• ঢাকা
  • সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১

এমপিও নিয়ে সুখবর


নিজস্ব প্রতিবেদক জুলাই ১০, ২০২৩, ১২:১৯ পিএম
এমপিও নিয়ে সুখবর

ঢাকা : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সে লক্ষ্যে বিদ্যমান বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জনবলকাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১ সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
 
বেসরকারি স্কুল ও কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার জন্য বিগত দিনে আলাদাভাবে জারি করা এমপিও নীতিমালার বেশকিছু ধারায় সামঞ্জস্য আনা হচ্ছে। সব স্তরে শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা সমন্বয়, অতিরিক্ত শাখা ও শিফট খোলা আরও বেশি কঠোর করা হচ্ছে। আগস্ট মাসের মাঝামাঝি এ নীতিমালা চূড়ান্ত করে এমপিওভুক্তির নতুন আবেদন নেওয়া শুরু হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন তথ্য জানা গেছে।
 
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (মাধ্যমিক- ২) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ গত রোববার (৩ জুলাই) নিজ দপ্তরে বলেন, এমপিও স্পষ্টকরণে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কিছু প্রস্তাবনা তৈরি করেছে। প্রস্তাবনার ওপর বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। সর্বশেষ গত ২৫ জুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে একটি বৈঠক হয়েছে। সেখানে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। খুব শিগগিরই এ নীতিমালার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের নিয়ে একটি ওয়ার্কশপ (কর্মশালা) করার পর তা চূড়ান্ত করা হবে।

নীতিমালা সংশোধনীর সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমান নীতিমালায় সাধারণ পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা যোগ্যতা নির্ধারণ করায় শিক্ষকরা নানা হয়রানির শিকার হন। এমনকি বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতার শিকার হন। এবার স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি— এ তিন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করে একই যোগ্যতা নির্ধারণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

একই সঙ্গে কলেজের অধ্যক্ষ পদের বেতন বৈষম্য দূর করে আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের সমান অর্থাৎ পঞ্চম গ্রেড নির্ধারণ করা হচ্ছে। অতিরিক্ত শাখা ও শিফট খুলতে আগের চেয়ে নতুন নীতিমালা আরও কঠোর করা হচ্ছে। নীতিমালা চূড়ান্ত করা হলেই নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন নেওয়া হবে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।
 
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক শাখা সূত্রে জানা গেছে, নতুন এ নীতিমালা চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমপিওভুক্তির আবেদন গ্রহণ করা হবে না। আগস্ট মাসের মধ্যে এ নীতিমালা চূড়ান্ত করে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে চায় মন্ত্রণালয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিও দেওয়ার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে।

গত ২৫ জুন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে এমপিও নীতিমালা সংশোধন করার সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার বিভিন্ন বিধি স্পষ্টকরণ, ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালার মধ্যে সমন্বয় এবং ২০২১ সালের বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা সংশোধন নিয়ে আলোচনা হয়।
 
অতিরিক্ত শাখা খোলায় কঠোরতা : ২০২১ সালের এমপিও নীতিমালায় ৪০ জনের বেশি হলে মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে অতিরিক্ত শাখা খোলা যেত। প্রস্তাবিত নীতিমালায় মূল শ্রেণি শাখা ছাড়া অতিরিক্ত দুটির বেশি শ্রেণি শাখা খোলা যাবে না। বর্তমান নীতিমালায় ১৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী হলে শিফট খোলা যেত। নতুন নীতিমালায় প্রশাসনিক অবকাঠামো, ভৌত অবকাঠামো, সর্বোচ্চ শ্রেণি শাখার শর্ত পূরণ করলে শুধুমাত্র মাধ্যমিক স্তরে শিফট খোলার অনুমতি দেওয়া হবে। এক্ষেত্রে এক হাজার শিক্ষার্থী থাকতে হবে।

শিক্ষক সমন্বয় : স্নাতক (পাস) স্তরে তথা ডিগ্রি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত কিন্তু স্নাতক স্তর এমপিওভুক্ত না হলে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো প্রভাষকের পদ শূন্য হলে ওই পদে স্নাতক স্তরের শিক্ষককে সমন্বয়ের মাধ্যমে এমপিওভুক্ত করা হবে। একইভাবে মাধ্যমিক স্তরে নিয়োগপ্রাপ্ত শিক্ষক নিম্ন মাধ্যমিক স্তরে পদ শূন্য হলে সমন্বয় করা যাবে। পরবর্তীতে মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত হলে ওই শূন্য পদে নিয়োগ দেওয়া যাবে না।

শিক্ষকদের পদ সমন্বয় করা গেলেও কর্মচারীদের পদ সমন্বয় করা যাবে না। এমপিওভুক্ত শিক্ষকরা প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন বা উচ্চতর পদে যোগদান করলে যোগদানের তারিখ থেকে পূর্ববর্তী পদের বেতন-ভাতা উত্তোলন করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে পূর্ববর্তী পদ থেকে এমপিও উত্তোলন করা যাবে না। অন্য পদে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এমপিও থেকে নাম বাদ দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ অনলাইনে আবেদন করবেন।
 
প্রধান শিক্ষক হওয়ার অভিজ্ঞতায় শিথিলতা আসছে : বর্তমান নীতিমালায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মাধ্যমিক থেকে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরে উন্নীত হলে অধ্যক্ষ পদে আবেদন করার সুযোগ নেই। ধারাটি পরিবর্তন করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষক পদে দুই বছরের অভিজ্ঞতাসহ এমপিওভুক্ত পদে ১৩ বছরের শিক্ষকতার অভিজ্ঞতা থাকলে আবেদন করতে পারবেন।

নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকলে আবেদন করতে পারবেন।
 
এছাড়া কোনো মাধ্যমিক বিদ্যালয় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হলে প্রধান শিক্ষক অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করবেন। এক্ষেত্রে অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তবে, উচ্চ মাধ্যমিক স্তর এমপিওভুক্ত হলে এবং প্রধান শিক্ষক পদ শূন্য হলে নতুন করে অধ্যক্ষ নিয়োগ করা যাবে। এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে সহকারী প্রধান শিক্ষক প্রশাসনিক পদ হলেও ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। সহকারী অধ্যাপক ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষককে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব দিতে হবে।

স্কুল ও কলেজ, কারিগরি ও মাদ্রাসার জন্য বিগত দিনে জারি করা এমপিও নীতিমালায় সাধারণ পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়। এ নিয়ে শিক্ষকরা নানা হয়রানির শিক্ষার হন। এমনকি এনটিআরসিএ শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রেও জটিলতার শিকার হয়। এবার তিন ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাধারণ পদে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে বৈষম্য দূর করার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ের সহকারী শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে। একইভাবে কৃষি, সামাজিক বিজ্ঞান, গণিত, ভৌত বিজ্ঞান, জীব বিজ্ঞান, পদার্থ বিজ্ঞান, রসায়ন, ব্যবসায় শিক্ষা, শরীরচর্চা শিক্ষক; কম্পিউটার ল্যাব অপারেটর পদে নিয়োগের জন্য স্কুল, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানের জন্য একই শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১ অনুযায়ী কলেজের অধ্যক্ষের বেতন গ্রেড- ৬ (বেতন স্কেল ৩৫৫০০-৬৭০১০ টাকা)। অন্যদিকে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের (মাদ্রাসা) জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা- ২০২১ অনুযায়ী আলিয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষের বেতন গ্রেড- ৫ (বেতন স্কেল ৪৩০০০-৬৯৮৫০ টাকা)। সংশোধিত নীতিমালায় এ বৈষম্য দূর হচ্ছে।

সোনালীনিউজ/এমটিআই

Wordbridge School
Link copied!