আমাদের জনগোষ্ঠীর একটি বড় অংশ হলো- নারী ও শিশু-কিশোর। সমাজ উন্নয়নে নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া যেমন একটি জাতির উন্নয়ন সম্ভব নয়, তেমনই শিশু-কিশোররা হলো আমাদের আগামী দিনের দেশ গঠনের কর্ণধার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে দেশে জঙ্গিবাদে নারী ও শিশু-কিশোরদের সম্পৃক্ততা নতুন মাত্রা যোগ করেছে, এটি একটি সতর্কবার্তা বলে মনে করেন অভিজ্ঞমহল। কারণ নারী ও শিশু-কিশোরদের জঙ্গি কাজে জড়িয়ে পড়া চরম উদ্বেগের বিষয়। পুলিশের সন্ত্রাসবিরোধী ইউনিটের চোখ ফাঁকি দিতেই জঙ্গিরা নারী ও শিশু-কিশোরদের কাজে লাগাতে তৎপর। সম্প্রতি রাজধানীর আশকোনায় নিজ শিশুসন্তানকে নিয়ে আত্মঘাতী বোমায় এক নারীর মৃত্যুর ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। এ ধরনের ঘটনা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নতুন কৌশল নিতে হবে এমন পরামর্শ তাদের।
গত ১০ সেপ্টেম্বর আজিমপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর ১৪ বছরের কিশোর তাহরীম কাদেরীসহ তিন শিশুকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। অভিযানের সময় আত্মহত্যা করেন তাহরীমের বাবা জঙ্গি তানভীর কাদেরী। তাহরীমের যমজ ভাই আফিফ কাদেরী গত ২৪ ডিসেম্বর আশকোনা অভিযানে নিহত হয়। দেশে নারীদের জঙ্গিবাদে জড়ানোর ঘটনা নতুন না হলেও শিশু-কিশোরদের সঙ্গে রাখার ঘটনায় উদ্বেগ দেখা দিয়েছে নতুন করে। নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, জঙ্গিবাদ এমন রূপ নিলে তা ঠেকানোর উপায় নিয়ে ভাবতে হবে। এদিকে দুর্ধর্ষ জঙ্গিরা যাতে কোনোভাবেই নারী ও শিশু-কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষভাবে নজরে রাখার তাগিদ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
উল্লেখ্য, একজন সংস্কিৃতবান নারী, শিশু-কিশোর কখনো জঙ্গি তৎপরতা কিংবা মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাসী কাজে অংশ নিতে পারে না। বরং সে সমাজের আলোকিত মানুষ হিসেবে এগিয়ে আসে সাধারণ মানুষের জন্য। তাই দেশে একটি সাংস্কৃতিক গণজাগরণ তৈরি করতে হবে। জেলা-উপজেলায় শিল্পকলা একাডেমি, শিশু একাডেমিগুলো এখন ঘুমুচ্ছে- তাদের জাগিয়ে তুলতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও বিতর্ক প্রতিযোগিতার মতো সহশিক্ষা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে জঙ্গিবাদবিরোধী কমিটি থাকতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যেসব স্থানে জঙ্গিবাদ নিয়ে বৈঠক হতে পারে, সে জায়গাগুলো চিহ্নিত করে নজরদারি বাড়াতে হবে। মসজিদ বা নামাজের স্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কোনো গোপন সভায় মিলিত হতে পারবে না। স্কুল-কলেজে শিক্ষার্থীরা অনিয়মিত হলে অবশ্যই অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। লাইব্রেরিতে জঙ্গিবাদের কোনো বইপুস্তক থাকলে তা সরিয়ে ফেলতে হবে। সন্ত্রাসবাদবিরোধী কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অংশ নিতে হবে। একাডেমিক কার্যক্রমেও জঙ্গিবাদবিরোধী বিষয় থাকতে হবে। এখানে এথিকস ও নন্দনতত্ত্বের মতো বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নিয়মিতভাবে বাঙালি জাতিসত্তার সাংস্কৃতিক চর্চা থাকতে হবে। যৌক্তিক কারণ ছাড়া কোনো শিক্ষার্থী অনুপস্থিত থাকলে পুলিশকে জানাতে হবে। অপরাধে জড়িত বলে সন্দেহ হলেই কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সন্ত্রাসবাদবিরোধী গবেষণা হতে হবে।
জঙ্গিবাদ আজ কোনো দেশ বা অঞ্চলের সমস্যা নয়, এটি এক বৈশ্বিক সমস্যায় রূপ নিয়েছে। তাই আমাদের দেশে জঙ্গি তৎপরতা রুখতে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ জন্য অভিভাবক শিক্ষকসহ সর্বস্তরের সচেতন নাগরিককেই এক হতে হবে।
সোনালীনিউজ/ঢাকা/এমটিআই