• ঢাকা
  • শনিবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১৩ পৌষ ১৪৩১
মোবাইল আসক্তি

বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা


নিজস্ব প্রতিবেদক অক্টোবর ৭, ২০২১, ০৪:২১ পিএম
বাড়ছে শিক্ষার্থীদের মানসিক সমস্যা

ঢাকা : গত এক বছরে দেশের স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেড়েছে মোবাইল ফোন ও গেজেট আসক্তি। এর ফলে উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে মাথাব্যথা, হাত-পা ব্যথা, ঘুম ও দৃষ্টিশক্তির সমস্যা। এ কারণে শতকরা ৫২ ভাগ শিক্ষার্থীই মানসিকভাবে বিষণ্ন এবং তাদের অল্প সময়ে রেগে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

দেশের ২১টি জেলায় এক হাজার ৮০৩ জন ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পড়ুয়া বাংলা মাধ্যম, ইংরেজি মাধ্যম, মাদরাসা ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের নিয়ে পরিচালিত এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকাশনা সংস্থা উইলির হেলথ সায়েন্স রিপোর্ট জার্নালে প্রকাশিত হয় এই গবেষণার ফলাফল। গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

গবেষণার তথ্য বলছে, ৬৮ ভাগ শিক্ষার্থী দিনে ২-৪ ঘণ্টা মোবাইল ফোনে সময় কাটাচ্ছে। ৯ ভাগ শিক্ষার্থী কম্পিউটার স্ক্রিনে ও ৮ ভাগ ট্যাবে দিনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করে। ২০১৮-২০১৯ সালে যেখানে ছাত্র-ছাত্রীদের শারীরিক সমস্যাগুলোর মধ্যে ডায়রিয়া, চুলকানির সমস্যা, পেট ব্যথা, জ্বর ও সর্দি সবচেয়ে প্রকট ছিল, সেই জায়গায় গত দেড় বছরে ২০২০-২০২১ সালে মাথাব্যথা, দৃষ্টিশক্তির জটিলতা, ঘুমের সমস্যা, বিষণ্নতা ও খিটখিটে মেজাজ এবং জ্বর সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হয়। এর পেছনে ঘরবন্দি হয়ে থাকা ও গেজেটের প্রতি অতিরিক্ত আসক্তির সম্পর্ক পেয়েছেন গবেষকরা।

গবেষকরা জানান, দেশের ৭০ ভাগ শিক্ষার্থীই শারীরিক কোনও কাজ বা খেলাধুলার অবকাশ পায়নি ২০২০ সালে এবং তাদের ৫০ ভাগ ঘরের বাইরে কোনো শারীরিক কর্মকাণ্ডের সুযোগ একেবারেই পায়নি। মাত্র ২৫ ভাগ শিক্ষার্থী গেজেট ব্যবহার করেছে নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের জন্য এবং ৪০ ভাগ শিক্ষার্থী কার্টুন, নাটক ও চলচ্চিত্র দেখার কাজে, ২৭ ভাগ শিক্ষার্থী সমাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের জন্য এবং ১৭ ভাগ গেম খেলার জন্য গেজেট ব্যবহার করেছে। গবেষণার তথ্য বলছে, সবচেয়ে বেশি মোবাইল ফোন ও গেজেটের ব্যবহার দেখা গেছে ইংরেজি মাধ্যমের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে এবং সবচেয়ে কম দেখা গেছে মাদরাসা ও ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে।

গবেষণায় মুখ্য তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের শিক্ষক ড. এস এম মাহবুবুর রশিদ ও ইনস্টিটিউট অব স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিসার্চের শিক্ষক নাসরিন লিপি, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডায়বেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগের প্রধান ডা. ফারহানা আকতার, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পাল এবং জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি বিভাগের ড. আদনান মান্নান। সহযোগী গবেষক হিসেবে ছিলেন জান্নাতুল মাওয়া, এমা বনিক, ইয়াসমিন আকতার, আমিনা জাহান, নাভিদ মাহবুব, মফিজুর রহমান শাহেদ ও জোবায়ের ইবনে দ্বীন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেন, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়, ইউএসটিসি ও সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই গবেষণাকর্ম পরিচালনা করেন। গবেষণা পরিচালনা সহায়তায় ছিল চিটাগং ইউনিভার্সিটি রিসার্চ অ্যান্ড হায়ার স্টাডিস সোসাইটি, দৃষ্টি চট্টগ্রাম এবং ডিজিজ বায়োলজি অ্যান্ড মলিকুলার এপিডেমিওলজি রিসার্চ গ্রুপ চট্টগ্রাম।

গবেষণা প্রসঙ্গে ড. মাহবুবুর রশিদ বলেন, ‘অতি অল্প বয়সে গেজেট নির্ভরশীলতা শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এসব সমস্যা যদি দীর্ঘ মেয়াদি হয়, তবে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের একটি বড় অংশের জন্যই তা আশঙ্কার বিষয়।’

গবেষক দলের অন্যতম ড. অলোক পাল বলেন, ‘এই সমস্যাগুলো দির্ঘায়িত হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। শিশুদের গেজেট আসক্তি কমানোর জন্য পারিবারিকভাবে বিভিন্ন উদ্যোগের প্রয়োজন।’

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!