• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর, ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১

পাঠের ক্ষতি পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ


নিজস্ব প্রতিবেদক জানুয়ারি ২১, ২০২১, ০৪:০৪ পিএম
পাঠের ক্ষতি পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ

ঢাকা : করোনা মহামারীর কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কবে খুলে দেওয়া হবে তা এখনো কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। বিশ্বব্যাপী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় অনেক দেশই আবারো লকডাউন ঘোষণা করেছে।

আমাদের দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ তেমন প্রভাব ফেলতে না পারলেও জনমনে এখনো শঙ্কা কাটছে না। সরকারও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার বিষয়ে পরিস্থিতি বিবেচনার কথা বলছে বারবার। তবে আশা করা হচ্ছে কয়েক মাসের মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো খুলে দেওয়া হবে। কারণ আমাদের দেশেও করোনার টিকা এসে গেছে। শিগগিরই এর প্রয়োগ শুরু হবে।

কিন্তু তা সত্ত্বেও করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে পঠন-পাঠনের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা ২০২১ সালে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা।

করোনার কারণে সৃষ্ট বৈষম্য দূর করা, বাণিজ্যিকীকরণ বন্ধ এবং সর্বস্তরে আইসিটিনির্ভর শিক্ষা কার্যকর করা এ বছরে কঠিন হয়ে উঠবে। এ তিন সমস্যা সমাধানে হলে আরো তিনটি বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে।

সেগুলো হচ্ছে-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের কারণে শিক্ষার্থীদের পাঠন-পাঠনের ক্ষতি পোষানো, ধারাবাহিক মূল্যায়ন নিশ্চিত করা এবং মনো-সামাজিক সমস্যা থেকে বের করে এনে শিক্ষার্থীদের সামাজিকীকরণ করা।

শিক্ষাবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে পঠন-পাঠনের যে ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করা ২০২১ সালে বড় চ্যালেঞ্জ।

অনলাইন কার্যক্রমে শিক্ষার্থীরা অংশ নিলেও তাদের ধারাবাহিক মূল্যায়ন হয়নি। চেষ্টা করা হচ্ছে অ্যাসাইনমেন্টের মাধ্যমে সেটা পূরণ করার। দীর্ঘদিন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে মনো-সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। তাদের সামাজিকীকরণ করা সামনের দিনে বড় চ্যালেঞ্জ।

করোনা পরিস্থিতি অনুকূলে আসার পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিলে শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিদ্যালয়ে কার্যকর পঠন-পাঠন নিশ্চিত করা খুব সহজ হবে না। এসব চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে আমাদের।

গণস্বাক্ষরতা অভিযানের উপপরিচালক কে এম এনামুল বলেন, করোনার কারণে ২০২০ সালে শহর ও গ্রামের মধ্যে বৈষম্য পরিলক্ষিত হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের বড় অংশ অনলাইন শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেনি। শহরের শিক্ষার্থীদের চেয়ে পিছিয়ে পড়েছে গ্রামের শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর শিক্ষা নিশ্চিত করা বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে আমাদের সামনে। গত বছর প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিল।

শিক্ষাবিদদের মতে, করোনার কারণে শিক্ষায় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের এগিয়ে নিতে অভিভাবকরা কোচিং করানোসহ বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালাবেন। ফলে বিদ্যালয় খুলে দিলেও শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হবে। এতেও শিক্ষা ক্ষেত্রে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যিকীকরণ শুরু হবে।

২০২১ সালে বিদ্যালয় খুলে দেওয়া হলেও করোনার প্রভাবমুক্ত হতে সময় লাগবে। এজন্য আইসিটিভিত্তিক শিক্ষা খুবই জরুরি।

কিন্তু ২০২০ সালের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, আইসিটি শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো নাজুক অবস্থায়। করোনার কারণে আইসিটিভিত্তিক শিক্ষা শুরু করলেও কেন্দ্রীয়ভাবে আইসিটি শিক্ষা ব্যবস্থা চালু নেই দেশে।

বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইনে যে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে তা সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করতে পারবে না।

সমস্যা সমাধানে যেসব সুপারিশ করেছেন শিক্ষাবিদরা তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষকদের আইসিটি বিষয়ে অভিজ্ঞ করে তোলা। শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই দেওয়া হয়। বিনামূল্যে বা স্বল্প মূল্যে বিভিন্ন ডিভাইস দিয়ে অনলাইন ক্লাসে সব শিক্ষার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। শেখ রাসেল আইসিটি ল্যাব কার্যকর করতে হবে।

শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত এবং বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কী হবে তা ঠিক করতে হবে। উপজেলাভিত্তিক শিক্ষা পরিকল্পনা প্রস্তুত করা এবং করোনার কারণে শিক্ষাজীবন ব্যাহত হওয়া শিক্ষার্থীদের শিক্ষা নিশ্চিত করতে সেকেন্ড চান্স এডুকেশনের ব্যবস্থা থাকতে হবে।

বিদ্যালয় খুলে দেওয়ার পর শিক্ষার্থীদের অনলাইন ও অফলাইন দুভাবেই সমান গুরুত্ব দিয়ে পাঠ কার্যক্রম চালাতে হবে। ব্লান্ডেড ও ফ্লিপড লার্নিংয়ের পরিকল্পনা আগেই প্রস্তুত এবং শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইন ও অফলাইনের মিশ্র ব্যবস্থা কেমন হবে তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। বিগত যে কোনও সময়ের চেয়ে শিক্ষক ও সংশ্লিষ্টদের দ্বিগুণ পরিশ্রম করার পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতনভাবে সহযোগিতা করতে হবে শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রমে।

জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেন, অনলাইন ক্লাস, সংসদ টেলিভিশনে ক্লাস অব্যাহত থাকবে। অ্যাসাইনমেন্ট ব্যবস্থা চালু রাখা হবে। ফেব্রুয়ারিতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা গেলে সমস্যা কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। শিক্ষায় বাণিজ্যিকীকরণ অন্য সময়গুলোর চেয়ে বাড়ার সুযোগ নেই। অনলাইনে ভিডিও ক্লাস থাকায় কোচিং করার প্রয়োজন হবে না।

শিক্ষার্থীরা ভিডিও ক্লাস বারবার দেখে সেখান থেকে তাদের সমস্যার সমাধান করতে হবে। তবে শিক্ষক ও অভিভাবকদের এসব বিষয়ে খুবই যত্নশীল থাকতে হবে। আমরা যেকোনো সময়ের চেয়ে মনিটরিংয়ে গুরুত্ব দিচ্ছি ২০২১ সালের শিক্ষা কার্যক্রমে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে সরকার সচেষ্ট থাকবে।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বলেন, আমরা ২০২০ সাল থেকে করোনার প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিয়েছি। ফেব্রুয়ারির মধ্যে বিদ্যালয় খোলা সম্ভব হলে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে না।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!