Menu
ঢাকা: ঈদ সালামি হিসেবে বড়দের কাছ থেকে নতুন টাকা নেওয়া ছোটদের আনন্দ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে। কিন্তু এবারের ঈদে বাজারে নতুন টাকা বিনিময় করছে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
ফলে খোলাবাজারে নতুন টাকার অস্বাভাবিক টান পড়েছে। এ সুযোগে ক্রেতাদের কাছে চড়া দাম হাঁকাচ্ছেন নতুন টাকার ভাসমান দোকানগুলো। সুযোগ হাতছাড়া করছেন না মৌসুমি কারবারিরাও। ১০ টাকার ১ হাজার টাকার বান্ডেলের বিপরীতে নিচ্ছেন ১৫০০ টাকা পর্যন্ত।
গুলিস্তান ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংলগ্ন নতুন টাকার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এ বছর ২, ৫, ১০, ২০ ও ৫০ টাকাসহ সব ধরনের নতুন নোট কেনার ক্ষেত্রে দোকানিরা বাড়তি দাম চাচ্ছেন। ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা বিতরণ না হওয়ার প্রভাব পড়েছে নতুন টাকার বাজারে।
বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে এখন নতুন নোটের তীব্র সংকট। ব্যাংক থেকেও নতুন নোট মেলানো যাচ্ছে না। তাদের যার কাছে যেমন সংগ্রহ ছিল তা নিয়েই দোকান খুলে বসেছেন। সরবরাহ না থাকায় দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে বাড়তি দামেও শেষ পর্যন্ত ক্রেতাদের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে কি না, এ নিয়ে অনিশ্চয়তার কথা জানিয়েছেন দোকানিরা।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিবছর ঈদ সামনে রেখে বাজারে নতুন নোট ছাড়ে। তবে এবার ঈদে জনসাধারণের মধ্যে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
কিন্তু নতুন টাকায় (আগেই ছাপিয়ে রাখা) শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় তা বিনিময় স্থগিত করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।
এ বছর নতুন নোটের জন্য প্রতি বান্ডিলে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা বাড়তি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। যেখানে গত বছর বান্ডিলপ্রতি বাড়তি খরচ হতো ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।- বলছেন বিক্রেতারা
বছরজুড়ে যারা ছেঁড়া ও পুরোনো টাকার ব্যবসা করেন, তারা ঈদে নতুন নোট বাজারে আসবে না জানার পরই দাম বাড়িয়ে দেন। বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর নতুন নোটের জন্য প্রতি বান্ডিলে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি গুনতে হচ্ছে ক্রেতাদের। যেখানে গত বছর বান্ডিলপ্রতি বাড়তি খরচ হতো ২০০ থেকে ২৫০ টাকা।
রাজধানীর অস্থায়ী দোকানগুলোয় প্রতি বান্ডিলে গত বছরের ঈদের মৌসুমের চেয়ে এবার ২৫০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। প্রতিটি বান্ডিলে ১০০ পিস নোট থাকে। এবার ১০ টাকার নতুন নোটের একটি বান্ডিল ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা চাইছেন বিক্রেতা।
অর্থাৎ এক বান্ডিলে ১০০টি নোটে বাড়তি ৫০০ টাকা চাওয়া হচ্ছে, গত বছর যা ২০০ থেকে ২৫০ টাকা বেশি দিয়েই পাওয়া যেতো। একই ভাবে ২০ ও ৫০ টাকার প্রতিটি বান্ডিলেও ক্রেতাদের বাড়তি গুনতে হচ্ছে ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা।
তবে তুলনামূলক কিছুটা কম ১০০ টাকার নোটের দাম। বান্ডিলপ্রতি বাড়তি ৩৫০ টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে ১০০ টাকার নতুন নোট। এছাড়া ২ ও ৫ টাকার প্রতি বান্ডিলে বাড়তি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা নেওয়া হচ্ছে। ২ টাকার প্রতি বান্ডিলে দাম ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা আর ৫ টাকার প্রতি বান্ডিলের দাম চাওয়া হচ্ছে ৭০০ টাকা পর্যন্ত।
অন্যদিকে, প্রতি বছরের মতো এবারও বাজারে ১০, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা বেশি। এ কারণে অন্যান্য নোটের বান্ডিল কেনার ক্ষেত্রে দরদাম করে ২০-৩০ টাকা কম দেওয়া গেলেও ১০, ২০ ও ৫০ টাকার এ তিন নোটে কোনো ছাড় দিচ্ছেন না বিক্রেতারা।
গুলিস্তানের খোলাবাজারে নতুন নোটের ব্যবসা করেন মো. সুমন বলেন, ‘এবার দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাও কম আসছেন। আমাদের কিছুই করার নেই। সরবরাহ বেশি হলে দরদাম করেও বিক্রি করা যেতো।’
প্রতি বছরই গ্রামে যাই নতুন নোট নিয়ে। ছোটদের ঈদ সালামিতে নতুন নোট দেওয়া মানে তাদের জন্য বাড়তি আনন্দ। এবার আর সেই সুযোগ হচ্ছে না। দাম অনেক চড়া। খুব কম পরিমাণ নোট সংগ্রহ করলাম বলে জানান মোহাম্মদ ইব্রাহিম হোসেন।
প্রতিবছরের এবারও ঈদুল ফিতরের আগে নতুন টাকা বিনিময়ের জন্য দিনক্ষণ ঠিক করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। বুধবার (১৯ মার্চ) থেকে নোট বিনিময়ের কথা ছিল। এ সংক্রান্ত নির্দেশনাও দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু হঠাৎ করেই জনসাধারণের মাঝে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত করা হয়।
নতুন টাকায় থাকবে ‘জুলাই বিপ্লবের গ্রাফিতি’
মূলত, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি বাদ দিয়ে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আনতে না পারায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা।
এদিকে আগামী এপ্রিল-মে নাগাদ নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে। নতুন নকশার নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাখা হবে না। সেখানে জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি ও বিভিন্ন স্থাপনা স্থান পাবে
বিভিন্ন ব্যাংককে চিঠি দিয়ে ঈদ ঘিরে নতুন নোট বিনিময় স্থগিত রাখতে গত ১০ মার্চ নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
নির্দেশনায় বলা হয়, আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে জনসাধারণের মাঝে নতুন নোট বিনিময় কার্যক্রম বন্ধ রাখতে পরামর্শ দেওয়া হলো। পাশাপাশি ব্যাংকের শাখায় যে নতুন নোট গচ্ছিত রয়েছে, তা বিনিময় না করে সংশ্লিষ্ট শাখায় সংরক্ষণের জন্য বলা হলো।
দিনক্ষণ ঠিক করেও হঠাৎ নতুন নোট বিনিময় বন্ধের কারণ অনুসন্ধানে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, টাকায় শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি থাকায় কিছু পক্ষ আপত্তি তোলে। আগামী এপ্রিল-মে নাগাদ নতুন নকশার নোট বাজারে আসবে। নতুন নকশার নোটে শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাখা হবে না। সেখানে জুলাই আন্দোলনের গ্রাফিতি ও বিভিন্ন স্থাপনা স্থান পাবে।
এআর
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT