• ঢাকা
  • রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫, ২৮ পৌষ ১৪৩০

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বিসিআই পরিচালনা পর্ষদের সাক্ষাৎ


নিজস্ব প্রতিবেদক:  জানুয়ারি ১২, ২০২৫, ০৬:১৫ পিএম
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে বিসিআই পরিচালনা পর্ষদের সাক্ষাৎ

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সাথে সাক্ষাৎ করেছেন বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই) এর সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী (পারভেজ) এর নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল।

রোববার (১২ জানুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে এ সাক্ষাৎ পরবর্তী এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরকে বিসিআই এর পক্ষ হতে ‘আমার পণ্য আমার দেশ’ লোগো সম্বলিত একটি ফ্রেম উপহার প্রদান করা হয়। 

সভায় বিসিআই সভাপতি বলেন, বিসিআই সমগ্র বাংলাদেশ ভিত্তিক একক এবং একমাত্র জাতীয় শিল্প চেম্বার। বিসিআই স্থানীয় সকল শিল্পের উন্নয়নের পথে সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা নিরসনে কাজ করে চলেছে। দেশে বর্তমানে উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির কারণে সব প্রতিষ্ঠানের সেলস ড্রপ করেছে, ঋণের উচ্চ সুদ হার, বিদ্যুৎ ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, সবকিছু মিলিয়ে কোনো প্রতিষ্ঠান তার পূর্ণ সক্ষমতায় চলতে পারছে না। উৎপাদন ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে। চাহিদামত এলসি ওপেন করা যাচ্ছে না, বেসরকারি খাতে ক্রেডিট গ্রোথ ৭.৬৬ শতাংশ, নতুন গ্যাস সংযোগে মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে আবার আইএমএফ এর সুপারিশে বিভিন্ন পণ্যের উপর কর/মূসক বৃদ্ধি করা হয়েছে। 

তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহের টিকে থাকাই এখন চ্যালেঞ্জ। আমরা মনে করি আমাদের শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হবে আর শিল্প টিকে থাকলে বৈদেশিক মুদ্রার কোন সমস্যা হবে না।

বিসিআই সভাপতি বলেন, আমাদের কোন এক্সিট পলিসি নাই। বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় আমাদের এক্সিট পলিসি থাকা দরকার। 

এসময় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরাও মনে করি এক্সিট পলিসি থাকা দরকার আর এ লক্ষে ইতোমধ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি এটা দ্রুত সময়ের মধ্যে করা সম্ভব হবে।

বিসিআই সভাপতি বলেন, রপ্তানিমুখী শিল্পের নগদ সহায়তা পেতে আবেদনের পর ৯ মাস থেকে ১ বছর সময় লাগছে। যার ফলে শিল্প প্রতিষ্ঠান সমূহ সময় মত তাদের অপারেশন কস্ট মেটানো, তাদের কর্মীদের বেতনাদি পরিশোধ করতে পারছে না। আমরা মনে করি নগদ সহায়তা প্রদানের সময়সীমা ২ থেকে ৩ মাসের মধ্যে নামিয়ে আনা প্রয়োজন।

‘ব্যাংকের সিঙ্গেল বরোয়ার এক্সপোজার ফান্ডেড ১৫ শতাংশ এবং ননফান্ডেড ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এখানে টাকার অবমূল্যায়নকেও আমলে নেওয়া হচ্ছে না। আমার মনে হয় এটা আগের মত ২৫ শতাংশে রাখা উচিত। আমরা ঋণ ক্লাসিফাইডের ক্ষেত্রে ডিসেম্বর, ২০২৫ (এসএমএ) ৩ মাসে না এনে ৬ মাস এবং এসএস ৯ মাস রাখার প্রস্তাব করছি।’

তিনি আরও বলেন, সিঙ্গেল কোম্পানি একটি সিঙ্গেল আইডেনটিটি, আন্তর্জাতিক প্রাকটিস হচ্ছে কেউ যদি গ্রুপ অব কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন করে তবে তাদের গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। কিন্তু আমাদের দেশে গ্রুপ হিসেবে নিবন্ধন না করা হলেও ৩-৪ জন পরিচালক কমন হলে তাদেরকে গ্রুপ হিসেবে দেখা হয়। এবং কোন একজন পরিচালক কোম্পানি থেকে বের হয়ে গেলেও সে অন্য কোথাও যদি কোনো ভাবে সিক হয়ে যায় তবে তার দায়ভার নিতে হয়। এটার একটি ক্লারিফিকেশন দরকার।

বর্তমান পরিস্থিতিতে সিএমএসই খাত সব থেকে ক্ষতির মুখে পড়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের সিএমএসই খাতকে টিকিয়ে রাখতে ব্যবস্থা নিতে হবে। আমরা মনে করি সিএমএসই খাতের বিশেষ তহবিল এবং নিম্ম হারে সুদের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এ খাতে একটি জেলা বা একটি ক্লাস্টারকে পাইলট ধরে ডিজিটাল প্লাটফর্ম ব্যবহার করে অর্থায়ন করা যেতে পারে।

সভায় উপস্থিত থেকে নিজ নিজ সেক্টরের সমস্যা তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন মো. আনোয়ার হোসেন, প্রশাসক, বিজিএমইএ; নাজমুল হাসান সোহেল, সহ-সভাপতি, লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ; মো: হাসান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, সিটি গ্রুপ; মতিউর রহমান, চেয়ারম্যান, উত্তরা মোটর কর্পোরেশন লিমিডেট; আব্দুল হক, সভাপতি, বারভিডা; আহসান খান চৌধুরী, পরিচালক, বিসিআই ও চেয়ারম্যান, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ; শাদাব আহমেদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, কোকা-কোলা বাংলাদেশ লিমিটেড; মঈনুল ইসলাম স্বপন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, বিসিএমইএ ও ভাইস চেয়ারম্যান, মন্নু গ্রুপ; প্রীতি চক্রবর্তী, সহ-সভাপতি, বিসিআই; মোহাম্মদ ইউনুছ, সহ-সভাপতি, বিসিআই, ভাইস চেয়ারম্যান, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক পরিচালক পর্ষদ ও ইউনুছ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক; অমিতাভ চক্রবর্তী, উপদেষ্টা, সিটি গ্রুপ; মো. শাহরিয়ার, সভাপতি, বিজিএপিএমইএ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বিসিআই এর প্রতিনিধিদলের বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শোনেন এবং বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল লক্ষ্য এখন মূদ্রাস্ফীতি কমানো, আমরা আশা করি আগামী জুন নাগাদ মূদ্রাস্ফীতি ৭-৮ এর মধ্যে থাকবে। আমাদের বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বৃদ্ধির জন্য কাজ করছি। সরকারি ব্যয় কমানোর জন্য সুপারিশ করছি যাতে বেসরকারি খাতে অর্থ প্রবাহ বাড়াতে পারি। কিন্তু ডিপোজিট বাড়ছে না, ডিপোজিট গ্রোথ ৭ শতাংশ। অর্থ প্রবাহ বাড়াতে হলে ডিপোজিট বাড়াতে হবে।

তিনি বলেন, বর্তমানে ডলারের ক্রাইসিস নেই। অর্থনীতি স্বাভাবিক হচ্ছে কিন্তু একটু সময় লাগবে। আগামী রমজানে যাতে নিত্যপণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে লক্ষ্য আছে এবং আমরা সে লক্ষে ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমি মনে করি দীর্ঘ মেয়াদি অর্থায়নের জন্য বন্ড মার্কেটে যেতে হবে, আমাদের করপোরেট বন্ডের জন্য কাজ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংক পূর্ণ সহযোগিতা প্রদান করবে।

পরিশেষে সকলের বক্তব্য ধৈর্য্য সহকারে শোনেন এবং বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য গভর্নরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিসিআই সভাপতি।

এএইচ/আইএ

Wordbridge School
Link copied!