• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
প্রধান শিক্ষকরা থাকছেন না

৮ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি দশম গ্রেড


নিজস্ব প্রতিবেদক মার্চ ১৫, ২০২৩, ১২:১৩ পিএম
৮ বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি দশম গ্রেড

ঢাকা : প্রাথমিকের শিক্ষকতায় মেধাবীদের নিয়োগের উদ্দেশ্যে বিসিএসের দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগ করা হচ্ছিল। কিন্তু তারা বেশি দিন এ পেশায় থাকছেন না। অন্য চাকরিতে চলে যাচ্ছেন। এমনকি দ্বিতীয় শ্রেণির যেকোনো চাকরিতে যেতে তারা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। পদোন্নতির সুযোগ না থাকাই এর মূল কারণ।

প্রার্থীরা বলছেন, দ্বিতীয় শ্রেণির পদের কথা বলে নিয়োগ দেওয়া হলেও তারা দশম গ্রেড পাচ্ছেন না।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। কিন্তু এ ব্যাপারে মামলা চলছে। মামলা নিষ্পত্তি হলেই আমরা তাদের দশম গ্রেড দেব। আমরাও চাই, তারা পদোন্নতি পান। এ ব্যাপারে নতুন বিধিমালা হচ্ছে। বিধি হলে পদোন্নতির ব্যাপারে সঠিক বলা সম্ভব হবে।’

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের জন্য দুই ধরনের গ্রেড চালু আছে। যাদের প্রশিক্ষণ নেই তাদের এক ধরনের আর যাদের প্রশিক্ষণ আছে তাদের আরেক ধরনের। যারা নতুন যোগ দেন তাদের প্রশিক্ষণ থাকার সুযোগ নেই, ফলে তারা চাকরি শুরু করেন ১২তম গ্রেডে ১১ হাজার ৩০০ টাকার বেতন স্কেলে। তারা সর্বসাকল্যে বেতন পান প্রায় ২২ হাজার টাকা। প্রশিক্ষণ গ্রহণের পর তারা উন্নীত হন ১১তম গ্রেডে। তখন তাদের বেতন হয় ১২ হাজার ৫০০ টাকার স্কেলে প্রায় ২৪ হাজার টাকা। যারা চাকরি শুরুর কিছুদিন পর প্রশিক্ষণ নেন, তারা ১১তম গ্রেডে বেতন-নির্দিষ্ট হলেও অনেক সময় ১২তম গ্রেডের চেয়ে এক হাজার টাকা কম পান। ফলে অনেকেই প্রশিক্ষণ নিয়েও ১২তম গ্রেডেই রয়ে যান।

সূত্র জানায়, ২০১৭ সালে ৩৪তম বিসিএস থেকে দ্বিতীয় শ্রেণির নন-ক্যাডার পদে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮৯৮ জন প্রধান শিক্ষক যোগদান করেন। ৩৬তম বিসিএস থেকে ২০১৯ সালে আরও ৩০৩ জন প্রধান শিক্ষক যোগদান করেন। দুই বিসিএস মিলিয়ে ১ হাজার ২০১ জন যোগদান করলেও ইতিমধ্যে দুইশোর বেশি শিক্ষক চাকরি ছেড়ে চলে গেছেন। আরও অনেকে মোটামুটি সম্মানজনক কোনো চাকরি পেলে চলে যাবেন স্থির করেছেন।

সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকরা বলেছেন, ‘তিন কারণে বিসিএস থেকে আসা প্রধান শিক্ষকরা থাকতে চাইছেন না। প্রথমত পদোন্নতি না থাকা, দ্বিতীয়ত দ্বিতীয় শ্রেণির পদ হওয়া সত্ত্বেও দশম গ্রেড না পাওয়া, তৃতীয়ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে কাক্সিক্ষত পরিবেশ না পাওয়া।’

৩৪তম বিসিএস থেকে ২০১৭ সালে নন-ক্যাডার দ্বিতীয় শ্রেণির পদে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আলাতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন মো. সেলিম উদ্দিন। ২০১৯ সালে তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় ছেড়ে একটি ব্যাংকে যোগ দেন।

তিনি বলেন, ‘শুরুতেই ধাক্কা খেলাম। দশম গ্রেডের পরিবর্তে আমাদের দেওয়া হলো ১২তম গ্রেড। আমরা উচ্চ আদালতে রিট করলে দশম গ্রেড দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সে নির্দেশ কার্যকর করা হয়নি।

এ ছাড়া প্রধান শিক্ষক পদ থেকে আর পদোন্নতির সুযোগও নেই। চাকরির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একই পদ। আমার পদায়ন হয়েছিল বাড়ি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে। দুজন মাত্র শিক্ষক। পরিবেশও অনুকূল ছিল না।’

প্রধান শিক্ষকরা জানান, ২০১৪ সালের ৯ মার্চ সরকার প্রধান শিক্ষকদের পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করলেও তা এখনো কার্যকর হয়নি।

প্রধান শিক্ষকদের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ২০২২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি আদালত তা কার্যকর করার নির্দেশ দিয়েছিল। তাতেও কার্যকর না হওয়ায় আদালত অবমাননার মামলা করেন শিক্ষকরা। এ ব্যাপারে রিভিউ আবেদন করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। মামলাটি চলছে। সরকারের আচরণে সামন্ত-সংস্কৃতির ছাপ পুরোমাত্রায় বহাল।

প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের গেজেটেড অফিসার ও নন-গেজেটেড কর্মচারীদের নিয়োগ বিধিমালা-২০২১-এর কাজ চলমান রয়েছে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের কাজ শেষ করে আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ে ভেটিংয়ের জন্য পাঠিয়েছে। সেই খসড়া বিধিমালায় প্রধান শিক্ষকদের জন্য সরাসরি পদোন্নতির বিধান রাখা হয়নি।

পরবর্তী পদ সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিইও) সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করতে বলা হয়েছে। তবে বিভাগীয় প্রার্থীদের ক্ষেত্রে বয়স ৫০ বছর পর্যন্ত শিথিল করা হয়েছে এবং তাদের জন্য ৮০ শতাংশ পদ সংরক্ষণ করা হবে উল্লেখ রয়েছে।

প্রধান শিক্ষক পদে তিন বছর ও সহকারী শিক্ষক পদে ১০ বছর চাকরির অভিজ্ঞতা থাকলে তারা বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে আবেদন করতে পারবেন। বিভাগীয় প্রার্থীদের মধ্যে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া না গেলে উন্মুক্ত প্রার্থীদের মধ্য থেকে তা পূরণের কথা বলা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক প্রধান শিক্ষক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক-১ ও মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ ছায়িদ উল্লা বলেন, ‘মর্যাদায় আমরা নিম্ন স্থানে রয়েছি। আট বছরেরও বেশি সময় আগে আমাদের দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদা দেওয়া হলেও তা আজও কার্যকর হয়নি। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত আমাদের পদোন্নতির সুযোগ ছিল। এরপর থেকে বন্ধ রয়েছে। নতুন যে বিধিমালা তৈরি হচ্ছে তাতেও আমাদের পদোন্নতির সুযোগ নেই। বিভাগীয় প্রার্থী হিসেবে সুযোগের যে কথা বলা হচ্ছে, তা অনেকটা ‘মুলা’ ঝুলানোর মতো। এই যদি অবস্থা, তাহলে বিসিএসের মাধ্যমে এসে মেধাবীরা কেন এ পদে থাকবে!’ সূত্র : দেশ রূপান্তর

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!