ঢাকা: ২০২১ সালে এসএসসি-এইচএসসির আদলে একইভাবে প্রাথমিক পর্যায়েও সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেক্ষেত্রে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
ইতিমধ্যে স্কুল খুললে ডিসেম্বর পর্যন্ত কতটুকু সিলেবাস পড়ানো যাবে তার ওপর সংক্ষিপ্ত সিলেবাস করতে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর এবং জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমিকে (নেপ) নির্দেশ দিয়েছিল মন্ত্রণালয়। নেপ সে আলোকে একটি গাইড লাইন তৈরি করে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডকে (এনসিটিবি) পাঠিয়েছে। আর এনসিটিবি সে গাইড লাইন অনুযায়ী কাজ শুরু করেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, প্রাথমিক স্তরের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে। কয়েকটি ধাপে করা হবে এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস। যখন স্কুল খোলা হবে ওই সময় থেকে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস পড়ানো শুরু হবে। এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস শুধু চতুর্থ-পঞ্চম শ্রেণির জন্য করা হচ্ছে। বাকি শ্রেণিতে শিক্ষকরা যতটুকু পড়াতে পারবেন, ঠিক ততটুকুর ওপর মূল্যায়ন করবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখন খোলা হবে তা এখনও নিশ্চিত নয়। যখনই খোলা হবে ওই সময় থেকে পরবর্তী সময়ে যতটুকু সিলেবাস পড়ানো যাবে তার একটি রূপরেখা বা গাইড লাইন তৈরি করেছে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)। গাইড লাইনটি এনসিটিবিকে পাঠিয়েছে সংস্থাটি। সে অনুযায়ী মাসওয়ারী একটি সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করছে এনসিটিবি।
এ ব্যাপারের নেপের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) মো. শাহ আলম বলেন, বছরের যে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা হবে তখন থেকেই কিভাবে ক্লাস রুমে পাঠদান করানো হবে তার একটি রূপরেখা এনসিটিবিকে পাঠিয়েছি। রূপরেখাটি দেখে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করতে এনসিটিবিকে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, গত বছরও এ রকম একটি রূপরেখা আমরা করেছিলাম। যা করোনার কারণে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এবারও সে রকম সিলেবাস হবে।
এর আগে গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে এ ধরনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে নেপ। ওই সিলেবাসে সেপ্টেম্বর, অক্টোবর, নভেম্বর মাস ধরে সিলেবাস প্রকাশ করা হয়। যদিও গেল বছর স্কুল খোলা সম্ভব হয়নি। ফলে সব শ্রেণিতে অটো প্রমোশন দেওয়া হয়েছে।
ওই সময় ১ নভেম্বর থেকে ৩৯ দিনের জন্য সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি (নেপ)। সংক্ষিপ্ত এ পাঠ পরিকল্পনা চলার কথা ছিল ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। কিন্তু করোনার কারণে ১ নভেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খোলায় নেপ আবার নভেম্বর ডিসেম্বর মাসের জন্য ৩০ দিনের সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করে। যদি ১৫ নভেম্বর থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা সম্ভব হয় তাহলে এ সিলেবাস বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বলে ওই সময় বলা হয়েছিল। অন্যথায় প্রাথমিকের প্রত্যেক শ্রেণির সব শিক্ষার্থীদের পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নিজস্ব মূল্যায়নে পঞ্চম শ্রেণির সনদ দেবে। পরবর্তীতে সরকার যে পথে হাটে।
ডিসেম্বর পর্যন্ত কতটুকু পড়ানো যাবে, তার ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়েছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস
চলতি বছর একই পদ্ধতিতে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরির কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সদস্য (কারিক্যুলাম) প্রফেসর মো. মশিউজ্জামান। তিনি বলেন, এ নিয়ে আমাদের একটি কমিটি কাজ করছে। ন্যাপের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিভিন্ন ধাপে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা হবে। যখন স্কুল খুলবে, শিক্ষকরা ওই জায়গা থেকে পড়ানো করতে পারবেন। তিনি বলেন, ক্লাস যতটুকু পড়ানো হবে ততটুকু ওপর পরীক্ষা নেওয়া হবে।
সম্প্রতি একটি সেমিনারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বলেন, স্কুল খোলার পর কতগুলো ক্লাস নেওয়ার সুযোগ থাকবে, তার ওপর ভিত্তি করে সংশোধিত সিলেবাস তৈরি করা হবে। শিক্ষার্থী পরের শ্রেণিতে ওঠার জন্য যোগ্য হল কি-না, তা যাচাই করতে পরের ক্লাসের জন্য সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলো চিহ্নিত করে এ সংক্ষিপ্ত সিলেবাস তৈরি করতে বলা হয়েছে।
‘যেসব চ্যাপ্টারে বেশি গুরুত্বপূর্ণ লিংকেজ রয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করে সিলেবাস তৈরির নির্দেশনা আমরা দিয়েছি। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিভিত্তিক মৌলিক সক্ষমতা অর্জনের বিষয় চিহ্নিত করে নতুন করে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে শিক্ষাবর্ষ শেষ করতে জোর দিচ্ছি।’- যোগ করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী।
প্রাথমিক সমাপনীসহ কিভাবে ক্লাসভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়া যায়, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমি তা নিয়ে কাজ করছে জানিয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বন্ধের কোনো পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। বরং এ পরীক্ষা আরও যুগোপযোগী করতে একটি বোর্ড গঠনের চিন্তাভাবনা চলছে।
গত ১৭ মার্চ থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (কওমি ছাড়া) ছুটি চলছে। কয়েক ধাপে বাড়ানোর পর শেষ ঘোষণা অনুযায়ী এ ছুটির মেয়াদ আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রয়েছে।
সোনালীনিউজ/এমএইচ
আপনার মতামত লিখুন :