ঢাকা : আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন আ.লীগের সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের অনুসারী হওয়ায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বিভাগ থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ইতিহাস বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আজিজুল হাকিম আকাশকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসের ভেতরে নিয়ে বেধড়ক পিটিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসগুলো এখন ছাত্রলীগের টর্চার সেলে পরিণত হয়েছে বলে মনে করছেন ছাত্রদলের নানা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) দুপুর নাগাদ বিভাগ থেকে ছাত্রলীগের কয়েকজন কর্মী ডেকে নিয়ে পোগোজ স্কুলে একদফা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেটের সামনে বাসের ভিতরে নিয়ে মারধর করে মানিব্যাগ ও ফোনের নগদ একাউন্ট থেকে জোর করে পিন নম্বর নিয়ে টাকা উঠিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছেন ভূক্তভোগী।
এনিয়ে আহত ছাত্রদল কর্মী আজিজুল হাকিম বলেন, ক্লাস শেষ করে বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। কয়েকজন এসে আমার নাম শুনে পোগোজ স্কুলের ভিতরে নিয়ে যায়। ছাত্রদল করি নাকি জিজ্ঞেস করে, আমি বিষয়টি স্বীকার করলে কিল ঘুষি ও লাথি মার শুরু করে। আত্মরক্ষার জন্য চলে আসার চেষ্টা করলে দ্বিতীয় গেটের সামনে বাসের ভিতরে নিয়ে এলোপাথাড়ি পিটানো শুরু করে। মারার একপর্যায়ে অবস্থা বেগতিক দেখে তারাই আমাকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়।
তিনি আরো বলেন, ভিন্ন মতাদর্শের অনুসারী থাকতেই পারে। তাই বলে এধরনের ঘটনা মেনে নেওয়ার মতো না। প্রশাসন থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। এখানে মার্কেটিং বিভাগ ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আরাফাত ও গণিত বিভাগের হাছান সহ পাঁচ ছয় জন আমাকে মারধর করে।
এর আগে জবি শাখা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহিদ হাসান ও আবু হেনা মোরসালিন নামের কর্মীকে বাসের ভেতরে নিয়ে গিয়ে শাখা ছাত্রলীগের কর্মীরা পিটিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগী মাহিদ হাসান বলেন, আমি ক্যাম্পাসে গেলে কোনো কারণ ছাড়াই ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী আমাকে সেকেন্ড গেইটের কাছে বাসের ভেতরে নিয়ে গিয়ে আক্রমণ শুরু করে। প্রায় একঘন্টা যাবৎ আমাকে মারধর করা হয়৷ আমি ছাত্রদল করি এটাই আমার মূল কারণ, আমাকে মারবার অন্য কোনো কারণ নেই। আমাদের জন্য ব্যবহৃত বাসগুলো যেন ছাত্রলীগের টর্চারসেলে পরিণত হয়েছে৷
অভিযুক্তরা সকলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এস এম আকতার হুসাইনের কর্মী বলে জানা যায়। এনিয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঘটনাটি সম্পর্কে তোমার থেকেই প্রথম শুনলাম। আমি এনিয়ে বিস্তারিত খোঁজ নেওয়ার চেষ্টা করছি।
বারবার হামলার শিকার হওয়া ছাত্রদলের কর্মীদের নিয়ে শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সুজন মোল্লা জানান, শুধুমাত্র জগন্নাথে নয় সারা বাংলাদেশে হামলার শিকার হচ্ছে। পরীক্ষার হল থেকে, ক্লাস থেকে ধরে নিয়ে আদিম যুগের কায়দায় এ ধরনের হামলা একমাত্র ছাত্রলীগের পক্ষেই সম্ভব।
তিনি আরো বলেন, আমরা কোন কর্মসূচি না করেই হামলার শিকার হচ্ছি। জানি না ক্যাম্পাসে আসলে তারা কি করতো।
এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মোস্তফা কামাল বলেন, শিক্ষার্থীকে মারধর করার বিষয়টি জানার সঙ্গে সঙ্গেই আমি একজন সহকারী প্রক্টরকে পাঠাই বিষয়টি দেখার জন্য। তবে এখনো কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। এছাড়া যদি কোন শিক্ষার্থী ক্লাস, পরীক্ষা দিতে এসে নিরাপত্তার প্রয়োজন মনে করে আমাকে আগে বলে রাখলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এমটিআই
আপনার মতামত লিখুন :