Menu
ঢাকা : বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন বোর্ডের (বিডা) উদ্যোগে শুরু হয়েছে বিনিয়োগ সম্মেলন। গতকাল সোমবার রাজধানীর ইন্টারকন্টিনেন্টাল হোটেলে সম্মেলনের প্রথম দিনে সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে স্টার্সআপ কোম্পানির বিষয়ে।
স্টার্সআপ কোম্পানির নানা সমস্যা আলোচনার পাশাপাশি এ খাতের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্যও একাধিক উপায় উঠে আসে সম্মেলনে। একই দিনে চট্টগ্রামের কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরআই শিল্পাঞ্চল পরিবীক্ষণ করেন বিদেশি বিনিয়োগকারীরা। এসব স্থানীয় বিনিয়োগ পরিবেশ সন্তোষজনক হলে অনেক বিদেশি উদ্যোক্তা সেখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রথম দিনের অনুষ্ঠান শেষে হোটেল ইন্টার কন্টিনেন্টালে সংবাদ সম্মেলনে বিস্তারিত জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব সফিকুল আলম ও প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফাইয়েজ আহমেদ তৈয়্যব।
সংবাদ সম্মেলনে চৌধুরী আশিক জানান, চারদিনব্যাপী সামিটের প্রথম দিন ২৫ দেশের ৭০ জন স্টার্টআপ বিনিয়োগকারী ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছেন। বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বড় অংশ ভ্রমণ করেছেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা কোরিয়ান ইপিজেড ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে। ৬০ থেকে ৭০ জনের একটি বড় গ্রুপ কোরিয়ান ইপিজেড পরিদর্শন করেছেন। চীন, নেদারল্যান্ডমহ বেশ কয়েকটি দেশের বিনিয়োগকারীরা এসেছেন।
বিনিয়োগকারীদের অধিকতর ভালো সেবা দিতে দিতে সরকার আন্তরিক জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বেটার সার্ভিস দিতে কী কী সমস্যা রয়েছে সে সব নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেছি। যারা চট্টগ্রামে অর্থনৈতিক অঞ্চল পরিদর্শনে গেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে আগামী ৬-১২ মাসের মধ্যে বিনিয়োগ আনার চেষ্টা করা হবে বলেও জানান তিনি।
চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, আমরা বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘমেয়াদে ভিশন ও চ্যালেঞ্জগুলোও বুঝিয়েছি। সামিটে শুধু ঢাকা থেকেই নয় সারা দেশ থেকে স্টার্টআপরা এসেছেন। তাদের কথা সরকার শুনতে হবে। উদ্যোক্তারা তাদের জটিলতা সরকারের চেয়ে বেটার বুঝেন।
এর আগে সকালে প্যানেল আলোচনায় বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান বলেন, আমরা সব সময় এক ধরনের রূপান্তরের মধ্যে যাচ্ছি। এখনও বাংলাদেশে ব্যবসা করার জন্য ট্রেড লাইসেন্স পাওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বিডার ভূমিকা প্রাথমিকভাবে দেশের ব্যবসা পরিবেশ নিশ্চিত করা আর বিশ্ববাজার থেকে ফান্ডিং সংগ্রহ করা। এ সামিটের মাধ্যমে বাংলাদেশ নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ধারণা পরিবর্তন হয়ে যাবে। আমার ধারণা যারা বাংলাদেশে সশরীরে আসবেন বিনিয়োগের উদ্দেশ্যে, তারা সত্যিকারের ভিন্ন চিত্র দেখতে পাবেন।
এক প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ডক্টর আহসান এইচ মনসুর বলেন, স্টার্টআপদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ভাবছে। তরুণদের আইডিয়াগুলো কিভাবে কাজে লাগানো যায়। স্টার্টআপদের জন্য ৫০০ কোটি টাকার কো-ফাইন্যান্সিং ফান্ড তৈরি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এটি আরো বাড়বে।
এ সেশনের সঞ্চালনা করেন শেয়ার ট্রপের সিইও সাদিয়া হক। এ সেশনে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিটি বিভাগের সচিব শীষ মোহাম্মদ, প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফাইয়্যেজ আহমেদ তৈয়্যব।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগের বাইরেও বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ করছে। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৮০০-৯০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ উন্মুক্ত করছে স্টার্টআপদের জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থায়নে বিশ্বাসী, আমরা সেভাবেই যাচ্ছি।
স্টার্টআপদের উদ্দেশ্যে গভর্নর বলেন, স্টার্টআপরা শুধু ঢাকাকেন্দ্রীকই বিনিয়োগ পাচ্ছে তা নয়, সারাদেশের যেকোনো স্থান থেকে তারা বিনিয়োগ নিতে পারছে। উদ্যোক্তারা হতাশ হলে নীতি নির্ধারকরা তাদের কথা শুনছেন।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক বলেন, কোনো বিনিয়োগকারী যদি স্বশরীরে বাংলাদেশে আসেন, তাহলে তিনি চিত্র দেখতে পাবেন। আমরা আপনাদের কথা বেশি শুনছি, আমরা কম কথা বলছি। আপনারা যা বলবেন আমরা তাই ফলো করবো।
ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে ফাইয়্যেজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, আমরা ইন্টারনেটের দাম গেটওয়ে লেভেল থেকে কমানোর উদ্যোগ নিচ্ছি। আর বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সুশাসন নিশ্চিতে কাজ করছে, সেটি সবার আগে আইসিটিতে নিশ্চিত করা হচ্ছে।
ভবিষ্যতে কোনো সরকারের ইন্টারনেট বন্ধ করার সুযোগ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ইন্টারনেট বন্ধ করবে না এটা নিশ্চিত। ভবিষ্যতের কোনো সরকারও তা বন্ধ করতে পারবে না। এসওপি আর এনজিএসও এমনভাবে সাজানো হয়েছে তাতে ইন্টারনেট বন্ধের কোনো পলিসি রাখা হয়নি।
স্টার্টআপদের উদ্দেশ্যে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর বলেন, ৯৫ শতাংশ স্টার্টআপ সফল হতে পারে না। সেজন্য আপনাদের স্বচ্ছ হতে হবে। ইমিডিয়েট রিটার্ন চাইবেন না। আপনাকে বিক্রি বাড়িয়ে যেতেই হবে, টাকা একদিন আসবেই। অপেক্ষা করতেই হবে। ভেঞ্চার ক্যাপিটালগুলোও আপনাদের জন্য বিনিয়োগ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে ফাইয়েজ আহমেদ তৈয়ব বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর দুটি বিনিয়োগের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। প্রথমত- বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৮০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ বিনিয়োগ আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকার স্টার্টআপ ফান্ড উন্মুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া প্রথম দিনে বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান ইনসেপ্টার দ্বিতীয় প্রজন্মের প্রতিষ্ঠান নাবিলা ১ মিলিয়ন ডলারের স্টার্টআপ ফান্ডিংয়ের ঘোষণা দিয়েছে।
জাইকার বাজেট সহায়তার একটি অংশ স্টার্টআপে দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ফাইয়্যেজ আহমেদ তৈয়্যব বলেন, জাপানের বিনিয়োগকারী জাইকা বাংলাদেশে বাজেট সহায়তা দিচ্ছে, তার একটি অংশ স্টার্টআপ ফান্ডিংয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে নিশ্চিত করেছেন অর্থসচিব। গভর্নরের কথা তুলে ধরে তৈয়্যব বলেন, গভর্নর বলেছেন বাংলাদেশ ব্যাংক এমন কোনো পলিসিকে গ্রহণ করবে না যাতে সহজ ঋণপ্রাপ্তিতে বাধা হয়।
এদিকে গতকাল চট্টগ্রামে বিনিয়োগের পরিবেশ প্রত্যক্ষ করেন বিদেশি বিনোয়োগকারীরা। এদিন চট্টগ্রামের আনোয়ারার কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (কেইপিজেড) ও মিরসরাই শিল্পাঞ্চল পরিদর্শন করেছেন চীন, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ ৪০টি দেশের ৭০ জনের একটি প্রতিনিধি দল। প্রথমে কেইপিজেড ও পরবর্তীতে মিরসরাই শিল্পাঞ্চল পরিদর্শন করেন বিনিয়োগকারীরা।
পরিদর্শনে গতকাল সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেইপিজেডে অবস্থিত ইয়াংওয়ান করপোরেশনের টেক্সটাইল, কেপিপি, আর্ট গ্যালারি, টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, মেডিকেলসহ বিভিন্ন কারখানা ঘুরে দেখেন। কারখানা পরিদর্শন শেষে ইয়াংওয়ান করপোরেশনের পক্ষ থেকে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সামনে কেইপিজেডে বিভিন্ন কর্মকান্ডের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরা হয়। ১৯৯৫ সালে গড়ে উঠা ৭০ লাখ বর্গফুটের পুরো এলাকাটিতে কেইপিজেডের ৪৮টি কারখানা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
এগুলোর বেশিরভাগই পোশাক কারখানা। এর বাইরে জুতা ও ব্যাগের একাধিক কারখানা রয়েছে। এসব কারখানায় সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজারের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে।
পরিদর্শনে আসা নেদারল্যান্ডসের বিনিয়োগকারী রিক জানান, এখানে অনেক সুবিধা রয়েছে, এখানকার কারখানা পরিদর্শন করে আমার কাছে খুব ভালো মনে হচ্ছে। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারিনি। তবে আমি দেখছি, আশা করি এখানকার পরিবেশ বিনিয়োগের উপযোগী।
এসময় পরিদর্শনে আসা বেজার পিডি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ফারুক বলেন, ‘আজ (গতকাল) বিডার উদ্যোগে ২টা কারখানা পরিদর্শন করা হবে। একটি কেইপিজেড এবং অন্যটি মিরসরাই শিল্পাঞ্চল। কেইপিজেডকে বেজার সাথে একিভূত করার যে মিশন সে লক্ষ্যে বেজা বিনিয়োগ বাড়াতে এই সম্মেলনের আয়োজন করেন। বিদেশিরা বাংলাদেশ সম্পর্কে অনেক কিছুই শুনে। সে শুনার বাস্তবিকভবে সরাসরি পরিদর্শন করতে তারা এখানে এসেছেন।’
এদিকে বিনিয়োগ সম্মেলনের আয়োজক প্রতিষ্ঠান বিডা জানিয়েছে, দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর লক্ষ্যে আয়োজিত এই আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ সম্মেলনে বিশ্বের ৫০টি দেশের ৫৫০ জনের বেশি বিনিয়োগকারী ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি অংশ নিচ্ছেন। এ জন্য সরাসরি বিনিয়োগ করবেন এমন বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি বিশ্বের নামিদামি বেশ কিছু কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী কিংবা প্রতিনিধিরাও নিবন্ধন করেছেন। মূলত যারা শিগগিরই শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহী, সেসব বিনিয়োগকারীদের এই পরিদর্শনে নিয়ে আসা হয়।
অপরদিকে প্রায় ৩০ হাজার একর জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে মিরসরাই শিল্পাঞ্চল। এখানে প্রায় দেড় লাখের বেশি শ্রমিক কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবে। ইতোমধ্যে জাপান, চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগকারীরা এখানে শিল্প স্থাপন করেছে।
এমটিআই
© 2025 সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত | সোনালীনিউজ.কম
Powered By: Sonali IT