• ঢাকা
  • শনিবার, ০১ মার্চ, ২০২৫, ১৬ ফাল্গুন ১৪৩০

সিইও নিয়োগে আইন মানছে না ৮ জীবন বীমা কোম্পানি


আবদুল হাকিম জানুয়ারি ২৯, ২০২৫, ০৫:১১ পিএম
সিইও নিয়োগে আইন মানছে না ৮ জীবন বীমা কোম্পানি

ঢাকা: বীমা খাতের সংকট বহুদিনের। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানিতে নেই যোগ্য মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা। কোন রকম জোড়াতালি দিয়ে চলছে কার্যক্রম। তবে দক্ষ লোকের সংকটে এই খাত। দেশে ব্যবসা পরিচালনা করা এমন অন্তত ৮টি জীবন বীমা কোম্পানি মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নিয়োগে আইন মানছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বীমা কোম্পানিগুলো দেখভাল বা নিয়ন্ত্রণ করে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। প্রতিষ্ঠানটি বীমা কোম্পানির উন্নয়নে যেমন কাজ করে তেমনি কোম্পানিগুলোর জনবল নিয়োগে, বিশেষ করে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) নিয়োগ অনুমোদনের কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করে। তবে ৮টি কোম্পানি সিইও নিয়োগে আইডিআরএর নিয়ম মানছে না। প্রকারান্তরে তারা কর্তৃপক্ষকে ‘বৃদ্ধাঙ্গুলি’ দেখাচ্ছে।

জানা গেছে, আইডিআরএর করা আইন অনুযায়ী, বীমা কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার পদ ৩ মাস বা সর্বসাকল্যে ৬ মাসের বেশি খালি রাখার সুযোগ নেই। সেখানে বছরের পর বছর মুখ্য নির্বাহীর পদটি ভারপ্রাপ্ত বা চলতি দায়িত্ব দিয়ে চালালেও কার্যকর ভূমিকা পালন করছে না সংস্থাটি। উল্টো ‘যোগ্য’ সিইও’র অভাবের দোহায় দিয়ে নিজেদের করা আইন প্রতিনিয়ত নিজেরাই ভাঙছে আইডিআরএ।

সিইও নিয়োগে আইন না মানা কোম্পানিগুলো হলো- গার্ডিয়ান লাইফ, আকিজ তাকাফুল লাইফ, সোনালী লাইফ, মার্কেন্টাল ইসলামী লাইফ, যমুনা লাইফ, সান লাইফ, হোমল্যান্ড লাইফ ও বায়রা লাইফ।

জানা গেছে, দেশের চতুর্থ প্রজন্মের জীবন বীমা প্রতিষ্ঠান গার্ডিয়ান লাইফ চলছে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়ে। ২০২১ সালের জানুয়ারি মাসের শুরুতে কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) শেখ রাকিবুল করিমকে ডিএমডি পদে পদোন্নতি দিয়ে কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) দায়িত্ব দেওয়া হয়। আইন অনুযায়ী ৩ মাস বা বিশেষ ক্ষেত্রে তিনি ৬ মাস ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করার জন্য যোগ্য ছিলেন। তবে ৩ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করে গেলেও কোনো ব্যবস্থা নেয়নি আইডিআরএ। এখনো তিনি ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করছেন।

আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্সও চলছে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়ে। ২০২১ সালের ২৭ জুন কোম্পানিটির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগদান করেন মোহম্মদ আলমগীর চৌধুরী। প্রায় সাড়ে তিন বছর তিনি ভারপ্রাপ্ত হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কোম্পানি কর্তৃপক্ষ আলমগীর চৌধুরীকে পূর্ণাঙ্গ মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করলেও গত ১৫ জানুয়ারি আইডিআরএ তার আবেদন না-মঞ্জুর করে।

এদিকে ২০২০ সালের ২৬ জুন এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সোনালী লাইফ ইন্স্যুরেন্সের মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয় মীর রাশেদ বিন আমানকে। সাড়ে ৩ বছর ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন করার পর অর্থ আত্মসাৎ, অনিয়ম ও নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগে গত ১৪ জানুয়ারি তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। রাশেদ বিন আমানের দায়িত্বকালে সোনালী লাইফের একাধিক অনুষ্ঠানে আইডিআরএর তৎকালীন চেয়ারম্যান সশরীরে উপস্থিত হয়ে তার এবং কোম্পানির প্রশংসা করেছেন।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন পরিপালন না করায় মীর রাশেদ বীন আমান বা সোনালী লাইফের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে সহযোগিতা করেছে আইডিআরএ। এতে একদিকে যেমন তারা নিজেদের তৈরি করা আইন লঙ্ঘন করেছে; অন্যদিকে অন্য কোম্পানিগুলোকে আইন পরিপালনে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। কোম্পানির ওয়েবসাইটে দেওয়া সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মুখ‌্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত ব‌্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। নিয়ম অনুযায়ী তিনিও ভারপ্রাপ্ত সিইও হিসেবে ৬ মাস পার করেছেন।

মার্কেন্টাল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্সও চলছে ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা দিয়ে। চলতি বছরের আগস্টে এসকে. আব্দুর রশিদকে ভারপ্রাপ্ত মুখ‌্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তার দায়িত্ব পালনের মেয়াদ ৬ মাস হতে চললেও পূর্ণাঙ্গ সিইও নিয়োগের কোনো তোড়জোড় দেখা যাচ্ছে না।

গত বছরের ২৯ আগস্ট থেকে যমুনা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার (সিইও) চলতি দায়িত্ব পালন করা ড. বিশ্বজিৎ কুমার মণ্ডলকে চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি অব্যাহতি দিয়েছে কোম্পানি। ফলে সিইও শূন্য রয়েছে কোম্পানিটি। তবে যমুনা লাইফের ওয়েবসাইটে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এখনো বিশ্বজিৎ কুমার মন্ডলের নাম রয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, এখনো তিনি সিইওর চলতি দায়িত্ব পালন করছেন।

বায়রা লাইফও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগে নিয়ম মানছে না। এই কোম্পানিতে বর্তমানে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন কোম্পানিটির চিফ ফাইন্যান্সিয়াল অফিসার ও কোম্পানি সেক্রেটারি মো. মামুন খান। তার দায়িত্ব পালনের মেয়াদ ৬ মাস অতিক্রম করেছে বলে জানিয়েছেন কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা।

হোমল্যান্ড লাইফে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার চলতি দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ আবদুল মতিন। তার দায়িত্ব পালনের মেয়াদ ইতিমধ্যে ৩ মাস অতিক্রম করেছে। তবে তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর স্থবিরতা কাটিয়ে কোম্পানির স্বাভাবিক কার্যক্রমে গতি এসেছে। কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কোম্পানির বোর্ড আবদুল মতিনকে পূর্ণাঙ্গ সিইও নিয়োগ দিতে ইতিমধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিগত সময়ে সিইও নিয়োগে কোম্পানিগুলো কোনো নিয়মের তোয়াক্কা করেনি। তবে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আইডিআরএ এ ব্যাপার কঠোর হবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা। তবে বীমা কোম্পানিগুলোর মধ্যে শৃঙ্খলা ফেরাতে আইডিআরএ আগের থেকে আরও কঠোর বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষের পরিচালক ও মুখপাত্র জাহাঙ্গীর আলম।

আইএ

Wordbridge School
Link copied!