• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১

জাবিতে হল প্রভোস্টের সাথে হলে যায় ছাগল 


জাবি প্রতিনিধি নভেম্বর ৭, ২০২০, ১২:৩৮ পিএম
জাবিতে হল প্রভোস্টের সাথে হলে যায় ছাগল 

জাবি: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সালাম বরকত হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক আলী আজম তালুকদারের হলে ছাগল পালন নিয়ে যখন সমালোচনায় মুখর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তখন আরেক বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন তিনি। হলে কেন ছাগল পালন করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার বাসায় ছাগল আছে, ছাগলের ঘরও আছে। কিন্তু আমি হলে গেলে ছাগলও আমার সাথে যায় এটা আমি অস্বীকার করব না।’

এদিকে অভিযোগ আছে ক্ষমতার অপব্যবহার করে হলের কর্মচারীদের জোরপূর্বকভাবে ছাগল পালনের মত নানা নিয়ম বহির্ভূত কাজ করতে বাধ্য করেন তিনি। আবার পান থেকে চুন খসলেই ওই কর্মচারীদেরকেই তিনি লঘু পাপে গুরু দন্ড দিয়ে বসেন। এমন অরাজক পরিস্থিতিতে হলের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা পড়েছেন চরম বিপাকে। এভাবে একের পর এক অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতায় অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীরাও। এসব অনিয়ম নিয়ে শিক্ষার্থীরা মুখ খুললে নানা ভাবে তাদেরকে হেনস্তা করছেন এই প্রভোস্ট। 
জানা যায় লকডাউনের শুরুতে শিক্ষার্থীরা আবাসিক হল ত্যাগ করলে ফাঁকা হলে ছাগল পালন শুরু করেন এই হল প্রভোস্ট। এ বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উঠে আসলে সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি। এ নিয়ে একাধিক জাতীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হলে দেশব্যাপী আলোচনার সৃষ্টি হয়। ছাগল পালনের বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করায় হলের ৪২তম ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে হেনস্তা করেন অধ্যাপক আজম। 

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, ‘যখন হল ভ্যাকেন্ট করা হয় তখন যে ছেলের কথা বলছো ঐ ছেলে জোর করে হলে থাকতে চায়। আমরা অনুরোধ করে তাকে হল থেকে বের করে দেই। ছেলেটা ছাত্রলীগ করত কিন্তু আমাদের হলের না। কিন্তু আমাদের হলে থাকত।
এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য, রাস্তা মেরামতের টাকা লোপাট, নিয়ম বহির্ভূতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবাস সার্বক্ষণিক ব্যবহার, বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃক্ষ কর্তন, বাসা মেরামতের নামে বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থের অপচয়, কমিশন বাণিজ্য করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ দেয়া, পরিবহনের ইট চুরিসহ অসংখ্য গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। 

বিভিন্ন সময় এসব অভিযোগের খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ হলেও অদৃশ্য কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের মত আরথিক সংশ্লিষ্ট একাধিক কমিটিতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। 

শিক্ষক সমিতির ভিসিপন্থী একাধিক সদস্যের সাথে কথা বলে জানা যায়, অধ্যাপক আজমের বিরুদ্ধে এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে ইমেজ সংকটে পড়ে ভিসিপন্থীরা। এমতাবস্থায় ভিসিপন্থী সিনিয়র শিক্ষকরা তাকে অপসারণের জন্য আল্টিমেটাম দেন। এ সময় ভিসি অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম তার বিষয়ে উপযুক্ত সমাধান করার আশ্বাস দেন। কিন্তু কিছু দিন না যেতেই অধ্যাপক আজমকে বহাল তবিয়তে রেখে আরো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেন ভিসি। 

পরিবহন সংশ্লিষ্টদের সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ করোনার এই সময় ফাঁকা ক্যাম্পাসকে কাজে লাগিয়ে অধ্যাপক আজম পরিবহনের ইট নিজ হলে নিয়ে যান। সেই ইট বহনে ব্যবহার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের লাশবাহী গাড়ি। এসব ইট হলটির অফিস নির্মাণ কাজে ব্যবহার করে কন্ট্রাক্টারের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া অভিযোগ আছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে নিজ এলাকা সিরাজগঞ্জ থেকে চারজনকে এনে বিনা বেতনে খাটাচ্ছেন এই অধ্যাপক।

এসব বিষয়ে অধ্যাপক আলী আজম বলেন, ‘না না ওখানে কন্টাক্টার কাজ করছে আমি কেন ইট দিয়ে আসব। কাউকে চাকরি দেওয়ার কথা আমি জানি না। তোমরা এসে দেখতে পারো। এসব অভিযোগ নিয়ে আমি বারেবারে কথা বলেছি। তোমরা কার কাছ থেকে এসব শুনো জানি না।’

জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে কারণে মার্চের ১৭ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের ঘোষণা দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১৮ তারিখ বেলা ১১টার মধ্যে হল ত্যাগ করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। স্বল্পমেয়াদী ছুটির অনুমান করে অনেক প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র হলে রেখে যায় শিক্ষার্থীরা। ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বন্ধ বাড়তে থাকলে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিতে হলে আসেন তারা। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জরুরি জিনিসপত্র গ্রহণে হলে প্রবেশের মৌখিক অনুমতি থাকলেও অধ্যাপক আলী আজম নিজের মন মতো নানা নিয়ম তৈরি করে শিক্ষার্থীদের হলে প্রবেশের ক্ষেত্রে হেনস্থা করছেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ৪৩ ব্যাচের স্নাতকোত্তরের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘পড়াশুনার প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন একটি মেসে উঠেছি। সেখানে অবস্থানের জন্য আমার তোষকসহ প্রয়োজনীয় বই খাতার প্রয়োজন। এগুলোর জন্য আমি হলে প্রবেশ করতে চাইলে প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার আমাকে সকল আসবাবপত্র নিয়ে একেবারে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।’ তিনি বলেন, ‘আমার ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পড়াশুনা শেষ হয়েছে, তাই আমাকে হল ত্যাগ করতে হবে। কিন্তু এখনো আমার পরীক্ষা বাকি আছে।’

এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে, অধ্যাপক আলী আজম তালুকদার বলেন, এসব মিথ্যা কথা বলছে। সব ছাত্ররা প্রয়োজনীয় জিনিস নিতে পারতেছে। ৪৩ ব্যাচের না! তাহলে তো নিতে পারতেছে। আমরা ৪২ ব্যাচের জন্য একটু রিসটিকশন দিছি সেটা তোমরা জানোয়। বাকিদের জন্য বলেছি সরাসরি আমাকে ফোন দিতে। পরে হলের সিকবয় ও গার্ডের সাথে যোগাযোগ আমি করিয়ে দিচ্ছি ছাত্রদের। এখানে কেউ অভিযোগ করলে তা মিথ্যা অভিযোগ।  

সোনালীনিউজ/এসএস/এসআই

Wordbridge School
Link copied!