে গত ২৩ ডিসেম্বর বীমা মালিকদের সংগঠনের সঙ্গে আইডিআরএ’র বৈঠক হয়েছে। সেখানে দাবি পরিশোধের জন্য বিশেষ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

এআর

Wordbridge School

অর্থনীতি বিভাগের আরো খবর

Link copied!